রাষ্ট্র মেরামত, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ এসেছে সেটা মিস করলে আগামী কয়েক দশকেও এ সুযোগ আর পাবো না। কাজেই এ সুযোগ আমাদের কোনোভাবেই মিস করলে চলবে না বলে মন্তব করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে সরকারি সার্ভিস অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়ার ওপর মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। সভা আয়োজন করে আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
আইন উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক সরকারগুলো যখন আসে বিশেষ করে ২০০৯ এরপর আওয়ামী লীগ সরকার এসে ভালো ভালো অধ্যাদেশগুলো বাতিল করে দিয়েছে। এখন আমাদের পরবর্তি সরকারের বাতিল করা একটু কঠিন হবে। আর পরবর্তী সরকার আসবে আমাদের হাজার খানেক ছাত্র তরুণের রক্ত ও আরও অনেকের যে অঙ্গহানি হয়েছে এমন মানুষ ও জনমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষিতে। তো পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা যাবে না বা সম্ভব হবে না। এত কষ্ট ও এত ত্যাগ কখনই বাংলাদেশের মানুষ সংস্কার ও রাষ্ট্র মেরামতের জন্য করেনি৷ শুধু বাংলাদেশে কেন সাব-কন্টিন্টের ইতিহাসেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
তিনি বলেন, আমরা অনেক সময় অনেক সুযোগ পেয়েছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর, স্বাধীনতা সংগ্রামের পর পেয়েছি। এরপর আমরা ১৯৯১ সাল, ২০০৮ সালেও পেয়েছিলাম তো কোনো সুযোগই আমরা সৎভাবে ব্যবহার করতে পারিনি৷ এবার আমার মনে হয় এত ত্যাগ ও এত রক্ত ক্ষয়ের পর আমাদের যে রাষ্ট্র মেরামতের সুযোগ এসেছে, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে এবার যদি আমরা সে সুযোগ মিস করি তাহলে আমার মনে হয় আগামী কয়েক দশকে এ সুযোগ পাবো না। কাজেই এসুযোগ আমাদের কোনোভাবেই মিস করলে চলবে না।
আসিফ নজরুল বলেন, আমরা আরো মতামত নেবো, আলোচনা করবো। আমরা খুবই খুশি হয়েছি আমাদের এ আইনটাকে তুলোধুনা করে দেওয়ার জন্য, এটা ভালো হয়েছে আসরা আরও ভালো করার চেষ্টা করবো। আজকে একটা খুব ভালো সাজেশন আসছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার। এটা অবশ্যই করবো। আপনাদের সবার সহযোগিতায় আমরা একটা ভালো আইন করতে পারবো। আর আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে এ বর্তমান সরকারের আমলে যদি কিছু নিয়োগ আমরা অ্যাটর্নি সার্ভিসে দিয়ে যেতে পারি সেই চেষ্টা করবো।
আসিফ নজরুল বলেন, আমরা একটা জিনিস সব সময় শুনতে পাই নিম্ন আদালতে বা উচ্চ আদালতে দুর্নীতি বা অনিয়ম হয়। তবে সেখানে অনেক পক্ষ থাকে। শুধু স্টাফ বা জজরা করে তা কিন্ত নয়। সেখানে সরকারি আইনজীবীদেরও একটা ভূমিকা থাকে। আমি রিসার্চ করে দেখেছি তারা অত্যন্ত অল্প টাকা পান। বিশেষ করে যারা পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসে আসেন৷ তারপরও এটার প্রতি প্রচণ্ড রকমের আগ্রহ থাকে সবার৷
তিনি বলেন, আমি এমনও অভিযোগ শুনেছি মনে কিছু নিয়েন না। অনেকে সরকারি উকিল হয়েও প্রতিপক্ষ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন। এরকম কিছু উদাহরণ আছে, তবে সবাই না। অনেকেই আবার ভালো প্রাক্টিস করছেন।
তিনি বলেন, আমি এটাও শুনতাম সব সময় যে আমাদের বিচারালয়ে সবচেয়ে বড় যে সংস্কার ও আকাঙ্ক্ষা তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে কেরিয়ার প্রসিকিউশন সার্ভিস থাকতে হবে। এটা আমরা অনেক বছর ধরে শোনেছি। এমন কি আমরা ২০০৮ সালে দেখেছি কেরিয়ার প্রসিকিউশন সার্ভিস অধ্যাদেশ হয়েছিল।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা বুঝার চেষ্টা করলাম ২০০৮ সালে কেন এটা টিকলো না? তখন আমার কাছে মনে হয়েছে ওইটা একটু বেশি অ্যাম্বিসাস ছিলো। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বা একটি রাজনৈতিক দলের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ লাগে। আমাদের মতো দেশে চট করে বলবো রুলিং রাজনৈতিক দলের যোগাযোগ শূন্য করে দেবো। আর তারা সেটা গ্রহণ করবে এটা অবাস্তব। আমরা যদি ইনক্রিমেন্টাল রিফর্ম করি ধাপে ধাপে সেটা ভালো হয়৷
তিনি বলেন, এজন্য প্রথমে ভেবেছি শুরুটা হোক। আমাদের যে রাজনৈতিক সরকার আছে তারাতো অবাধ দুর্নীতি হোক, এটা সবাই চায় সেটা আমি বিশ্বাস করি না। তবে তারা চায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ তাদের থাক। কিছুটা সেবা মানুষ পাক। ভালো রাজনৈতিক দলগুলোর এ ধরনের মনোবৃত্তি থাকে। এ দৃষ্টিকোন থেকে আমরা এখানে দুটি পথ রেখেছি। একটা হচ্ছে কেরিয়ার প্রসিকিউশন সার্ভিসে ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে। সেখানে বড় নিশ্চয়তা থাকতে হবে যে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। সব কিছু কেরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আসলে তারা সেটা রাজি হবে না।
আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের যে কোনো আইন করার ক্ষেত্রে সব সময় একটা আশঙ্কা থাকে। আইন করাতো আসলে খুব কঠিন কাজ না। এটা সত্যি যে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে আইন হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের এখানে যারা স্টেকহোল্ডাররা আছেন যদি তাদের আনা যায় তাহলে সংসদ সদস্যদের যে মান ছিলো তাদের থেকে অনেক ভালো হবে বলে আমার ধারণা। আমাদের যেসব অধ্যাদেশ হয় সেটা সংসদীয় আইন থেকে তত্ত্বাবোধায়ক সরকারের আমলে যে অধ্যাদেশগুলো হয় সেটা অনেক ভালো হয়।