ছবিটি , ঢাকা উত্তর সিটির শিয়াল বাড়ি এলাকায় এসটিএস থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণেকালের
প্রতি বছরের মতো এবারো রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঈদের দ্বিতীয় দিনেও অনেক পশু কোরবানি চলছে। ঈদের দিন ও পরবর্তী আরো দুই দিন অর্থাৎ ৯ জুন পর্যন্ত কোরবানি করাহবে। এদিকে নগরবাসী সেবায় নিয়োজিত ঢাকার দুই সিটিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভাগের কর্মকর্তা ও পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কখনো প্রচন্ড রোধ আবার কথনো থেমে থেমে বৃষ্টির মাঝেও দ্রুত এসব বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত রয়েছেন।
বলতে গেলে , ঈদের দিন কোরবাণির পর নগরবাসী বেশ ঈদ আনস্দ উপভোগ করলেও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সেই আনন্দ উপভোগ থেকে অনেকটাই বঞ্চিত থকেন। পরিবার পরিজন ফেলে রেখে আমাদের নরীর এই বিষাক্ত কোরবানির বর্জ্য দ্রুত পরিস্কারে নিয়োজিত এই কর্মকর্তা ,কর্মচারী ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জানাতে হয়, স্যালুট । কিন্তু আমাদের অনেকই তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমকে সম্মান না জানিয়ে শুধু দোষ ত্রুটি বেশি খোঁজতে থাকি।
ছবিটি বাড্ডা এলাকায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণের পর ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল শনিবার (৭ জনি) রাজধানীসহ সারাদেশে অনেক পশু কোরবানি হয়েছে। কিন্তু কসাই ও মাংস কাটার শ্রমিকের লোকের অভাবে অনেক ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে কোরবানি করেন। ফলে রোববার (৮ জুন) ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলকায় অনেক পশু কোরবানি হচ্ছে।
তবে ঢাকার দুই সিটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গতকাল শনিবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঈদের দিনের কোরবানির পশুর বর্জ্য রাতের মধ্যেই কেই ৮৫ ভাগ আবার কেউ শত ভাগ অপসারণ করা হয়েছে। এদিকে নগরীর কয়েকটি এলাকায় আগের দিনের কোরবানির বর্জ্য রাস্তায় পড়ে থাকার বিষয়টি নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।
এই প্রতিবেদনের দুই প্রশাসকের কিছু সমালোচনা করা হয়েছে। কারণ তারা অতিরিক্ত বাহবা নিতে গিয়ে অযাচিত বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারের চেষ্টা করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে বর্জ্য অপসারণের চলমান কার্যক্রম টুকু প্রকাশ করলেই যথেষ্ট ছিল। ঢাকা দক্ষিণ দাবি করেছে কোরবানির বর্জ্য শতভাগ অপসারণ হয়েছে,আর ঢাকা উত্তর দাবি করেছে ৮৫ শতাংশ কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।
সূত্র মতে, রাজধানীতে আগামীকাল সোমবার (৯ জুন) পর্যন্ত নগরীতে কোরবানি হবার কথা রয়েছে। ফলে ঢাকার দুই সিটিতেই পরিচ্ছন্নকর্মীরা বর্জ্য অপসারণের কাজ করবেন। আজ রোববার (৮ জুন) সকালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফজরের নামাজ শেষ হওয়ার অল্প পর থেকেই কোরবানির প্রস্তুতি নেন অনেকে। ঈদের আগেই পশু কিনে রেখে আজ তারা কোরবানি দিচ্ছেন।
ছবিটি, মহাখালী রাওয়া প্লাজা এলাকায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণের পর ব্রালিচিং পাউডার ছিটানো হচ্ছে..
মহাখালীর বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকার বেশিরভাগ মানুষ ঈদের দিন কোরবানি দেন। এতে কসাইদের অনেক ব্যস্ততা থাকে। দেখা দেয় কসাই সংকট। তাই আমরা আগে থেকেই ঠিক করেছি দ্বিতীয় দিনে কোরবানি করবো। আজ খুব নিরিবিলি পরিবেশে কোরবানি দিতে পারছি। ফজরের নামাজের পরে হুজুর এসে গরু জবাই দিয়ে গেছেন। কসাইরা মাংস বানানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আশা করছি সকল ১০টার মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারবো।
তিনি বলেন, ঈদের দিন কোরবানি দিলে যা হবে ঈদের পরের দিন কোরবানি দিলেও তাই হবে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী তিনদিন কোরবানি দেওয়া যায়। কোরবানি দেওয়া প্রধান উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই কোরবানি দিচ্ছি, এখন কবুল করার মালিক তিনি নিজেই।
মিরপুরের করিম মিয়া বলেন, ইচ্ছা ছিল ঈদের দিনই গরু কোরবানি দেবো। কিন্তু কসাই না পাওয়ায় আজ কোরবানি দিচ্ছি। শুধু আমরা না, অনেকেই কসাই সংকটে আজ কোরবানি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ঈদের দিন কোরবানি দিতে পারিনি, তা নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই। তবে অন্যদের কোরবানি দেওয়া দেখে বাচ্চাদের মন একটু খারাপ হয়েছিল। এখন ওরা আবার হাসি খুশি। বাচ্চাদের খুশিই তো আমাদের খুশি। আর কোরবানি দেওয়া হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়। কার দোয়া, কার কোরবানি কবুল হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ কেউ জানে না।
সেগুনবাগিচার মো. আবুল কালাম বলেন, ঈদের দিন এবং পরের দুদিন পশু কোরবানি দেওয়া যায়। কোরবানি দেওয়া জন্য এই তিনদিনই সমান। কোনদিন সওয়াব বেশি কম হওয়ায় সুযোগ নেই। গতকাল যারা কোরবানি দিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্য ছিলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, আজ আমরা যারা কোরবানি দিচ্ছি তাদের উদ্দেশ্যও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তিনি বলেন, কোরবানির মাংস তিনভাগ করতে হয়। আমরা ধর্মীয় বিধান মেনে মাংস তিনভাগ করে, যার যা অংশ বুঝিয়ে দেবো। এখন কবুল করার মালিক আল্লাহ।
আজ ঈদের দিনের কোরবানির বর্জ্য রাতের মধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। আজ ও আগামীকাল সিটি করপোরেশনের বর্জ্য অপসারণ কাজ চলমান থাকবে।
এদিকে গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়েছে, ঈদের দিন ৭৫টি ওয়ার্ডে এক লাখ ৩৩ হাজার ৩১৭টি পশু কোরবানি করা হয়। কোরবানি শেষ করার পর নাগরিক পর্যায় থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করে প্রতিটি ওয়ার্ডের সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে ডাম ট্রাকের মাধ্যমে মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে চূড়ান্তভাবে ডাম্প করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৩০ হাজার টন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ১২ হাজার টন বর্জ্য মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে ডাম্পিং করা হয়েছে।
ছবিটি , হাজারীবাগ মনেশ্বর সড়কের মনেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের
কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ হাজারের অধিক জনবল মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছে। ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ৪৪টি কম্পেক্টর, ৩৯টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার, ১৬টি পে-লোডারসহ বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে ৭৫টি ওয়ার্ডে মোট ২০৭৯টি যানবাহন নিয়োজিত রয়েছে।
অপরদিকে গতকাল শনিবার (৭ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, ঈদুল আজহার প্রথম দিন সন্ধ্যার মধ্যে ৮৫ শতাংশ কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে । অথচ ভোরে ঢাকা উত্তর সিটির বেশ কয়টি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় রাস্তায় কোরবানির বর্জ্যের স্তূপ দেখা যায়।
প্রশাসক এজাজ বলেন, ‘কোনো ওয়ার্ডেই শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ময়লা পড়ে নেই।
প্রধান সড়কগুলোর পাশে সব ময়লা আমরা পরিষ্কার করেছি।’ তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা সাত হাজার ৮০০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করে ডাম্পিং করেছি। যা কোরবানি উপলক্ষে উৎপন্ন হওয়া বর্জ্যের ৮৫ শতাংশ। আগামী তিন দিন আমাদের বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম চলবে।
আ. দৈ./কাশেম