চাকরির সুবাধে বড় বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, আমদানি - রপ্তানিকারক ও সরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেনি এবং পেশার কর দাতাদের আইনের মারপ্যাচে ফেলে মোটা অংকের ঘুষ- দুর্নীতির মাধ্যমে রাতারাতি কোটিপতি হচ্ছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধিকাংশ কর্মকর্তা- কর্মচারী। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রায়েছে তাদের একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি, গাড়ি এবং বাসা বাড়িতে মূল্যবান আসবাবপত্রের যেন অভাব নেই । সম্প্রতি দুদকের নজরদারিতে বেরিয়ে আসছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রমাণ। গত তিনদিনের ব্যবধানে দুদক এনবিআর'এর প্রভাবশালী ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে একাধিক টিম মাঠে নামিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার (০১ জুলাই)দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ দপ্তর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। এনবিআরের কোটিপতি আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এরআগে গত ২৯ জুন 'এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার সহ প্রভাবশালী ৬ জনের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করতে টিম গঠন করেছে দুদক। এছাড়া দীর্ঘদিন যাবৎ দুদকের পক্ষ থেকে এনবিআর'এর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের প্রাপ্ত অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে।
দুদক সূত্রমতে, আজ মঙ্গলবার দুদকের পক্ষ থেকে নতুন করে অনুসন্ধানের তালিকায় যুক্ত হয়েছে- এনবিআর'এর অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া,সদস্য লুতফুল আজীম, সিআইসির সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, উপ কর কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম ও যুগ্ম কমিশনার মো. তারেক হাছানের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত বিপুল পরিমান স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের অভিযোগ নিযে।
এর আগে গত ২৯ জুন এনবিআরের ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধান শুরু হয়। অবৈধ সম্পদের মালিকদের মধ্যে মধ্যে বেশিরভাগই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্য। নতুন করে যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তাদের তিনজন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্য। এই সংগঠনের ব্যানারে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করেন এনবিআরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
সূত্র মতে, গত ২৯ জুন এনবিআরের আলোচিত ৬ কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছে, আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য এ কে এম বদিউল আলম। নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার;। ঢাকা-৮ কর অঞ্চলের অতিরিক্ত কমিশনার মির্জা আশিক রানা। ঢাকা কর অঞ্চল-১৬ অতিরিক্ত কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা। ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কণ্ডু । বিএসএস কর একাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান।
আলোচিত এনবিআর'এর প্রভাবশালী কর্মকর্তারা গত ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন স্টেশনে চাকরিকালীন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক, ভ্যাট ও কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়ে ও নিজে লাভবান হয়ে রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে দুর্নীত, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন অনেকে।
সূত্র মতে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার , মির্জা আশিক রানা ও শাহরীন সুস্মিতা ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি। এনবিআরে সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে গত ১২ মের পর থেকে আন্দোলন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে সরকারের হয়ে রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটিতে একধরনের অচলাবস্থা চলছে। এতে সেবায় বিঘ্ন ঘটছে। এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। উদ্দেশ্য হলো করহার নির্ধারণের মতো নীতিগত কাজ এবং কর আদায়ের কাজ পৃথক রাখা।
এদিকে নীতিবিদ, গবেষক, ব্যবসায়ীরাও দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব খাত সংস্কারের কথা বলে আসছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের একটি শর্ত ছিল রাজস্বনীতি ও আদায়ের কাজে আলাদা সংস্থা করা। এনবিআর’এর কর্মকর্তারা দুটি বিভাগ করা নিয়ে আপত্তি করছেন। তবে তাঁরা মূলত ওই দুই বিভাগে পদায়নের ক্ষেত্রে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার চাইছেন। সরকার উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগের কথা বলছে, যার মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা যায়। কিন্তু এনবিআর'এর নেতারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে সবকিছু রাখতে চায়।
কিন্তু এনবিআর’এর লোকজন সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরই, যখন দুদকের পক্ষ থেকে নেতাদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত ঘোষনা করা হয়। তখনই হুটকরে এনবিআর’এর কর্মকর্তারা অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে যোগদানে রাজি হয়ে যায়।
দৈ./কাশেম