ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানা স্থানান্তরিত না করার দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা ও উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি মানববন্ধন করেছে। তবে এ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তাসহ এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন।
আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচির সাথে একাত্মতা পোষণ করে আশেপাশের দোকানপাট সাময়িক বন্ধ রাখে দোকানিরা।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ইবি থানা ও উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী লক্ষীপুর, বৃত্তিপাড়া, হরিনারায়ণপুর এলাকাবাসীসহ বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীরা। এ সময় প্রায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
মানববন্ধনে চলাকালে স্থানীয়দের হাতে- "দাবি এক, দফা এক; ইবি থানা ইবিতে থাক, ইবি থানা, ইবিতেই চাই" লেখা সম্বলিত ফেস্টুনসহ 'ফ্যাসিবাদী সিদ্ধান্ত, মানি না মানবো না; স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত, মানি না মানবো না; হরিনারায়ণপুরের একশন, ডাইরেক্ট একশন; আবদালপুরের একশন, ডাইরেক্ট একশন' স্লোগান দেন তারা।
এদিকে মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তাদের দাবি, সম্প্রতি পতিত সরকারের সুবিধাভোগিরা ঝাউদিয়ায় থানা উদ্বোধনের জন্য ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে জনভোগান্তি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ত্রাস সৃষ্টি করেছে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে এবং এ অঞ্চলের মানুষ ও গৌরবময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে ইবি থানা ইবিতেই রাখতে মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
এলাকাবাসীরা জানান, দাবি এক দফা এক ইবি থানা ইবিতেই থাক। আমরা কোনো ষড়যন্ত্র মানবো না। এই গৌরবোজ্জ্বল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। সফলও হয়েছি। আমরা বলতে চাই, ইবি থানা এখানে রাখতে যত আন্দোলন সংগ্রাম করা দরকার তা করে যাব। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের সামনের কাতারে থেকে রক্ত দিব। তারপরও ইবি থানা স্থানান্তর করতে দিব না।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ক্যাম্পাসকে সুরক্ষিত রাখতে হলে, ইবি থানাকে তার পূর্বাবস্থায় বহাল রাখার কোনো বিকল্প নেই। স্বভাবতই, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে এবং বিনাইদহ সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় এলকাটি দুর্গম এবং নিরাপত্তাজনিত সংকটে রয়েছে। অতএব, ফ্যাসিস্ট সরকারের স্বার্থান্বেষী মহলের এক তরফা সিদ্ধান্ত বাতিল করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা বহাল রাখার জন্য অনুরোধ করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের দাবি, ঝাউদিয়ার নিরাপত্তার স্বার্থে ওখানে আরেকটা থানা, উপজেলা, ক্যান্টনমেন্ট বানিয়ে দিক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ হাজার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ইবি থানা ইবিতেই থাকবে। কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র চলবে না। ইবি থানা ইবিতে রাখার জন্য শিক্ষার্থীরাই যথেষ্ট।
ইবি থানা বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুবকর সিদ্দীক বলেন, আমরা চাই বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে দ্রুত একটা তদন্ত হোক। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই থানা প্রতিষ্ঠিত। প্রায় ২৬ বছর কাজ করে যাচ্ছে এই থানার অধীনে কিন্তু কেনো যৌক্তিক কারণ না দেখিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের একটা স্বার্থান্বেষী মহল স্থানান্তর করার পায়তারা করে যাচ্ছে। আমরা এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত এই থানা স্থানান্তর করতে দিব না।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া ও প্রশাসন) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, আমরা এলাকাবাসী ও ছাত্র জনতার দাবির কথা শুনেছি। সুবিধা অসুবিধার কথা শুনে তদন্ত রিপোর্ট করা হবে। জন দুর্ভোগের কথা চিন্তা করতে হয় আমাদের।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ১৭ হাজার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ইবি থানা ইবিতেই থাকতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই। প্রয়োজনে ঝাউদিয়াবাসী সরকারের কাছ থেকে ৪-৫ টা থানা নিয়ে আনলেও আমাদের আপত্তি নাই।
উল্লেখ্য, প্রায় ঘন্টাখানেক কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়ক অবরুদ্ধ'সহ রাস্তায় আগুন ধরায় বিক্ষুব্ধরা এবং একটি বাসের কয়েকটি গ্লাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
আ.দৈ/এআর/সাকিব