ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মেয়েদের আবাসিক হলগুলোতে খাবারের মান দিন দিন আরও অস্বাস্থ্যকর হয়ে যাচ্ছে। মূল্যের তুলনায় খাবারের স্বাদ, পরিমাণ ও তৈরির পরিবেশ অত্যন্ত নিম্নমানের। এ বিষয়ে হলগুলোর প্রশাসন পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিলেও ফলপ্রসূ কার্যক্রম চোখে পড়ছে না।
এদিকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাত্রীদেও ‘বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী’ হলের চিকেন পাস্তায় টিকটিকি পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঐ ক্যান্টিন মালিককে দ্রুত অপসারণের দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। এ ব্যাপারে হল কর্তৃপক্ষ ৩ দিনের সময় চেয়েছেন। উক্ত সময়ের মধ্যে বা সম্ভব হলে তার আগেই নতুন ক্যান্টিন মালিকের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন হল প্রোভোস্ট।
এই হলে এর আগেও খাবারে তেলাপোকার পা, টিস্যু পলিথিনের টুকরা, ভর্তায় পোকা, পচা বাসি খাবার পরিবেশনেরও ঘটনা ঘটেছে বহুবার। উক্ত ক্যান্টিন মালিক জনাব সেলিমকে এর আগে বহুবার সতর্ক করা হলেও তার অসচেতনতা কমে নি। এ ব্যাপারে ছাত্রী প্রতিনিধি ও অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা ‘সেলিম ক্যান্টিন’ বাতিলের পক্ষে। এ নিয়ে হলের ফেসবুক গ্রুপে পোল তৈরি করে ভোট নেয়া হলে সেলিম ক্যান্টিনকে জরিমানা করে রাখার পক্ষে ৩০ শতাংশ এবং নতুন লোক আনার পক্ষে ভোট দেন হলের ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শোয়াইবা বলেন, খাবার আগে থেকেই তেমন মানসম্মত ছিলো না, ছাত্র আন্দোলনের পর যখন ক্যান্টিন খোলে তখন থেকে আরও খারাপ অবস্থা। যার কারণে আমি কিছুদিন যাবত নিজে রান্না করি। কিন্তু সারাদিন ক্লাস, টিউশন, করে এসে যা খুবই কষ্টকর। ক্যান্টিন মালিকের অসচেতনতা এবং বেখেয়ালি মনোভাবের ফলে অন্যান্য স্টাফরাও উদাসীন। একই হলের শান্তা ও সিফা বলেন, মেয়েদের অন্য হলের তুলনায় খাবারের স্বাদ মোটামুটি ভালো হলেও পরিবেশ খুবই বাজে ও অস্বাস্থ্যকর।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সুমাইয়া মোহাম্মদ বলেন, আমার হলে খাবারের স্বাদ অনুযায়ী দামটা একটু বেশি লাগে। আর একই খাবার বারবার খেতে হয় কারণ খাবারের ভ্যারাইটিজ অনেক কম।
রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী উম্মে নিগার বলেন, হলের খাবারের স্বাদ অত্যন্ত বাজে, মাঝে মাঝে মাছ উপরে ভাজা দেখা গেলেও ভিতরে কাঁচা থাকে। রান্নার পরিবেশও খুব অস্বাস্থ্যকর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে মেয়েদের ৫টি হল রয়েছে। খাবারের মান বিবেচনায় প্রায় সব হলের অবস্থা একই। আগের তুলনায় দাম বাড়লেও মানের কোন পরিবর্তন হয় নি। বিগত সময়গুলোতে মেয়েদের হলে ছাত্রলীগ নেত্রীদের বাকিতে খাওয়ার ঘটনাকে খাবারের অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী করা হতো। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর থেকে হলগুলো নোংরা রাজনীতিমুক্ত হলেও এখন পর্যন্ত খাবারের মানের পর্যাপ্ত পরিবর্তন হয়নি। এছাড়াও কিছুদিন আগে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার অযুহাতে প্রায় সব খাবারের দাম বাড়ানো হলেও মান ও পরিমানের কোনো পরিবর্তন হয় নি।