বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সারাদেশের সাধারণ জনগণের কাছে একটা আস্হার প্রতিক। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবাং সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অতীতের নেতৃত্ব দেশের মানুষের এই ভালোবাস অর্জিত হয়েছে। এবারও মানুষ অপেক্ষায় ছিল বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে বিগত দিনের মতো দেশের সারাধারণ মানুষের জন্য একটা ভালো সংবাদ আসবে।
কিন্ত এর আগেই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও শামসুজ্জামান দুদুসহ কতিপয় কেন্দ্রি , জেলা ও মহানগর পর্যায়ের নেতার সাম্পতিককালে অসৌজন্যমূলক ও ভারসাম্যহীন বক্তব্য, প্রতি হিংসামূলক কার্যক্রম, অতিমাত্রায় ক্ষমতার দাম্ভিকতা নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীসহ সাধারণ জনগণের মাঝেও নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যেই বিএনপিকে নিয়ে জনগণের মাঝে চরম হতাশা বাড়ছে।
কারণ টানা ১৬/১৭ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অপশাসনের শিকার বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা/ কর্মীসহ দেশের সাধারণ জনগণ। অবশেষে এদেশের ছাত্র জনতা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সমন্বিত গণআন্দোলনের ফলেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের সহাযোগিদের করুন পরিনতি হয়েছে। এটা ভুলে গেলে চলবে না।
বাংলাদেশের কৃষকের মাঠে সোনালী পাকা ধানের হাসি ভেসে উঠছে এবং ওই ধান কেটে গোলায় তোলার পর যেমন কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম স্বার্থক হয়। ঠিক তেমনই জনগণের ভালোবাসা এবং দেশপ্রেমকে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা/কর্মীদের সাথে সৌজন্যমলক আচরণের মাধ্যমে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের গ্রহণযোতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞজনরা। কারণ দেশের জনগণ আর প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখতে চায় না।
বিএনপির হাইকমান্ডের অ্যাকশন শুরু হয়েছেঃ
তবে বিলম্বে হলেও বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে দলীয় নেতাদের লাগাম টেনে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ আরো আগে নিলে বিএনপির অতীতের সুনাম আরো বাড়ত। কারণ বিএনপির মতো এতো বড় রাজনৈতিক দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা কতিপয় নেতার জন্য এই দলটির ভবিষ্যৎ আর নষ্ট করা যাবে না, এমনটা জনগণের প্রত্যাশা।
সূত্র মতে, তবে আশার আলো হচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার (৪ জুন) দিবাগত রাতে বিএনপির কেন্দ্রিয় দপ্তর থেকে দেওয়া এক চিঠিতে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও আরেক ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুকে সাম্প্রতিককালে অসংলগ্ন বক্তব্যের দায়ে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রিয় দপ্তরের ঠিটি এই দুই নেতার কাছে পৌঁছানো হয়েছে। বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে তাদের এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে গণমাধ্যমকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ও কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রুহুল কবির রিজভী নোটিশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বরকতউল্লা বুলু ও শামসুজ্জামানের (দুদু) সাম্প্রতিক দুটি বক্তব্য রাজনৈতিক ও সচেতন মহলে বেশ আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়।
গত ২০ মে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের উদ্যোগে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি গণতন্ত্র সুশাসন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শামসুজ্জামান দুদু আক্রমনাত্বক বক্তব্য দিয়েছেন।
কথিত ,‘ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিএনপি চলে’—হাসনাত আবদুল্লাহর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দম্ভ করে বলেছিলেন, ‘বিএনপি নেতারা যদি একত্রে প্রস্রাব করেন, তাহলে এই প্রস্রাবের তোড়ে হাসনাত আবদুল্লাহ ভেসে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়বা। এমন কোনো কথা বলবা না, যে কথার দাঁয়িত্ব নিতে পারবা না। বিএনপির সম্পর্কে যে অভিযোগ করছ, সেই অভিযোগের জবাবে বিএনপি যদি শুধু থুথু ফেলে, সেই থুথুর মধ্যে তোমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
এদিকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধকের বক্তব্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যন বরকতউল্লা বুলু বলেছিলেন, শহিদ জিয়ার উত্তরশুরি হচ্ছেন তারেক রহমান। তার নামটি উচ্চারণ করতে হলে অজু করবেন। তার এমন বক্তব্যের কারণে সামাজিকমাধ্যমে তোপের মুখে পড়েন বিএনপির এই নেতা বুলু। একপর্যায়ে সমালোচনার মুখে পাড় তিনি এ মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন।
এড়াও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন বরকতউল্লা বুলু। যা সামাজিক যোগোযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে । বরকতউল্লা বুলু একটি অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শুধু দুদু আর বুলুর লাগাম টানলেই হবে না, বিএনপির আরো কিছুর নেতার বক্তব্য ও আচরন দরের জনপ্রিয়াতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তাদের লাগামও টেনে ধরা প্রয়োজন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আ. দৈ.. / কাশেম