কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. আছমত আলী (৩৬) শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও জীবনের লড়াইয়ে এক অদম্য উদাহরণ। জন্ম থেকেই দুটি পা অচল। টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাত্র চার বছর বয়সে স্বাভাবিক চলাফেরার ক্ষমতা হারান তিনি। কিন্তু জীবন থেমে থাকেনি। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হলেও আছমত আলী নিজের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ইচ্ছাকে অটুট রেখেছেন।
শিক্ষাজীবন অষ্টম শ্রেণিতে থেমে গেলেও, নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন “প্রতিবন্ধী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ”। ইটনা বড় বাজারের রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে দরজা, জানালা, গ্ৰিল, কেচি গেট, নৌকা রিফারিং এবং গাড়ির চাকা মেরামতের মতো কাজ করেন তিনি। গত ২৩-২৪ বছর ধরে নিজের উপার্জনে তিনি দশ সদস্যের পরিবার চালাচ্ছেন।
আছমত আলী জানান, "শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে কোথাও কাজের সুযোগ হয়নি। বাধ্য হয়ে নিজের উদ্যোগে এই কাজ শুরু করি। প্রতিদিন সকালে কাজে আসি, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরি। এই কাজের আয় আর প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে সংসার চালাই। তবে নিজের একটা দোকান থাকলে আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারতাম।"
স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে ফুটপাতে কাজ করার অনুমতি পেলেও এখনও তিনি স্বপ্ন দেখেন একটি স্থায়ী দোকান গড়ে তোলার। ইটনা বড় বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি সোহরাব উদ্দিন ঠাকুর বলেন, "আছমত আলী আমাদের সমাজের জন্য বোঝা নয়। তিনি নিজের কর্মদক্ষতায় পরিবারের চাকা সচল রেখেছেন। তার এমন আত্মপ্রত্যয় আমাদের অনুপ্রাণিত করে।"
ইটনা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, "আছমত আলীর মতো অদম্য মানুষরা সমাজের জন্য এক বড় উদাহরণ। আমরা তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দিচ্ছি এবং বরাদ্দ পেলে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থাও করব।"
আছমত আলী বলেন, "আমি সমাজের চোখে বোঝা হয়ে বাঁচতে চাই না। আমি আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজের পরিচয়ে বাঁচতে চাই।" তার সংগ্রামী জীবন আমাদের শেখায়, প্রতিকূলতাকে জয় করেই স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে হয়।
আ. দৈ. /কাশেম /আরমান