এবারই প্রথম কোরবানির বর্জ্য অপসারণ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ করতে গিয়ে নতুন করে বির্তকে জড়ালেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। কারণ কোরবানির বর্জ্য অপসারণের বিষয়টি চলমান কার্যক্রম।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে অতীতে মেয়র কিংবা প্রশাসক কোরবানির বর্জ্য অপসারণ নিয়ে কখনো গণমাধ্যমের প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্চ করেনি। তারা নিজেদের ভুল ত্রুটি স্বীকার করেছেন এবং গণমাধ্যমের সহযোগতা চেয়েছেন এবং গণমাধ্যমের সহযোগিতা নিয়েছেন। এবারই প্রথম সিন্ডিকেট নির্ভর প্রশাসক অতিমাত্রায় কৃতিত্ব জাহির করতে গিয়ে নানা সমালোয় জড়ালেন।
সূত্র মতে, ডিএনসিসির এলাকায় ঈদের দিন শনিবার রাতেই শতভাগ বর্জ্য অপসারণের মিথ্যে দাবি করে অতিমাত্রায় বাহবা নিতে গিয়ে আজ গণমাধ্যমের মুখোমুখি এখন প্রশাসক। রোববার সকালেই গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদনের তথ্যকে অস্বীকার করা অর্থই হচ্ছে শতভাগ বর্জ্য অপসারণের মিথ্যে দাবি করে অহেতুক সংঘাতে জড়ানো।
এদিকে আজ রোববার (৮ জুন) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে, গতকাল শনিবার রাতের মধ্যেই তাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কোরবানির বর্জ্য ল্যান্ডফিলে (স্থায়ী বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র) নিতে রাস্তায় ও এসটিএসে (সেকেন্ডারি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র) জমা করে রেখে ছিলেন। আজ সকালে জমা রাখা এসব বর্জ্য ল্যান্ডফিলে নেওয়ার আগেই সেসব ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বর্জ্য শতভাগ অপসারণ হয়নি বলে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
আজ রোববার বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ–সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, রাতে ডিএনসিসি এলাকার শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে, জানানোর পরও সরেজমিন পরিদর্শনে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ওইসব সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
রোববার ডিএনসিসির জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে পুনরায় উল্লেখ করা হয়েছে, গতকাল শনিবার রাত ১০ টা ৩৫ মিনিটের বিজ্ঞপ্তিতে হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে কোরবানির ঈদের প্রথম দিনের শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছিল। তবে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেও নগরীর অনেক স্থানে পশু কোরবানি করা হয়েছে। পশু কোরবানির স্থান থেকে নতুনভাবে উৎপন্ন বর্জ্য ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা রাতের মধ্যেই সরিয়ে এনে ল্যান্ডফিলে স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে রাস্তায় ও এসটিএসে জমা রাখেন।
ডিএনসিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকালে এসটিএস এবং রাস্তা থেকে বর্জ্য অপসারণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাওয়ার পূর্বেই কিছু স্থানের বর্জ্যের ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
আরো দাবি করেছেন, বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়নি। আজ রোববার এবং আগামীকাল সোমবারও বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পবিত্র ঈদুল আজহায় নগরবাসী ঈদের তৃতীয় দিন পর্যন্ত পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। যার কারণে প্রতিনিয়ত নগরীতে বর্জ্য উৎপন্ন হয়। একই সঙ্গে চলতে থাকে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। ডিএনসিসির ১০ হাজারের বেশি কর্মী এ কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন এবং বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
ঘোষিত সময়ের পূর্বেই ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকা থেকে সম্পূর্ণ বর্জ্য অপসারণ করে নগরবাসীকে একটি পরিচ্ছন্ন সুন্দর শহর উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, গতকাল শনিবার রাত ১০ টা ৩৫ মিনিটের বিজ্ঞপ্তিতে হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে শতভাগ বর্জ্য অপসারণের দাবি প্রশাসক কি ভাবে করেন। কারণ রাত ১০ ৩৫ মিনিটের পরে নগরীতে পশু কোরবানি হয়েছে। করে কারা কোরবানি করেছেন, তার তথ্য তিনি জানাতে পারেননি।
প্রশাসক অররো অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে বলেন, শনিবার রাতের মধ্যেই তাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কোরবানির বর্জ্য ল্যান্ডফিলে (স্থায়ী বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র) নিতে রাস্তায় ও এসটিএসে (সেকেন্ডারি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র) জমা করে রেখেছিলেন। এসটিএসে জমা রাখলে সেটা কিভাবে শতভাগ অপসারণের দাবি তিনি করেন। শতভাগ অপসারণ অর্থ হচ্ছে নগরীর বাইরে নির্ধারিত ল্যান্ডফিল্ডে নেয়ার বিষয়টিকেই বুঝানো হয়।
প্রশাসক আবার বলেন, এসটিএসে জমা করা ওইসব বর্জ্য সকালে ল্যান্ডফিলে নেওয়ার আগেই সেসব ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বর্জ্য শতভাগ অপসারণ হয়নি বলে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এই ধরনের দ্বিমুখি বক্তব্য প্রশাসক আজ গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে গিয়ে আজ মুখোমখি হয়েছেন ।
অথচ ঢাকার দুই সিটির শতভাগ বর্জ্য অপসারণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত সরেজমিন ঘরে ও খোঁজ নিয়ে বিভিন্নজাতীয় দৈনিক পত্রিকায় অনলাইন নিউজপোটালে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। দুই সিটিতেই বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির বর্জ্য রাস্তায় জমে রয়েছে। এসব বর্জ্য পচে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। শুধু তাইনয় আজ রোববার দুপুরে অনলাইনে ‘রাতে শতভাগ বর্জ্য অপসারণের দাবি, সকালের ঢাকায় ভিন্ন চিত্র’ শিরোনামেও বিভিন্ন গণমাধ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আ. দৈ. /কাশেম