ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, আমরা শহর বলতেই বুঝি কম গাছ বেশি দালান কোঠা, অপরদিকে গ্রাম বলতেই বুঝি বেশি গাছ কম বাড়িঘর। আমরা নিজেরাই এই ডাইভারসিফিকেশন তৈরি করেছি।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের সবুজায়ন ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। ফলে ঢাকায় বায়ু দূষণ ও তাপমাত্রা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে পরিকল্পিত ভাবে,গাছ রোপন বাড়াতে হবে। আমাদেরকে শহরগুলোকে পুনরায় বির্নিমান করতে হবে। তিনি পরিকল্পনা করে গাছ রোপণের মাধ্যমে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনার আহ্বান করেন। ঢাকায় বায়ু দূষণের মতো তাপমাত্রার তথ্য সংগ্রহের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি তার বক্তব্যে ঢাকায় বায়ু দূষণের মতো তাপমাত্রার তথ্য সংগ্রহের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
আজ সোমবার (০৫ মে) গুলশানে ডিএনসিসির নগর ভবন মিলনায়তনে ডিএনসিসি, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), কমিউনিটি টাউন ফেডারেশন (সিটিএফ) এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে “Baseline Study on the Role of Vegetation in Reducing Temperature and Air Pollution: A Study in Informal Settlement of Dhaka North City Corporation” শীর্ষক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তেব্য এসব কথা বলেন। আয়োজিত হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন উত্তর সিটির নিজস্ব প্রতিনিধিগণ, ক্যাপসের গবেষকবৃন্দ, ওয়ার্ল্ড ভিশনের কর্মীগণ এবং সিটিএফ'র সদস্যগণ।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন এবং ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার এবং ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ইঞ্জি. মোঃ নাসির আহমেদ পাটোয়ারী মতামত প্রকাশ করেন। এছাড়াও বিশেষ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিরেক্টর সুরেশ বার্টলেট।
ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, গাছ আমাদের পরম বন্ধু। এটি শুধু অক্সিজেন সরবরাহ করে না, বরং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং বায়ু থেকে ক্ষতিকর গ্যাস শোষণ করে আমাদের জন্য নির্মল বাতাস তৈরি করে। বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, কোন গাছ কোথায় রোপণ করা বেশি উপকারী, কীভাবে শহরাঞ্চলে সবুজায়ন বাড়ানো যায়, এবং কোন ধরণের গাছ দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর। গবেষণার মাধ্যমেই পরিবেশ সংরক্ষণের পথ উন্মুক্ত হয়—আর এ কাজে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
ধারণাপত্র উপস্থাপন এ স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ইঞ্জি. মোঃ নাসির আহমেদ পাটোয়ারী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বায়ুদূষণ ফলে ঢাকা শহরসহ পুরো দেশে নানা পরিবেশগত সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, যার মধ্যে তাপদাহ, বায়ু দূষণ ও মৌসুমি বৈচিত্র্য অন্যতম। এই সংকট মোকাবেলায় গাছপালার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ গাছ কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে, অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং পরিবেশকে শীতল রাখে।
এ প্রেক্ষাপটে ক্যাপস, ডিএনসিসি, ঢাকা নর্থ কমিউনিটি টাউন ফেডারেশন এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ একসঙ্গে একটি গবেষণা পরিচালনা করছে, যেখানে ১২ মাস ধরে ঢাকা উত্তরের ৫টি স্থানে ডিজিটাল যন্ত্র ও স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে গাছপালার প্রভাব মূল্যায়ন করা হবে। তরুণ ও বস্তি এলাকার মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে গবেষণার প্রভাব বাড়ানো হবে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরিবেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করবে এবং ন্যায্য নগর পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিরেক্টর মি: সুরেশ বাটলেট বলেন, আজকের আয়োজনে যোগদান করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। এই গবেষণাটি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আজকের অনুষ্ঠানে আমরা যে সুপারিশগুলো পেলাম তা বিবেচনায় নিয়ে এই গবেষণাটি আরও সমৃদ্ধ হবে। আপনারা জানেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ গত ৫৪ বছর ধরে শিশুদের উন্নয়নে কাজ করছে। আমরা দেশের ২৮টি জেলায় ৮১টি উপজেলায় প্রায় ৯০টি প্রোগ্রাম এবং প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। আমাদের মূল লক্ষ্য শিশু সুরক্ষায় কাজ করা, তাই আমি আশা করছি এই গবেষণা বায়ু দূষণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং আমরা শিশুদের একটি সুন্দর আগামী উপহার দিতে পারবো।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোঃ কামরুজ্জামান গবেষণার সফলতা কামনা করে বলেন, যে গাছগুলো কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সেটি মূলত দূষণের কারণে ধ্বংস হয়েছে নাকি কেটে ফেলা হয়েছে সেটা গবেষণার মাধ্যমে বের করতে হবে। বর্তমানে দূষণমুক্ত ঢাকা তৈরিতে কোন কোন গাছের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেটি সনাক্ত করে সিটি কর্পোরেশনকে জানানোর অনুরোধ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ঢাকা আমাদের সকল নাগরিকের। তবে কালের পরিক্রমায় আমাদের এই প্রিয় নগরীর প্রকৃতির দান অতীতের সেই বৃক্ষের সমাহার আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আমাদেরকে শহরে সেই সবুজ সুন্দর মনোরম পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে প্রকৃতি ও ঋতু বৈচিত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে ঢাকাতে সবুজায়ন করতে হবে। আমরা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে আশাবাদী তিনি অবশ্যই ঢাকাকে প্রকৃতির মতো করে সাজাতে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
আ. দৈ./ কাশেম