অবশেষে ৪৩ দিন পর অন্তর্বতীকালীন সরকারের নিয়োগকৃত প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে ফিরে এসেই ‘টপ টু বটম’ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পুরোদমে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সাথে ঢাকাবাসীর ব্যানারে স্বঘোষিত ডিএসসিসির মেয়র বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন আউট হয়েছেন। শুধু তাই নয়,ইশরাক হোসেনের সমর্থিত বহিরাগতদের সাথে ডিএসসিসির উশৃঙ্খল কর্মচারীরাও নগর ভবন ছাড়া।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত গেন্ডারিয়া থানা এনপি নেতা সাবেক, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোকবুল ইসলাম খান টিপু, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনি বেগম সহ ১২/১৫ জন বহিরাগতরা নগর ভবনে ব্যানার নিয়ে মহড়া দিয়েছেন। কিন্তু তাদের সমর্থনে ডিএসসিসির কর্মচারীরা আর এগিয়ে আসেনি। পরে হতাশ হয়ে নগর ভবন ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া ডিএসসিসির নগর ভবনে ফিরে আসছেন খবর পেয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ছুটে আসেন এবং কৌশলাদি বিনিময় করেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নগর ভবনে নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছে। ডিএসসিসির সত্যিকারের অভিভাবক ও মানবিক গুনাবলি সম্পন্ন,ন্যায় পরায়ন প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়াকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান তারা।
পরে নগর ভবনে প্রশাসক তার দপ্তরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। তিনি তাৎক্ষনিক নির্দেশ দেন আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) থেকে ডিএসসিসির সব বিভাগের কার্যক্রম শুরু হবে। একই সাথে আগামীকাল শুক্রবার ও শনিবার অফিস খোলা থাকবে এবং সবাইকে যথারীীতি দাপ্তরিক কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে।
প্রশাসক বলেন, ‘গত ৪৩ দিনের আন্দোলনে ডিএসসিসির অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু আমরা আর পেছনের দিকে তাকাতে চাই না। আমরা সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব। সামনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনেকগুলো কাজ করব। এর মধ্যে বাজেট প্রণয়নের কাজটি দ্রুত শেষ করা হবে।’ তিনি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, চলমান জরুরি কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে, ডেঙ্গুর জীবানুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। কারণ নগরীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেড়েছে। এই বিষয়ে নগরবাসীকে সচেতন করতে হবে এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাজ আরো জোরদার করতে হবে। নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রশাসক রাজস্ব বিভাগের সবাইকে দ্রুত বকেয়াসহ সবধরনের ট্যাক্স ও পৌরকর আদায়ের চেষ্টা করতে হবে।
সূত্র মতে, এরআগে অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেই গত ১৬ জুন নগর ভবনে ঢুকে নিজেকে ডিএসসিসির নির্বাচিত মেয়র ঘোষণা দিয়ে, মাননীয় মেয়র লেখা ব্যানার টানিয়ে বোর্ডরুমে কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ডেকে বৈঠক করেন ইশরাক হোসেন। এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় নগরবাসী এবং গণমাধ্যমে। এর আগে তিনি বলেছেন, শপথ ছাড়াই জনতার মেয়র ইশরাক হোসেন।
উল্লেখ্য, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত ১৪ মে থেকে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনে ইশরাকের সমর্থনে বহিরাগতদের সাথে ডিএসসিসির কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী নগর ভবনে কর্মবিরতিতে অবস্থান নেয়। একই সাথে পুরো নগর ভবনে ৬৫ টি তালা ঝুলিঁয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ফলে গত ১৪ মে থেকে প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া আর নগর ভবনে আসেননি।
তবে ২৩ জুন দুপুরে ইশরাক হোসেন পক্ষ থেকে নগর ভবনে প্রশাসক ও প্রকৌশল বিভাগে তালাবদ্ধ রেখে, বাকি দপ্তরের তালা খোলার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে ডিএসসিসির কর্মচারী ওইদিন কয়েকটি দপ্তরে তালা খোলেন এবং কাজে যোগদানের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ইশরাকের সমর্থিত শ্রমিক দলের দুই গ্রুপর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
পরদিন ২৪ জুন দুপুরে নগর ভবনের ওই আরিফ চৌধুরী এবং আরিফুজ্জামান প্রিন্স গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে মারাত্নক আহত আরিফ চৌধুরীর গ্রুপের দুইজন এখনো হাসপাতালে ভর্তি। এছাড়া বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এর আগে ২৯ মে দুপুওে নগর ভবনে এই দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ওই দিন প্রিন্স গ্রুরপ ৪/৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
আ. দৈ./কাশেম