রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫,
১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
বিশেষ সংবাদ
ইতোমধ্যে ২০ লাখ টাকার জাল নোটসহ গ্রেপ্তার-৩,
সাবধান. রাজধানীসহ সারাদেশে এক হাজার-পাঁচশত টাকার জালনোট মার্কেটে
আবুল কাশেম:
Publish: Saturday, 15 March, 2025, 6:44 PM  (ভিজিট : 99)

সাবধান! পবিত্র ঈদ ঊল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে চকচকে নতুন জাল নোট নিয়ে মাঠে নামছে একটি শক্তিশালী প্রতারক চক্র। তাদের সরবরাহ করা চকচকে নতুন এক হাজার ও পাঁচশত টাকার জাল নোটগুলো সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজে ধরা অনেক কঠিন। তবে পাশাপাশি আসল এক হাজার ও পাঁচশত টাকার নোট রাখলে অভিজ্ঞ লোকজন চেষ্টা করলে জাল টাকার নোট ধরতে পারবেন। 

সারাদেশে দীর্ঘদিন যাবৎ বেশকয়টি প্রতারক চক্রটি পরিকল্পিভাবে প্রতিবছর রোজা ও কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে প্রচুর পরিমানে এক হাজার ও পাঁচশত টাকার  জাল নোট মার্কেটে ছাড়ে। তবে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাল নোট ছেড়েছে এবং আরো বেশি পরিমান জাল নোট ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়ে  প্রতারক চক্রগুলো বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। 

তবে এবার আগে থেকেই পুলিশ প্রশাসনের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা শর্তক থাকায় ইতোমধ্যে গোপন খবরের ভিত্তিতে কামরাঙ্গীরচর ও বন্দর নগরী নারায়ণগঞ্জে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ২০ লাখ টাকার জাল নোট ও জাল নোট তৈরির সরঞ্জামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।  গ্রেপ্তার হওয়া এই ৩ প্রতারক হলো- সুমন, সুলতানা ও হানিফ গাজী। পুলিশ  কর্মকর্তারা তাদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকার জাল নোট, জালনোট নোট তৈরির জন্য ব্যবহৃত উন্নতমানের প্রিন্টার, স্ক্যানার, কাগজ ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করেছেন।

আজ শনিবার (১৫ মার্চ) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন। ডিসি মো. জসীম উদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, গত ১৩ মার্চ কামরাঙ্গীরচর ও নারায়ণগঞ্জে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে ২০ লাখ টাকার জাল নোট, আংশিক প্রিন্ট করা ৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকার জাল নোট ও জাল নোট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, আসন্ন  রমজানের ঈদকে সামনে রেখে এবার মার্কেটে বিপুল পরিমান জাল নোট ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল প্রতারক চক্রের। ইতোমধ্যে তারা অনেক জাল নোট মার্কেটে ছেড়েছে বলে পুলিশের কাছে গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে বলেন, একটি এ-৪ সাইজের কাগজে চারটি এক হাজার টাকার নোট তৈরি করতো প্রতারক চক্র ও জাল নোটের কারবারিরা। এরপর নিজেরাই মার্কেটে জাল টাকা সরবরাহ করতো। তারা অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জাল নোট তৈরি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে আসছে। তারা আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে বিপুল পরিমাণ জাল নোট তৈরি করে সেগুলো সরবরাহ করার জন্য তাদের হেফাজতে রেখেছিল।

ডিসি লালবাগ গণমাধ্যমকে বলেন, গত ১৩ মার্চ দুপুর সোয়া একটায় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, আগে থেকেই পরিচিত একজন জাল টাকার ব্যবসায়ী জাল নোটসহ পুরানঢাকায় মাদবর বাজার ঘাটের দিকে যাচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে মাদবর বাজারের বুড়িগঙ্গা গণপাঠাগার সমাজকল্যাণ সংস্থার সামনে বেড়িবাঁধে চেকপোস্ট পরিচালনা করে কামরাঙ্গীরচর থানার একটি টিম। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টাকালে সুমন, সুলতানা ও হানিফ গাজীকে আটক করা হয়। পরে তাদের তল্লাশি করে ১০০০ ও ৫০০ টাকা মূল্যমানের মোট চার লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়।

এর পরে গেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার কদমতলীর গ্যাস লাইন নামক এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার হওয় সুমনের ভাড়া বাসা থেকে ১০০০ ও ৫০০ টাকা মূল্যমানের ১৬ লাখ টাকার জাল নোট, এক পাশে প্রিন্ট করা ১০০০ টাকা মূল্যমানের ৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকার জাল নোট (আংশিক প্রিন্ট করা), একটি সিপিইউ, একটি মনিটর, একটি কালার প্রিন্টার, জাল নোট তৈরির ১০টি ডাইস, তিনটি আঠার কৌটা, জাল নোট তৈরিতে ব্যবহৃত দুটি ফয়েল পেপার রোল, কালার প্রিন্টারের পাঁচটি কালির কৌটা, একটি রাবার কাটার, কাগজ ছিদ্র করার দুটি ভাইস ও জাল নোট তৈরির কাজে ব্যবহৃত এক বস্তা সাদা কাগজ উদ্ধার করা হয়।

ডিসি জসীম উদ্দীন বলেন, গ্রেপ্তার এই ৩ জনের বিরুদ্ধে কামরাঙ্গীরচর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাল নোট কারবারিদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়ে থাকে। এই অপরাধ কিন্তু জামিন অযোগ্য। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, আটক প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই জাল নোট তৈরি ও বিক্রি করার অপরাধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আমরা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে জানার চেষ্টা করবো, এই চক্রের সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত।

সূত্র মতে, প্রতিবছর রমজান ও কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকা তৈরি ও বিক্রয়কারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে।  এবারও তারা আগে থেকেই বেশ সক্রিয় হয়েছে। রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত এই চক্র জাল টাকা বিক্রি করছে। এর আগে গত বছর  মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে ময়মনসিংহ মুক্তাগাছা-২ এপিবিএনের বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের স্বীকারোক্তিতে জাল টাকা তৈরি ও বিক্রির নতুন কৌশল বেরিয়ে এসেছে। চক্রটি এক লাখ টাকার জাল নোট ১৬ হাজার টাকায় কিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার হাজার টাকায় বিক্রি করছে। পুলিশ ছদ্মবেশে ক্রেতা সেজে আটক করেছে এ রকম একটি চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করছে। 

চক্রের পলাতক অন্য সদস্যদেরও খোঁজা হচ্ছে। সারাদেশে এই চক্রের সদস্যরা তৎপর বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ১৯ হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার করছে। এর মধ্যে এক হাজার নোট ১৮টি। প্রত্যেকটির নম্বর চস-২৭৩৫৪০৬ লেখা আছে। ৫০০ টাকার নোট ২টি। যার প্রত্যেকটিতে একই নম্বর জ-০৮৭৪৭৩৯ লেখা আছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত বলেছে, জাল টাকার নোট তৈরি চক্রের মুল হোতা রাকিব খান। তার বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া। তার দেয়া তথ্য মতে, রাতেই নেত্রকোনা সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি জানিয়েছেন, জাল টাকা দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা চক্র থেকে সে সংগ্রহ করে বিক্রি করছে। আসামিদের বিরুদ্ধে নকলা থানায় মামলা নম্বর ১৮। ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ দায়ের কার মামলাটি ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-ক ধারায় রেকর্ড করা হয়।

এই বিষয়ে আমর্ড পুলিশ বাটালিয়ন-২ অধিনায়ক গণমাধ্যমকে  জানান, এই চক্রে পলাতক থাকা আরও যারা জড়িত আছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। চক্রটি ঈদকে সামনে রেখে এখন জাল টাকা তৈরি ও বিক্রি করছে। ঈদের আগে এই চক্রের দৌরাত্ম্য আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাদের প্রায় ২০টির বেশি চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা রাজধানীতে এই চক্র বেশি তৎপর।  গত বছর বছর নতুন করে ঢাকার বাইরে জেলা পর্যায়ে জাল নোট বেচা কেনা শুরু করেছে।

গতবছর ২৬ মার্চ  এই চক্রটি এক লাখ টাকার জাল নোট কিনে ১৬ হাজার টাকায়। আর বিক্রি করে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। এপিবিএনের গোয়েন্দা টিম ক্রেতা সেজে এক লাখ টাকার জাল নোট ২৪ হাজার টাকায় কেনার জন্য দর করে কিনতে গেলে তারা বুঝতে পেরে পালানোর চেষ্টার সময় পুলিশ তাদের একজনকে আটক করেছে। তার কাছ থেকে তৈরির বিভিন্ন আলামত জব্দ করেছে। তারা নেত্রকোনায় কম্পিউটারের দোকানে জাল নোট তৈরি করছে। সেখান থেকে অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে। তারা মূলত ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নকল তৈরি করে। তবে এবারও ঈদের কেনা কাটায় শপিংমলগুলোতে এবং ফুটপাতের কেনা কাটায় ভীড়ের মধ্যে এক হাজার ও পাঁচশত টাকার জাল নোট আসল টাকার নোটের ভেতরে চালানো হতে পারে। এমনটাই আশঙ্খা করছেন পুলিশ প্রশাসন সহ  গোয়েন্দা সংস্তার কর্মকর্তারা।
আ. দৈ./ কাশেম
   বিষয়:  সাবধান.   রাজধানী   সারাদেশ   এক হাজার-পাঁচশত   টাকার জালনোট   মার্কেটে.  
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

নারী নির্যাতন বন্ধে আইনের সংশোধন প্রয়োজন: মামুনুল হক
৬২ জন পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন বিপিএম ও পিপিএম পদক
ভারত-পাকিস্তান সংকট নিরসনের চেষ্টা করছে সৌদি আরব
পাঁচ বছর আগে অপহরণ হওয়া স্কুলছাত্র নিজেই ফিরল বাসায়
রাজনীতির চেয়ারে ঘুণপোকা ধরেছে, এটি সংস্কার করা প্রয়োজন: ব্যারিস্টার ফুয়াদ
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

ডিএনসিসিতে বর্জ্যব্যবস্থাপানা বিভাগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অভিযান
কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ভিডিও প্রকাশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সভা
পদত্যাগ করলেন আটাবের সবুজ মুন্সী
ঢাকা দুই সিটিতে আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় বিএনপির ব্যাপক তদবির
বিশেষ সংবাদ- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝