এই ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুরে তোলা দিয়াবাড়ি কোরবানির পশুর হাটের
ঢাকা উত্তর সিটির সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণ করলেও কোরবানির হাটের প্রচুর বর্জ্য এখনো পড়ে রয়েছে। রাজধানীর উত্তরায় দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলে নিচে বিশাল এলাকা অনেক বড় কোরবানির পশুর হাট। এই হাটের আর্বজনা এখনো অপসারণ শুরুই হয়নি বলে জানা যায়। তবে ডিএনসিসির অন্যান্য এলাকায় কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাটের আর্বজনা অপসারণ করার খবর পাওয়া গেছে।
উত্তরায় দিয়াবাড়ি হাটের সংলগ্ন প্রধান সড়কের ফুটপাতে আর্বজনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তবে ডিএনসিসি’র সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শক ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদেরকে প্রচন্ড রোধের মধ্যেও ওই হাটের চারদিকের সড়ক ও ফুটপাতের আর্বজনা পরিস্কার করতে দেখা যায়। কিন্তু কোরবানির হাটের ভেতরের আর্বজনা পরিস্তারের কোন উদ্যোগ নেই বললেই চলে। কারণ হাটের ভেতরের আর্বজনা অপসারণের জন্য দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকদের নগদ টাকা না দেওয়ায় কাজ বন্ধ রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শনকালে ডিএনসিসির উত্তরায় দিয়াবাড়ি এলাকার বিশাল কোরবানির পশুর হাটের আর্বজনা সড়কে ও ফুটপাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে তাদেরকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রধান সড়ক,গলিপথ এবং ফুটপাত দ্রুত পরিস্কারের চেষ্টা করতে দেখা যায়। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ডিএনসিসির মাঠে কর্মরত সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এবং পরিচ্চন্ন কর্মীদের সাথে কথা বলতে চাইলে,তারা কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তারা শুধু বলেন, কোন তথ্য জানতে চাইলে বিভাগীয় প্রধান বড় স্যারের সাথে যোগাযোগ করুন।
এই ছবিটি গত ১০ জুনের (মঙ্গলবার) ডিএনসিসির কর্মকর্তা রাস্তার আর্বজানা অপসারণের কাজ তদারকি করছেন
এদিকে নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএনসিসির নগর ভবনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এবছর উত্তরায় দিয়াবাড়ি কোরবানির হাটটি ১০ কোটি ১ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন ‘এস এম ব্রাদার্সের’ মালিক শমরসর আলী। ইজারাদার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ও প্রভাবশালী। ইজারাদার এই হাটের বাঁশ, খুঁটিসহ তার মালামাল এখনো ফেলে রেখেছেন। যারফলে ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মীরা হাটের ভেতরে পেলোডারসহ ময়লা টানার গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে পারছেন না।
ডিএনসিসির ইতিহাসে এবারই প্রথম রহস্যজনক কারণে কোরবানি হাটের আর্বজনা দ্রুত পরিস্কারের জন্য এখনো বরাদ্দকৃত টাকা ছাড় করা হচ্ছে না। অথীতে ঈদের আগেই হাটরে আর্বজনা দ্রুত অপসারণের জন্য থোক বরােদ্দর চেয়ে নথি উপস্থপন করে প্রয়োজনীয় অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়। খরচ করার পর পুরো অর্থ এবং বিল ভাইচার সমন্বয় করা হয়ে থাকে। এবার ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে ব্যাক ও অফিস বন্ধ থাকার বিষয়টি জানা সত্বেও কেনো আগে অর্থ ছাড় করানোর উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রতিবছর কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণের জন্য যেভাবে বরাদ্দকৃত অর্থ ঈদের আগেই ছাড় করিয়ে থাকেন। ঠিক একই ভাবে কোরবানির হাটের আর্বজনা দ্রুত অপসারণের জন্যও পৃথক নথিতে বরাদ্দকৃত অর্থ দ্রুত ছাড় করিয়ে থাকেন। কারণ হাটের আির্বজনা দ্রুত অপসারণের জন্য হাটের ইজারার সিডিউলেই মোট মূল্যেও ওপর শতকরা ১০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি উল্লেখ করা থাকে। ফলে হাটের আর্বজনা দ্রুত অপসারণের অর্থের বরাদ্দ পাবার বিষয়ে কারো করুনা প্রয়োজন হয় না।
এ বছর কেনো আগের রেওয়াজ অনুসরণ না করে, কোরবানির হাটের আর্বজনা দ্রুত পরিস্কারের কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হলো। এছাড়া ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতীতের সুনাম ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি প্রশাসকের পক্ষ থেকে কোরবানির বর্জ্যসহ সব আব্যজনা দ্রুত অপসারণ সম্পন্ন করার ঘোষণাকে আজ হাস্য কর বিষয়ে পরিনত করা হয়েছে। এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। অনেকে আবার এটাকে সাপোটাস বলেও মনে করেন।
কর্মকর্তারা আক্ষেপ করে বলেন, পচন্ড গরম এবং থেমে থেমে বৃষ্টির মাঝে কোরবানির হাটের আর্ব্যজনা অপসারণে নিয়োজিত দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে বাইরের লেবাররা (শ্রমিকরা) কখনো বাকিতে কাজ করতে চায় না। এরপর উত্তরায় দিয়াবাড়ি কোরবানির হাট সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৩০০ শ্রমিক কাজ করার পর এখনো মজুরি পায়নি। কবে নাগাদ তারা মজুরি পাবেন সেটাও অনিশ্চত। ওই হাটের আর্ব্যজনা আগামী ১৫/২০ দিনে অপসারণ সম্ভব নয়। কর্মপক্ষে ৫/৬ শত শ্রমিক এবং শতাধিক ট্রাকের টিপ প্রয়োজন বলে ধারণা করা হচ্ছে।এছাড়া ডিএনসিসির অন্যান্য কোরবানির হাটের আর্ব্যজনা ইতোমধ্যে অপসারণ করার খবর পাওয়া গেছে।
এসব বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এ বি এম সামসুল আলম (ই), পিএসসি, বিএন এই প্রতিনিধিকে বলেন, ওই হাটের আর্বজনা দ্রুত অপসারণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আ. দৈ. /কাশেম