জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে হৃদয়বিদারক ও চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা সামনে এসেছে—বড় মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করায় ছোট মেয়েকে চার বছর ধরে ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখেছেন এক বাবা। এতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ওই তরুণী।
স্থানীয়দের সহায়তায় শনিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় তাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।ঘটনাটি আক্কেলপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মণ্ডলপাড়া মহল্লার। স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তি এনামুল হক পেশায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক কর্মচারী। অবসরের পর তিনি নিজ বাড়িতে ওষুধের দোকান চালান।
প্রায় ৮-১০ বছর আগে এনামুলের স্ত্রী মোছা. জাহানারা আত্মহত্যা করেন। এরপর পরিবারে একের পর এক বিপর্যয় নেমে আসে। তার বড় মেয়ে লিমা বাবার অমতে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। সেই ঘটনার পর থেকেই এনামুল সন্দেহে পাগলপ্রায় হয়ে যান।
২০২১ সালে ছোট মেয়ে লিজা এসএসসি পাস করলে, তিনি মেয়েকে ঘর থেকে বের হতে না দিয়ে পুরোপুরি তালাবদ্ধ করে রাখেন। বন্ধ করে দেন পড়াশোনাও। ঘরের দরজা-জানালা সবসময় বন্ধ থাকত। কোনো আত্মীয়-প্রতিবেশীকেও বাড়িতে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না।
স্থানীয়রা জানান, মাঝে মাঝেই মেয়েটিকে চেতনানাশক ইনজেকশন দেওয়া হতো, এমনকি মাথার চুলও কেটে ফেলা হয়। বাড়ির গেটও সবসময় তালাবদ্ধ থাকত। মেয়েটির আর্তনাদ শোনার পর অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
বিষয়টি জানার পর স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে, আক্কেলপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গণেশ চন্দ্রের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। মেয়েটিকে ঘর থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এসআই গণেশ চন্দ্র বলেন, “সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িটি বসবাসের উপযোগী নয়। সামাজিক পরিবেশের অভাব রয়েছে। মেয়েটিকে প্রায় পাগল করে তোলা হয়েছে। বাবাকে বলা হয়েছে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে এবং মেয়েকে একটি মানবিক পরিবেশে রাখতে।”
এদিকে অভিযুক্ত এনামুল হক দাবি করেছেন, তিনি মেয়েকে পর্দাশীল রাখতে বাড়িতে রাখতেন। কোনো নির্যাতন বা ইনজেকশন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি সকালে নাশতা করে কাজে যাই, বাড়িতে তালা দিয়ে যাই। সবই ভুল বোঝাবুঝি।”
প্রতিবেশীরা এই বক্তব্য মানতে নারাজ। তারা বলছেন, বড় মেয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তিনি ছোট মেয়েকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন, যার কারণে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে বসেছে।