ছাত্র জনতার গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রী,এমপি, নেতা, বিচাপতি,আমলা এবং ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় রাজউকের প্লট পেয়েছেন। কিন্ত্র এবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ১৫ গাড়িচালকের নামেও রাজউকের প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের রাজউককে নির্দেশ দিয়েছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মতো কেরানীগঞ্জে রাজউকের ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে অনুগতদের মূল্যবান প্লট দিয়েছে। সরকারি চাকরি, জনসেবা ও সমজাতীয় খাতে জাতীয়ভাবে ‘অসামান্য অবদানের’ নামে ঝিলমিলে দেওয়া প্লট সংখ্যা শতাধিক।
বিশেষ বিবেচনায় রাজউকের ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের তিন ও পাঁচ কাঠা করে প্লট শেখ হাসিনার দপ্তরের ১৫ চালকের নামে বরাদ্দ দিতে রাজউকে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। অথচ রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে চার শ্রেণিতে ঝিলমিল প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের কথা ছিল। এসব জালিয়াতি উদঘাটনে গত বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যরা অভিযান চালিয়েছেন। দুদকের অভিযানে এমন তথ্য বেরিয়ে আসে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুদকের জনসংযোগ দপ্তর অভিযানের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে। তবে গাড়িচালকরা প্লট পেয়েছিলেন কি না- তা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি এনফোর্সমেন্ট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দুদক কর্মকর্তারা বলেন, সৌভাগ্যবান ১৫ গাড়িচালক হলেন- ভিভিআইপি গাড়িচালক মো. সাইফুল ইসলাম, মো. সফিকুল ইসলাম, ভিডিআইপি অ্যাম্বুলেন্সচালক মো. নূরুল ইসলাম লিটন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের গাড়িচালক মো. রাজন মাদবর, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের গাড়িচালক মো. মাহবুব হোসেন, একান্ত সচিব-১-এর গাড়িচালক মো. শাহীন, একান্ত সচিব-২-এর গাড়িচালক মো. মতিউর রহমান, সহকারী একান্ত সচিব-১-এর গাড়িচালক মো. নূর হোসেন বেপারী, সহকারী একান্ত সচিব-২-এর গাড়িচালক মো. বোরহান উদ্দিন, বিশেষ সহকারীর (মশিউর রহমান হুমায়ুন) গাড়িচালক মো. বেলাল হোসেন, চিফ ফটোগ্রাফারের গাড়িচালক মো. মিজানুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-১-এর গাড়িচালক মো. বাচ্চু হাওলাদার, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১-এর শাখার নথিপত্র পরিবহনের দায়িত্বে নিয়োজিত গাড়িচালক মো. নুরুল আলম, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর (ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া) গাড়িচালক মো. নুরনবী (ইমন) এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২-এর গাড়িচালক মো. শাহীন।
এক কর্মকর্তা বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ’ ওই ১৫ গাড়িচালককে প্লট দিতে ২০২৪ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি রাজউক চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে কর্মরত ১৫ জন গাড়িচালক কর্তৃক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী রাজউকের আওতাধীন ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে প্রতি দুজন আবেদনকারীর অনুকূলে ১টি করে ৩ কাঠার প্লট এবং ৩ জন আবেদনকারীর অনুকূলে ১টি ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দ প্রদানের বিষয়ে অনুমতি প্রদান করেছেন।’
দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘এনফোর্সমেন্ট টিম রাজউক কর্তৃক পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে। ২০০৯ সালে পূর্বাঞ্চলে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নীতিমালার আলোকে ৯৩৪ প্লট বরাদ্দ করা হয় মর্মে টিম জানতে পারে। প্রাথমিক পর্যালোচনায় ওই বরাদ্দ নীতিমালার ১৩/এ ধারা অনুযায়ী বর্ণিত প্লটসমূহ বরাদ্দ সংক্রান্ত নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ না করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক টিম।
এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণান্তে এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রেরণ করবে।’ গাড়িচালকরা প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন কি না জানতে রাজউকের জনসংযোগ কর্মকর্তা শীলাব্রত কর্মকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ বিষয়ে তিনি পরিচালক (এস্টেট-১) এর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ওয়েবসাইটে তার নাম দেওয়া আছে বলেও জানান। পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-১) বি. এম. এহছানুল মামুনকে একাধিকবার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
আ. দৈ./কাশেম