পরিকল্পিতভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃস্টি করা,সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা,ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর গেরিলা হামলার মাধ্যমে বহিবিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষন্ন করা এবং বিএনপি,জামায়াত ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা- সমাবেশে ধারাবাহিকভাবে আত্মঘাতি হামালা চালাতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গোপনে সামরিক প্রশিক্ষণের সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেয়েছে এদেশের গোয়েন্দা সংস্থার চৌকস কর্মকর্তারা। এই প্রশিক্ষণে আওয়ামী লীগ,যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রয়েছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য ইতোমধ্যে তারা ‘প্রিয় স্বদেশ’, ‘এফ ৭১ গেরিলা’, ‘বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম’, ‘প্রজন্ম ৭১’, ‘শেখ হাসিনা’সহ বিভিন্ন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে গত ৮ই জুলাই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠক সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পর্যন্ত চলছিল। ওই বৈঠকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরসহ ৩০০-৪০০ জন অংশ নিয়েছিলেন। আর ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবা হিনীর মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিক। ইতোমধ্যে মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিককে গ্রেপ্তার করার পর তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। একই সাথে সেনা আইন ও বিধি মোতাবেক বিচারিক কার্যক্রম চলবে বলে জানা যায়। এছাড়াও ওই বৈঠকে অংশ গ্রহণকারী ২২ জনকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে আনা হয়েছে।
আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মেজর সাদিকের বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠনের বিষয়টি জানানো হয়।
আইএসপিআর’ ও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, গত ১৭ জুলাই ওই সেনা কর্মকর্তাকে তার নিজ বাসস্থান রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঘটনাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের লক্ষ্যে এরই মধ্যে একটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। পূর্ণ তদন্ত সমাপ্তি সাপেক্ষে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ওই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও, তার কর্মস্থল থেকে অনুপস্থিত থাকা সংক্রান্ত ব্যত্যয় এর বিষয়ে অন্য আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং তদন্ত শেষে আদালতের সুপারিশক্রম সেনা আইন অনুযায়ী দায় নিরূপণ করত প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং পেশাদার প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কোনো সুযোগ নেই। রাজনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কোনো সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার সব সদস্যের মধ্যে পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা ও সাংবিধানিক দায়িত্ববোধ বজায় রাখার প্রতি সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ. যুবলীগ ও তাদের সমর্থিত সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে গত ৮ জুলাই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টাওে গোপন বৈঠকের ঘটনাটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পরে গত ১৩ জুলাই ডিএমপির ভাটারা থানায় মামলা করেন এসআই জ্যোর্তিময় মণ্ডল। এজাহারে এক নম্বর আসামি হলেন যুবলীগ নেতা সোহেল রানা। দুই নম্বর আসামি আওয়ামী লীগের নেত্রী শামীমা নাসরিন শম্পা। এর আগে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১২ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার একটি বাসা থেকে সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা পুলিশ। একইদিন একই এলাকা থেকে শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। দু’জনকে গ্রেপ্তারের পর ভাটারা থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
গোপন বৈঠকে গ্রেপ্তার ২২:
গোপন বৈঠকের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই কার্যক্রমে অংশ নেয়ার অভিযোগে হেফাজতে নেয়া হয়েছে একজন মেজর সাদিক। রাজধানীর ভাটারা থানায় দায়ের করা এই মামলায় পুলিশ আরও একজনকে শ্যোন এরেস্ট দেখিছে।
এামলায় উল্লেখ, গত ৮ই জুলাই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠক সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে। বৈঠকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরসহ ৩০০-৪০০ জন অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে সরকারবিরোধী পরিকল্পনা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ডিসি তালেবুর রহমান জানিয়েছেন ওই বৈঠকের ঘটনায় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। পুলিশের দাবি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারাদেশ থেকে লোকজন এনে ঢাকায় জড়ো করা হবে বলে বৈঠকে পরিকল্পনা হয়। এরপর তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করবে। অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে তারা শেখ হাসিনার দেশে ফেরত আসা নিশ্চিত করতে চায়।
গ্রেপ্তার সোহেল রানা ও শম্পাকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বৈঠকে অংশ নেয়া মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিককে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। মেজর সাদিক নামের একজন আওয়ামী লীগের লোকজনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এমন সংবাদের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার সেনা সদরের ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেজর সাদিকের বিষয়ে আমরা অবগত। তার বিষয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বলতে পারব।’
আ. দৈ./কাশেম