বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা শেখ পরিবারের অস্বাভাবিক প্রভাবশালী পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ তাদের স্বজনদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার,অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং দুর্নীতির অভিযোগের যেন শেষ নেই।
টানা ১৫ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনামলে শেখ পরিবারের প্রভাবশালী নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছত্রছায়ায় সারাদেশে পরিকল্পিতভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে নানা প্রকল্পের নামে। শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চিহ্নিত কয়টি দুর্নীতির প্রাপ্ত অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে গিয়ে পিলে চমকানোর মতো বড় বড় ঘটনা উদঘাটিত হচ্ছে। আরো বেশ কিছু বড় বড় দুর্নীতির খবর দুদকের জমা হচ্ছে বলে জানা যায়।
এদিকে আজ বুধবার (৯ এপ্রিল) দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন গতকাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, সাবেক প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহেনাসহ প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী সিন্ডিকেট রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৪ হাজার লোপাট করেছেন। এই চক্রটি শেখ মুজিবের জন্মশত বার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন এবং রাজধানীসহ সারাদেশে শেখ মুজিবের ১০ হাজারের বেশী ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণের নামে রাষ্ট্রের খোষাগার থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যায় দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। দুদকের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য ৭ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, উপপরিচালক মোঃ মনিরুল ইসলাম (কামরুজ্জামান)কে দলনেতা করে ৭ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। এইটিমের অপর সদস্যরা হলেন, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া,সহকারী পরিচালক মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা ,সহকারী পরিচালক এস. এম. রাশেদুল হাসান,সহকারী পরিচালক এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর,সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এবং উসহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন ।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের দক্ষ ও সাহসী ৭ কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত এই অনুসন্ধানকারী টিমের তদারকির দায়িত্ব পালন করবেন পরিচালক (বি. অনু. ও তদন্ত-২)। তিনি আরো বলেছেন, দুদকের এই টিমকে সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি এবং বিভিন্ন সময়ে জারিকৃত সার্কুলার মোতাবেক অভিযোগটির অনুসন্ধানকার্য সম্পন্ন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আরো উল্লেখ্য বিষয় হলো অনুসন্ধানকালে কোন ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধকরণ অথবা কোন সম্পদ/সম্পত্তি ক্রোক করার প্রয়োজন হলে, তা অনতিবিলম্বে দুদকের সংশ্লিষ্ট শাখাকে অবহিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুদকের এই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, ইতোমধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানা, তার মেয়ে টিউলিপসহ শেখ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনিদিষ্ট অভিযোগে বেশ কয়টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। আরো কিছু মামলা দায়েরর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের এবং আবেদনের প্রেক্ষিতে অনেক আগেই আদালত তাদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ ও স্থাবর সম্পদ অবরোদ্ধ করা আদেশ জারি করেছেন।
আরো উল্লেখ্য যে, আজ বুধবার দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের একটি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ওই হিসাবে ১৬ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে।ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ চেয়ে আবেদন করেন।
দুদকের পক্ষ থেকে করা আবেদনে বলা হয়, অনুসন্ধানকালে দেখা যায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজিব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়), মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, তার ছোট বোন রেহানা সিদ্দিক ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বর্ণিত অ্যাকাউন্টের অস্থাবর সম্পদসমূহ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে ওই অ্যাকাউন্টটি অবিলম্বে অবরুদ্ধ করা আবশ্যক। শুনানি শেষে বিচারক আবেদনটি মঞ্জুর করে ব্যাংক হিসাবটি ফ্রিজ করার আদেশ দেন।
সুত্র মতে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজউকের পূর্বাচল উন্নয়ন প্রকল্পে ১০ কাঠা করে ৬০ কাঠা জমি বরাদ্দ নেয়ার সুনিদিষ্ট অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানা, তার মেয়ে টিউলিপসহ শেখ পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। এছাড়াও তাদেও বিরুদ্ধে প্রাপ্ত আরো অনেক অভিযোগ অনুসন্ধা ও তদন্ত চলমান রয়েছে।
আ. দৈ./ কাশেম