ছবিতে- -প্রশাসকের চেয়ারে বসা চতুর্থ শ্রনির কর্মচারী পাম্প অপারেটর মনির হোসেন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক ও কর্মচারীদের ৩ গ্রুপের নেতারা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে শক্তি প্রদর্শন শুরু করেছেন। এই ৩ গ্রুপের শক্তি প্রদর্শন , মিছিল, গ্রুপিং ও দল বেধে মহড়া দেওয়ার ঘটনায় নগর ভবনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।৩ গ্রুপের দফায় দফায় সোডাউন, প্রভাব বিস্তার এবং কর্মকর্তাদের দপ্তরের সামনে গিয়ে হৈ চৈ’য়ের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। কারণ আগে নগর ভবনে দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। পুনরায় নগর ভবনে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন অনেকে।
অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় সমর্থিত কর্মচারীদের একাধিক গ্রুপের সংঘর্ষ বন্ধ করা এবং কর্মীদের নিয়ন্ত্রণের কোন উদ্যোগ নেই। যারফলে এসব বিষয় নিয়ে সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কারণ এই ৩ গ্রুপের নেতারা নিজেদেরকে বিএনপি এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের অন্তভুক্ত প্রচার করছেন। বাস্ততে তাদেরকে পাত্তা দিচ্ছে বিএনপি কিংবা শ্রমিক দলের কেন্দ্রিয় এবং মহানগর নেতারা। কেন্দ্রিয় নেতারা চুপে চুপে খেলা দেখছেন। তাদের লাগাম টেনে ধরবে কে ?
এদিকে আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ডিএসসিসিতে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক ও কর্মচারীদের মধ্যে সিনিয়রদের নিয়ে আরেকটি গ্রুপ এসএম মোশাররফ হোসেন মিলন এবং মোস্তফা নুরুদ্দিন সোহেলের নেতৃত্বে নগর ভবনে বড় ধরনের সোডাউন করেছেন। তারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা- ৩২৫৬ নম্বরের ব্যানারে নগর ভবনে মিছিল করেন।
আগে এই নম্বরের ব্যানারটির দাবিদার ছিল আরিফ চৌধুরি ও বেলায়েত হোসেন বাবুর নেতৃত্বাধীন গ্রুটি। আজ মোশারফ হোসেন মিলনের গ্রুপের লোকজন মিছিলকালে আরিফ চৌধুরি বিরুদ্ধে নানা ম্লোগান দেন।
আজ বিকেলে,‘আজকের দৈনিক পত্রিকারকে’ মোশারফ হোসেন মিলন বলেন,‘ তারা বাধ্য হয়েছেন নগর ভবনে কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাশি জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারীদের শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনার জন্য আজ নগর ভবনে মিছিল করেছেন। এই সংগঠনের তিনি এক সময় নেতৃত্ব দিয়েছেন। আগামীতেও তিনি সংগঠনের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে চান। ফলে আজ সিনিয়রদের নিয়ে মিছিল করেছেন। নগর ভবনে অনেক হট্টগোল এবং বিশৃ্খংলতার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এই পরিস্থিতির অবসান প্রয়োজন।
নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসসিসির সাধারণ কর্মচারীরা আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমানে নগর ভবনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক ও কর্মচারীদের ৩ গ্রুপের নেতারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে পরস্পর বিরোধী কর্মসূচি শ্রুমক দলের কেন্দ্রিয় নেতারা। যার ফরে নগর ভবনে চরম অস্থিরতা, উশৃঙ্খলতা, ওই কর্মচারীদের মারমুখি আচরণ, এমনকি দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের হুমকি প্রদানের ঘটনাও বাড়ছে। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেশ কিছু স্বঘোষিত নেতার আচরণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তারা বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দপ্তরের সামনে গিয়ে নিজেদের ক্ষমতা দেখাচ্ছেন।
তারা আরো বলেন, বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন তাদের অভিভাবক, আগামীতে ডিএসসিসির মেয়রের দায়িত্ব নিবেন ইশরাক হোসেন। ফলে তাদের ভয়ের কোন কারণ নেই। কিন্তু ইশরাক হোসেন কর্মচারীদের ৩ গ্রপের মধ্যে শুধুমাত্র নেতা আরিফ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন এই গ্রুপটি শেল্টার দিচ্ছেন। ফলে এই গ্রুপটি ব্যাপরোয়া হয়ে উঠেছে।
গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনে ৬৫ তালা ঝুঁলিয়ে দিয়ে টানা ৪৩ দিন নাগরিক সেবা বন্ধ করে রাখা হয়।তাদের বেপরোয়া আচরণ মেনে নেয়ার মতো না।
কারণ “গত বছরের ছাত্র জনতার গনআন্দোলনে ফ্যাস্টি শেখ হাসিনার সরকার ও মেয়র তাপসের পতনের পর জুলাই- আগস্টের আন্দোলনের স্মৃতীর প্রতি সম্মান দেখাতে বিভিন্ন ছবি সম্বলিত টানানো ব্যানার নগর ভবন থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নগর ভবনে ব্যাংক ফ্লোরে অভ্যর্থণা কক্ষের পাশে স্থাপিত ব্যানারটি উদ্ধোধন করেছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।”
ছবিতে-- বামপাশে ফুলের টপের ওপরে, ডান পাশের েএই ছবিটি ছিল, কিন্তু ডিএসসিসির কর্মচারীরা ছবিটি সরিয়ে ফেলেছে।
শুধু তাই নয়, আরিফ চৌধুরীর গ্রুপের স্বঘোষিত নেতা পাম্প অপারেটর পদের কর্মচারী মো. মনির হোসেন নগর ভবনে প্রশাসকের দপ্তরে গিয়ে প্রশাসক/মেয়রের জন্য নির্ধারিত চেয়ারে বসেন এবং অপরজনকে দিয়ে ‘মোবাইলে ছবি তোলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে’ পোস্ট দেন। তিনি নিজের ফেসবুকে ছবির ওপরে লেখেন- “হাসবুনাল্লাহ ওয়া নি’মাল ওয়াকিল, অর্থাৎ আমার জন্য আমার আল্লাহ’ই যথেষ্ট’। অথচ এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ
আচরণের জন্য তাকে আজ পর্যন্ত কেউ কৈফিয়ত পর্যন্ত তলব করেননি। বেয়াদবি তো প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসসিসির সাধারণ কর্মচারীরা আক্ষেপ করে বলেন, বিএনপি এখনো ক্ষমতায় আসেনি, তাদের দলীয় মেয়র দায়িত্বে নেই, তাতেই জাতীয়তাবাদী শ্রমিক ও কর্মচারীদের এতো দাপট। তারা ডিএসসিসির বেতন ভুক্ত কর্মচারী সেটা মনে করে না। তারা মনে করেন, ডিএসসিসির মালিক। তাদের ইচ্ছো এবং নির্দেশনায় সব কিছু পরিচালিত হবে।
আরো অভিযোগ রয়েছে, টানা ৪৩ দিন নগর ভবনের তালা ঝুঁলিয়ে রাখার অভিযোগে বিএনপির হাইকমান্ড কিংবা ডিএসসিসির প্রশাসক সিসিটিভি’র ফুটেজ দেখে গুরুতর অপরাধের সাথে জড়িতদের কারণ দশানেরা উদ্যোগ পর্যন্ত গ্রহণ করেননি।
সূত্র মতে, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন অনুসারি গত ২৯ মে দুপুর সাড়ে ১২ টায় নগর ভবনে আধিপত্য বজায় রাখতে জাতীয়তাবাদী কর্মচারী দলের আরিফ চৌধুরী গ্রুপের লোকজন অপর গ্রুপ আরিফুজ্জামান প্রিন্সসহ তার লোকজনের ওপর হামলা করেন। তারা নগর ভবনে ভাংচুর করেন এবং আরিফুজ্জামান প্রিন্সসহ ৫/৭ জনকে মারাত্নকভাবে আহত করা হয়।
এরপর ২৪ জুন সকাল ৯টায় নগর ভবনে আরিফ চৌধুরী ও তার অনুসারীরা হট্টগোল শুরু করে। একপর্যায়ে শ্রমিক দলের আরিফুজ্জামান প্রিন্স গ্রুপের লোকজন আরিফ চৌধুরী গ্রুপের সাথে পুনরায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
কিন্তু অদ্যাবদি বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থিত এই দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ,মুখোমুখি অবস্থান এবং সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সাথে জড়িতদের ডেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। অথচ এই দুই গ্রুপের অনেকেই ছাত্র জীবন থেকে ছাত্রদলের রাজনীতে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন।
সূত্র মতে, মেয়র পদে শপথের আন্দোলনকালে গত ২৩ মে সকালে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘শপথ কেবল একটা ফরমালিটি। জনতার মেয়র হিসাবে আমার দায়িত্ব বর্তায় আগামী কোরবানির ঈদের আগে যাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকে।’ ফলে কর্মচারীরাও আশকারা পেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে পরাজিত হন বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তাদের এতা ক্ষতা ওই নগর ভবনে তালা মারতে আসেনি। দুপুরেই কেনো ভোট কেন্দ্র থেকে বাসায় চলে যান।
আ. দৈ./কাশেম