অবশেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে দেওয়ার জন্য চলমান অসহযোগ আন্দোলন টানা ৪০দিনের মাথায় ব্যার্থ হয়েছে। বিএনপির কতিপয় নেতা-কর্মী এবং ডিএসসিসির কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী অতিউৎসাহী হয়ে গত ১৪ মে অসহযোগ আন্দোলনে নামে নগর ভবনে ৬৫টি তালা ঝুলঁছে। কিন্তু নগরবাসী এবং সেবামূলক সরকারি এই প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে ব্যক্তির স্বার্থের আন্দোলন হিতের বিপরীত হয়েছে। এবারআন্দোলনকারীরা পালানোর পথ খুঁজছেন।
এই আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সাবেক আমলা মশিউর রহমানসহ বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শুভাকাঙ্খিরা এখন আর মাঠে নেই। কারণ রাষ্ট্রীয় আইনের মারপ্যাচ, ইতোমধ্যে ডিএসসিসির মেয়রের মেয়াদ শেষ,রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সমন্বয়হীনতায় নগর ভবনে তালা ঝুঁলানো এবং অসহযোগ আন্দোলন সফল হচ্ছে না। আজ শুধুমাত্র ইমরাক হোসেনই নয় বিএনপির রানীতিতেও করুন পরাজয় ডেকে এনেছে। কারণ টানা ৪০ দিনের এই অসহযোগ অন্দোলনে ডিএসসিসি এবং নগরবাসীর যে পরিমান ক্ষতি করা হয়েছে, তা সহজে পুরন করার মতো নয় বলেছে ভোক্তভুগী নাগরিকরা।
এদিকে অসহযোগ আন্দোলনে মার খেয়ে ইশরাক হোসেনের প্রধান সমন্বয়ক সাবেক আমলা মশিউর রহমান এবং ইশরাক হোসেন নতুন আরেক নাটক সাজানোর পায়তারা করছেন। ডিএসসিসিকে মনে হচ্ছে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। আজ রোববার (২২ জুন) দুপুরে নগর ভবনে মশিউর রহমান আসেন কিন্তু ইশরাক হোসেন আসেননি। পরে মশিউর রহমান আন্দোলনরত লোকজনকে বলেন, নাগরিক সেবা চালু করতে হবে। তিনি বলেন, সোমবার (২৩ জুন) থেকে নগর ভবনে প্রশাসক এবং প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরসহ সব প্রকৌশলীদের দপ্তর তালাবদ্ধ থাকবে। এছাড়া বাকি সব বিভাগ ও দপ্তরের তালা খোলা হবে। আবার ডিএসসিসির কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের উদ্যোগের কোনো ক্রমেই বাস্তাবায়ন হতে দেওয়া হবে না। তাই সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
একই সঙ্গে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগের কোনো বিল ছাড় দিতে দেবে না। এদিকে সরকারের অ্যাকশনের বিষয়টি আচ করতে পেরে ডিএসসিসির কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিজেদের রক্ষায় সরকার এবং প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন। তবে অতিমাত্রায় উশৃঙ্খলতায় জড়িত ডিএসসিসির কর্মচারী ও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন সমর্থিতদের মাঝে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। সাবেক আমলা মশিউর রহমান নিজেও এক সময় এই নগর ভবনে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেছেন।
আজ রোববার নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটির আঞ্চলিক অফিসসহ নাগরিক সেবা চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মরতদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান। মশিউর রহমান বলেন, আন্দোলনরত ঢাকাবাসীকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বান জানিয়ে জরুরি নাগরিক সেবাসমূহ নির্বিঘ্ন করার সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে কর্মরত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব, স্বাস্থ্য বিভাগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তার দপ্তর, হিসাব ও অডিট বিভাগ, সমাজকল্যাণ বিভাগ, আইন বিভাগ, রাজস্ব বিভাগ, সম্পত্তি বিভাগ, পরিবহণ বিভাগ, বিদ্যুৎ সার্কেল, যান্ত্রিক সার্কেল, সংস্থাপন শাখা, নিরাপত্তা শাখা, জনসংযোগ বিভাগ, আইসিটি সেল, নগর পরিকল্পনা বিভাগ, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, নিজ নিজ অফিসে কর্মরত থেকে তাদের ওপরে দায়িত্বসমূহ।
যেমন- জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক সনদ ওয়ারিশান সনদ, বিভিন্ন ধরনের প্রত্যয়নপত্র, সব ধরনের পৌর ও বাজার কর আদায়, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু, নবায়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিধন কার্যক্রম, ডেঙ্গু চিকনগুনিয়া ও করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম, সড়ক বাতি প্রজ্বালন সচল রাখার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, তার বিশ্বাস জনগণই এ দেশের প্রকৃত মালিক। তারা সঠিক সময়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার এমন ফ্যাসিস্ট, বেআইনি কার্যকলাপের জবাব দিবে। সাবেক সচিব মশিউর রহমান আরও বলেন, কোন দালাল শ্রেণি স্বৈরাচারের দোসর, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর, দুর্নীতিবাজ কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তথা নগর ভবন বা আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহের কোথাও প্রবেশ করতে পারবে না। তাদের সব স্থানে দেখামাত্রই প্রতিহত করা হবে। তিনি আরও বলেন, যদি কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব, অর্থাৎ নাগরিক সেবা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ বা গাফিলতি করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মশিউর রহমান বলেন, তিনিও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন; তা কোনো ক্রমেই বাস্তাবায়ন হতে দেওয়া হবে না। তাই সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগের কোনো বিল ছাড় দিতে দেবে না। এছাড়াও ফ্যাসিস্ট আমলের দোসরদেরও নগর ভবন এবং আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। নতুন করে কোনো নিয়োগ দিতে গেলেও তা প্রতিহত করা হবে। ইশরাককে মেয়র ঘোষণার দাবিতে গত ১৪ মে থেকে ঢাকাবাসীর ব্যানাওে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সব ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ রেখেছে কর্মকর্তা- কর্মচারীরা।
এদিকে নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসসিসির কর্মকর্তারা বলেন, নগরবাসীর সেবামূলক সবধরনের কার্যক্রম বন্ধ রেখে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জিম্মি করে অসহযোগ অন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে গেলে অনেকেই ধরা পড়বেন। নগর ভবনে ৬৫ টি তালা ঝুঁলানো এবং আন্দোলনকে জোরদার করতে যারা উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি অর্থ দিয়েছেন ,তাদের সর্ম্পকে বিস্তারিত তথ্য নিয়েছে সরকার। সরকারের উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র আর ছাড় পাচ্ছেন না অসহযোগ অন্দোলনকারীরা। একই সাথে তাদের চলমান অসহযোগ আন্দোলনকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার,নগরবাসী, অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।
তারা আরো বলেন, ডিএসসিসির মেয়র পদের দাঁয়িত্ব পাবার জন্য সেবামূলক এই প্রতিষ্ঠানকে অচল করা এবং পুরো নগরীর কয়েক কোটি মানুষ জিম্মি করার বিষয়টি কেউ মেনে নিতে পারচ্ছেন না। যদি বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন এতোটাই জনপ্রিয়তা নেতা হয়ে থাকেন, তাহলে ২০২০ সালে ১ ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসির নির্বাচনে ভোট গ্রহণকালে কেন্দ্রের এজেন্টসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচন বয়কট করে রাজপথ ছেড়ে গিয়েছিলেন কেনো। ওইদিন কেনো ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলতে পারেননি। ওইদিন তো নির্বাচনী মাঠ ছাড়ার সময় গণমাধ্যমের সামনে ওই নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ছিলেন। সেদিন ঢাকাবাসী এবং ডিএসসিসিতে কর্মরত বিএনপির সমর্থিত এতো প্রভাবশালী কর্মকর্তা -কর্মচারীরা কোথায় ছিলেন।
তারা বলেন, সিটি করপোরেশনের সাবেক আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের নামে নিজে যেমন বির্তকিত হয়েছেন। ঠিক তেমনি বিএনপির তরুন ও ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকেও ডুবিয়েছেন। শুরু তাইনয়,তার নির্দেশনায় ডিএসসিসির কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী নগর ভবনে তালা মেরে টানা ৪০ দিন নাগরিক সেবা বন্ধ রেখে অনেক অপরাধ করেছেন। সরকারি চাকরি জীবীরা এই ধরনের কর্মকান্ড করতে পারেন না। যাইহোক আগামীতে আর এই ধরনের অপরাধে ডিএসসিসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের না জড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।