বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগামী জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণের পরের কিস্তি ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ। একই মাসে বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা, এআইআইবিসহ কয়েকটি সংস্থা থেকে আরও ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাবে দেশ। সব মিলিয়ে আগামী মাসে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাবে দেশ।
আজ বুধবার (১৪ মে) দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানান তিনি। দুবাই হতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন গভর্নর। সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের লক্ষ ব্যাংকের গর্ভানেন্স নিশ্চিত করা, ইতোমধ্যে ১৪টি বোর্ড পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেখানে গুনগত পরিবর্তন এসেছে। বিতরণ করা ঋণের ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি হলে লভ্যাংশ দিতে পারবে না ব্যাংক। পাশাপাশি নগদ জমা ও বিধিবদ্ধ জমায় ঘাটতির কারণে কোনো ব্যাংকের ওপর আরোপ করা দণ্ডসুদ বা জরিমানা অনাদায়ি থাকলেও লভ্যাংশ দিতে পারবে না ব্যাংকগুলো।
তিনি বলেন, ব্যাংক সংস্কার শুরু হয়েছে। আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে যারা উল্টাপাল্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা। ব্যাংককে ঘুরে দাড়াতেই হবে। শর্টফুল থাকলে আমটা সে ব্যাংক নিয়ে নিবো, মার্জার করবো বা যা করার করবো। বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীর সাথে আছে। রাষ্ট্র সাময়িক সময়ের জন্য নিয়ে নিবে এতে ব্যাংক ভালো থাকবে, ঘুরে দাড়াবে। আমরা ব্যাংক নয় আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় আসবো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলারের বিনিময় হার শিগগিরই বাজারভিত্তিক করা হবে। রপ্তানি, রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবাহের ফলে ডলারের দর বাড়বে না। তিনি জানান, এ পদক্ষেপের ফলে অর্থনীতিতে আরও স্বচ্ছতা আসবে এবং বাজারের চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে ডলারের দাম নির্ধারিত হবে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, গত ৯ মাসে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি। তারপরও বিনিময় হার গত কয়েক মাস স্থিতিশীল অবস্থায় আছে কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই। এমন পরিস্থিতিতে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকারদের বিষয়টি বলা হয়েছে।
বাজারভিত্তিক করায় হঠাৎ রেট অনেক বেশি বেড়ে যাবে না জানিয়ে গভর্নর বলেন, ডলার রেট অনেক দিন এক জায়গায় অর্থাৎ ১২২ টাকায় আছে। তার আশেপাশেই থাকবে। হঠাৎ করে ১৪০-১৫০ হবে এটার যুক্তি নেই। বাংলাদেশের ডলার রেট এদেশের নিয়ম অনুযায়ী ঠিক হবে, অন্যদেশের কথায় এখানে ডলার রেট ঠিক হবে না। বাজারে ডলারের যথেষ্ট সরবরাহ আছে।
কেউ কেউ বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে এমন শঙ্কা করে গভর্নর জানান, কিছু সিন্ডিকেট কোম্পানি আছে যারা বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সচেতন থাকবে এবং সার্বক্ষণিক তদারকি করা হবে। যদি কেউ অনৈতিক উপায়ে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর আশ্বস্ত করে বলেন, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) উচ্চ প্রবাহ থাকায় বাজারভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় ডলারের দর উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে না। এই পদক্ষেপের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর হবে এবং দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সঙ্গে চলমান আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। আগামী জুন মাসে আইএমএফের দুটি কিস্তিসহ দেশের অর্থনৈতিক সহায়তা তহবিল হিসেবে পাওয়া যাবে।
গভর্নর বলেন, ব্যাংকের সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রয়োজন হলে বারবার পর্ষদ পরিবর্তন করে দিবো। গ্রাহকের আমানত রক্ষা করাই হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ। বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক না। নতুন করে ব্যাংক কোম্পানী নতুন আইন করা হয়েছে। সেই আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। সেই ক্ষমতা আলোকে কাজ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। যে ব্যাংকে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে পারবে না। সেই ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙ্গে নতুন পর্ষদ দেয়া হবে। প্রয়োজন হলে আমানতকারীর স্বার্থে সেই ব্যাংক সরকার নিয়ে নিবে। এতে আমানতের কোনো প্রকার ক্ষতি হবে। আমানতকারী পুরো অর্থ সরকার দিবে।
র/আ