গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীসহ সারা দেশে বৃষ্টি ঝরছে। কখনো ঝিরি-ঝিরি, তো কখনো মুষলধারে। এতে তাপমাত্রা কমে নগর জীবনে স্বস্তি মিলেছে। তবে ভোগান্তি বেড়েছে। টানা বৃষ্টিতেই ডুবছে ঢাকার প্রধান সড়কসহ অলিগতি পাড়া মহল্লা। শুক্রবার রাত ভরে বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতে। আজ শনিবার (০৫ অক্টোবর) সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত আছে। এতে ডুবে গেছে অনেক সড়ক। যানবাহন চলাচলও বিঘ্নিত হয়েছে।
রাজধানীতে ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি নিয়মে পরিণত হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে এদিন সকাল থেকেই রাজধানীর মালিবাগ, শাহবাগ, শান্তিনগর, মিরপুর, নিউ মার্কেট, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী ১১ অক্টোবর পর্যন্ত কম বেশি বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এই সময়ে রাজধানীতেও বৃষ্টির আভাস রয়েছে। ফলে ভোগান্তি এখনি যাচ্ছে না।
এদিকে কারণে অফিস যাওয়ার পথে অনেককেই দোকানের ভেতরে, যাত্রী ছাউনিতে আশ্রয় নিতে দেখো গেছে। ফ্লাই ওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে বহু মোটরসাইকেল চালককে। রেইনকোট পরে কেউ কেউ ঝুম বৃষ্টিতেই রওনা দিয়েছেন অফিসের উদ্দেশ্যে। ভ্যানচালকদের এই বৃষ্টিতে ভিজেই পণ্য পরিবহন করতে দেখা গেছে। গাড়িতে থাকা পণ্য যেন বৃষ্টিতে না ভিজে যায়, সেজন্য পলিথিন মুড়িয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় পণ্য নিয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে অনেক চালককে। ফুটপাতের দোকানিরা নিজেদের ব্যবসার পসরা মিলিয়ে বসতে পারছেন না। অনেকে ত্রিপল ও ছাতা দিয়ে ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তবে বৃষ্টির কারণে ক্রেতা মিলছে না অন্যান্য দিনের মতো।
পথে পথে জমে থাকা পানি, ভাঙাচোরা পথ আর এলোপাতাড়ি চলাচলের কারণে অপ্রতুল গণপরিবহনও কোথাও কোথাও যানজট ভোগান্তির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। মতিলঝিল শাপলা চত্ত্বরের আশেপাশের এলাকায় প্রধান সড়কে হাটু সমান পানি জমে যায়। ফলে মেট্রোরেলে উঠানামার ক্ষেত্রে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পোহাতে হয়েছে। এছাড়া কমলাপুর বাজার লোড এলাকায় তলিয়ে যাওয়ার কারণে পথচারীরা ভিজে একাকার। সরেজমিন দেখা গেছে অনেক দোকানের ভেতর্ েপানি জমে গেছে। আবার পানির কারণে কোন ক্রেতাও দোকানে আসছে না।
শনিবার দুপুরের দিকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। এতে অতীতের মতো ঢাকার রাস্তাঘাট পানিতে ডুবেছে। কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও আবার কোমর সমান পানি হয়েছে বৃষ্টিতে। বিশেষ করে কিছুটা নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে অনেক বেশি। তবে পান্থপথ, কাঠালবাগান, পুরানা পল্টন, শান্তিনগর, মৌচাক, ফকিরাপুল, রাজারবাগ, মতিঝিল এলাকায় বৃষ্টি থেমে গেলেও কয়েক ঘণ্টা পর এসে পানির কষ্ট কমেনি। জলাবদ্ধতার কারণে শুকনো কাপড় পড়ে ঘরে ফেরা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে বাড়তি কাপড় নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন। অন্যদিকে, বৃষ্টি থামার কয়েক ঘণ্টা পার হলেও পানি থাকায় রিকশা-সিএনজি চালকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকাচ্ছেন। অল্প দূরত্বেও কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নিয়ে মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছেন।
পল্টন থেকে নতুন বাজার আসা একজন জানালেন, পল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগরে যে পানি দেখে এসেছি তাতে কখন রাস্তা স্বাভাবিক হবে তা বলা মুশকিল। রিকশায় অনেকটা সিএনজির মতো করে ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। মোহাম্মদপুর থেকে ফার্মগেট আসার পথে সংসদ ভবনের সামনের সড়কেও অনেক পানি জমে গেছে। এদিকে, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় একদিকে পানি, অন্যদিকে যাত্রী সংকটও দেখা দিয়েছে কোনো কোনো গণপরিবহনে। অবশ্য কোনো কোনো বাসে উপচে ভিড়ও লক্ষ্য করা গেছে। ভিক্টর ক্লাসিক বাসের চালকের সহকারী জানান, ‘একদিকে শনিবার যাত্রী কম থাকে। এরমধ্যে বৃষ্টি। পানির কারণে যাত্রীরা বাসে ওঠারও সুযোগ পাচ্ছে না।’
বেসরকারি এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মী রিয়াজ উদ্দিন মতিঝিলে যেতে যাত্রাবাড়ীর বাসা থেকে বের হয়েছিলেন সকাল ৮টায়। দোলাইরপাড় হয়ে যাত্রাবাড়ী মোড়ে এসে তিনি গাবতলীগামী যে বাসে উঠেছিলেন, টিকাটুলি পর্যন্ত দুই কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিতেই সেটির লেগে যায় পুরো এক ঘণ্টা। পায়ে হাঁটলেও এতটুকু পথ পাড়ি দিতে সময় লাগত আধা ঘণ্টারও কম। বাইরে বৃষ্টি, পুরো সড়ক জুড়ে বাস, মোটরসাইকেল রিক্সাসহ বিভিন্ন ধরনের বাহন। ফুটপাতেও পানির কারণে হাঁটা সম্ভব নয়। অগত্যা বাসের মধ্যেই তাকে বসে থাকতে হয়েছে মতিঝিল পৌঁছানো পর্যন্ত।
সকাল ৯টায় রওনা দিয়ে গুলিস্তান টোলপ্লাজার আগেই নেমে বাকিটা পথ পায়ে হেঁটে গিয়ে আরেক বাস ধরতে হয়েছে নারী উদ্যোক্তা নুসরাত জাহানকে। সাধারণ সময়ে ১৫ মিনিটের এ পথ পাড়ি দিতে ঘণ্টার বেশি সময় নিয়েছে বৃষ্টির কারণে। আশ্বিনের শেষভাগে এসে যে বৃষ্টি ঝরছে, তার যেন বিরাম নেই। কখনো বড় বড় ফোটায়, কখনো আবার ঝিরঝিরে, কিন্তু বর্ষণ চলছেই। রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা জমে থাকা পানি দেখা গেছে। পথে পানি জমায় চলার পথ হয়েছে সরু। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় গণপরিবহন ‘ইচ্ছেমত চলাচল করতে গিয়ে’ তৈরি হয়েছে যানজটও। রিয়াজ উদ্দিন বলেন, “সাধারণত শনিবার কাজ থাকে না। সকালে একটি ফাইলের কাজ জরুরিভিত্তিতে করে দিতে অফিসে যেতে হচ্ছে। একে তো বৃষ্টি, তারওপর এই যানজট। কষ্ট দুই দিকেই।
একটানা বৃষ্টিতে টিকাটুলি থেকে মতিঝিলের জীবন বীমা ভবন পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে পানি জমলেও শাপলা চত্বরে জলজট হয়নি। পানির নিচে চলে যাওয়া সড়কের অংশ এড়িয়ে ডান পাশ ধরে ধীরে গতিতে চলাচল করেছে সব যানবাহন। মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন তার স্থাপনে মতিঝিল অংশের কাজ এখনো চলছে। পনির নিচে থাকা সড়কের কোন জায়গায় গর্ত তা বুঝতে কষ্ট হয় চালকদেরও। ফলে রিকশাগুলোও চলেছে রাস্তার ডানপাশ ধরে। এতেও বাসের গতি কমেছে বলে জানান গাবতলী-যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী গাবতলী লিংক পরিবহনের চালক রহমত উল্ল্যাহ।
তিনি বলেন, “পানি জমলে তো বুঝা যায় না রাস্তার কোন জায়গায় গর্ত, কোন জায়গায় ভালা। একইভাবে বৃষ্টির কারণে সড়কের শৃঙ্খলাও হারিয়েছে বিভিন্ন মোড়ে। রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের গুলিস্তান পয়েন্টে গণপরিবহনের বড় অংশের গন্তব্য শেষ হয়। সেখানে গাড়ি ঘুরিয়ে যাত্রী তুলতে শুরু করে চিটাগাং রোড, সাইনবোর্ড, মাতুয়াইল, ডেমরা রুটের বাসগুলো।
আ. দৈ. /কাশেম/ শাহীন