বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নজিরবিহীন হত্যাকান্ড ও মানবতা বিরোধী অপরাধে বিচার শুরু হয়েছে। গতবছর জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অভিযুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এই মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী মামুন।
আজ রোববার (১ জুন) জুলাই-আগস্ট জুড়ে সারাদেশে যে গণহত্যা হয় তাতে শেখ হাসিনাকে প্রধান নির্দেশদাতার দায় করে ট্রাইবুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। ট্রাইবুনাল থেকে বিচারিক কার্যক্রম বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়াও বেসরকারি টেলিভিশনগুলো সরাসরি লাইভ করছে।
আজ ট্রাইবুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যার নির্দেশনা, প্ররোচনা, উসকানিসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনসেহ ওই ৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়েছে। এরপর এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি চলছে।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে সারাদেশে যে গণহত্যা হয় তাতে শেখ হাসিনাকে প্রধান নির্দেশদাতা হিসেবে দায়ী করে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এরআগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় অন্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারান এই আন্দোলনে।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দাখিলের আগে রাজধানীর চাঁনখারপুলের ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) দাখিল করা হয়। এটি নিয়ে এখন পর্যন্ত দুটো অভিযোগ দখিল হলো।
এর আগে ১২ মে সকালে তদন্ত সংস্থা থেকে প্রসিকিশনের কাছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই মামলায় ৫টি অভিযোগে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। পরে ওইদিন দুপুরে ট্রাইব্যুনালে সংবাদ সম্মেলন করে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানান। শেখ হাসিনাকে ‘গুম ও আয়নাঘরের নিউক্লিয়াস’ বলে উল্লেখ করেছিলেন তাজুল ইসলাম।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও গণঅভ্যুত্থানের সময়কার আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রথমে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন এবং আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আকারে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করার নিয়ম। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে জমা দেওয়া হয়। এরপর এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। এখন অভিযোগ আমলে (কগনিজেন্স) নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি হবে।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানের সময়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
এ মামলা ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
আ. দৈ./কাশেম