নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য সক্ষম পরিবেশ তৈরিতে তরুণদের ভূমিকা অপরিসীম। তারাই আগামী দিনের নাগরিক এবং তাদের হাতে দেশের ভবিষ্যৎ। তাই তাদের সচেতন এবং শিক্ষিত করে তোলা অত্যন্ত জরুরি।
বর্তমানে আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার সিংহভাগই হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। আর এ তরুণ প্রজন্মই প্রতিটি দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের মূল হাতিয়ার। যে দেশের তরুণ প্রজন্ম যত দক্ষ, সে দেশ তত উন্নত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তরুণরা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তরুণদের হাত ধরে বিশ্বের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। বিশেষ করে, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তরুণ ব্যাপক ভূমিকা রাখছে এবং আগামীর সম্ভাবনা। দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে তরুণরাই যেন আশার প্রদীপ। তরুণদের সৃজনশীলতার চর্চার মাধ্যমে দক্ষ ও সুনাগরিকে পরিণত হচ্ছে।
তরুণরা নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য সক্ষম পরিবেশ তৈরিতে নিম্নলিখিত ভূমিকা পালন করতে পারে:
নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি: তরুণদের নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। তাদের জানাতে হবে যে তাদের কী কী অধিকার রয়েছে এবং সেই অধিকারগুলো কীভাবে রক্ষা করা যায়। এজন্য বিভিন্ন গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো যেতে পারে।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ: তরুণদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জানাতে হবে যে গণতন্ত্র কী এবং গণতান্ত্রিক সমাজে কীভাবে বসবাস করতে হয়। এজন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার সম্পর্কিত পাঠ্যক্রম চালু করা যেতে পারে।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি সমর্থন: তরুণদেরকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি সমর্থন করতে উৎসাহিত করা উচিত। তাদের জানাতে হবে যে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুসংগঠিত ও কার্যকর রাখার জন্য তাদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য কাজ করা: তরুণদেরকে গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা উচিত। তাদের জানাতে হবে যে গণতন্ত্র শুধুমাত্র সরকারের একটি ব্যবস্থা নয়, এটি একটি জীবনধারা। তাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নীতিকে দৈনন্দিন জীবনে প্রতিফলিত করার জন্য তাদের কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশের তরুণরা ইতিমধ্যেই নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য সক্ষম পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তারা বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তাদের অধিকারের দাবি জানাচ্ছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ইস্যুতে সোচ্চার হচ্ছে। এসব আন্দোলন ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা দেশের নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশে অবদান রাখছে।
বাংলাদেশে নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য সক্ষম পরিবেশ তৈরিতে তরুণদের ভূমিকা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এজন্য সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে তরুণদের মধ্যে নাগরিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
শক্তিশালী গণতন্ত্র সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা উৎসাহিত করে- ফলে জনগণ তথ্য পায়, নানা মতের প্রতিফলন ঘটে, এবং নেতৃবৃন্দকে জবাবদিহিতার আওতায় রাখে।
আমাদের চারপাশে সংবাদের ছড়াছড়ি- ইন্টারনেট, টেলিভিশন, রেডিও ও সংবাদপত্র সর্বত্র- তাই সাংবাদিকরা যে কত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন সেটা ভুলে যাওয়া খুব সহজ।
যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদ মাধ্যমকে অনেক সময় সরকারের চতুর্থ শাখা বলা হয়ে থাকে। যদিও বিধান অনুযায়ী সরকারের শাখা তিনটি যথা- নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগ- তবুও উক্ত শব্দবন্ধের মাধ্যমে সরকারী কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ এবং নেতৃবৃন্দকে দায়বদ্ধ রাখতে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকার প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমের অন্যতম প্রধান কাজ হলো তথ্য প্রদান, যার উদ্দেশ্য হলো জনসাধারণকে প্রায়শ জটিল সরকারী পদ্ধতিগুলো বুঝতে সহায়তা করা, এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে সে বিষয়ে সচেতন করা।
সংবাদ মাধ্যম জনগণকে ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের মতামত থেকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী প্রকাশ ও বোঝার সুযোগ করে দেয়। বিরোধী নেতৃবৃন্দের মতামত বিষয়ক সংবাদ এবং সরকারি কর্মকাণ্ড বিষয়ে সমালোচনাধর্মী সম্পাদকীয় প্রকাশের মাধ্যমে নানা মতের প্রতিফলন ঘটে। গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ নেতৃবৃন্দ হয়তো চাইবেন না যে তাঁদের নীতিমালা প্রকাশ্য সমালোচনার শিকার হোক, তবে তাঁরা সংবাদ মাধ্যমের সেই সমালোচনার অধিকার সমুন্নত রাখবেন।
পর্যবেক্ষক হিসাবে সংবাদ মাধ্যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং অনেক সময় দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে। স্পষ্টতই এর কারণ হলো, সংবাদ মাধ্যম সরকারের বাইরের অংশ। তাই দেশের নেতৃবৃন্দ যখন তাঁদের দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হন তখন সংবাদ মাধ্যম সে বিষয়ে জনসাধারণকে অবগত রাখতে পারে।
সাংবাদিকরা যখন হুমকি, আক্রমণ, তথ্য-নিয়ন্ত্রণ বা কারাবন্দিত্বের শিকার হন তখন সেটা আসলে সেই সমাজের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি সরাসরি আক্রমণ।
শক্তিশালী গণতন্ত্র সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা উৎসাহিত করে। কোন সরকার যখন তাদের সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তখন আসলে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয় যেখানে সাংবাদিকরা নিজেরাই ভয়ে নিজেদের বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ বা সেন্সরে বাধ্য হন। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি উইলিয়াম ব্রেনান বলেন- জনগণের যেকোন বিষয়ে বিতর্ক হতে হবে নিঃশঙ্কোচ, তেজদীপ্ত ও উন্মুক্ত।
আ.দৈ/এএস