আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম বিচারাধীন থাকা পর্যন্ত নিষিদ্ধ করার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে ছাত্রদের উদ্যোগে আনন্দ মিছিল, লুঙ্গি গামছা পরে গণ গোসল ও গরু জবাই করে গণভোজের আয়োজন করা হয়।
গত ১১ মে সকাল থেকেই মাদ্রাসা চত্বরে ব্যতিক্রমধর্মী নানা কর্মসূচি শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা লুঙ্গি পরে আনন্দ মিছিল করেন, হাতে গামছা, মুখে বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেন পুরো ক্যাম্পাস এলাকা। আনন্দ মিছিল শেষে মাদ্রাসা পুকুরে গোসল করেন একসাথে শিক্ষার্থীরা।
পরবর্তীতে রাত ৯ টা ৩০ মিনিটের সময় একটি গরু নিয়ে এসে গণ নৈশ ভোজের আনন্দ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে তা'মীরুল মিল্লাত ট্রাস্ট এলাকা ও বালাদিল আমিনসহ আশপাশের এলাকাগুলো প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে মুখর ছিল—"ভোজ ভোজ, গরু ভোজ", "ঈদ মোবারক", "আওয়ামী লীগ ধর, জেলে ভর", "হুর হুর হুররে, আওয়ামী লীগ নাই রে"—এমন উদ্দীপ্ত স্লোগান।
গরু জবাই ও গণভোজ ছিলঃ
অন্যতম আকর্ষণ। মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এবং তা'মীরুল মিল্লাত কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (টাকসু) ও একাধিক শিক্ষক-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় একটি গরু জবাই করে রাতেই গণভোজের আয়োজন করা হয়। এতে প্রায় নয় শতাধিক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সারারাত মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক আড্ডা যেন পুরো এলাকায় একপ্রকার ঈদোৎসবের রূপ নেয়।
নৈশ গণভোজ থেকে শিক্ষার্থীরা জানান, “জুলাই আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ সরকার এই মাদ্রাসার শহীদ নাসির গেট দেয়াল তৈরি করে বন্ধ করে দেয়। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা রুদ্ধ করে রাখার চেষ্টা হয়। আজ তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হওয়া নিপীড়িত জনগণের বিজয়।”
ছাত্রদের বক্তব্যে উঠে আসে ক্ষোভ ও উল্লাস
মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থী মাহিন ইউনুস বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে চেয়েছিল। আজ তাদের নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে আল্লাহ ন্যায়ের বিজয় দিয়েছেন।”
তা'মীরুল মিল্লাত কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (টাকসু)র নেতৃবৃন্দরা জানান, “আমরা সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছি। আজকের মিছিল, স্লোগান, গণভোজ—সবই এক প্রকার প্রতীকী বিজয়ের উদযাপন।”
স্থানীয় দোকানদার, পথচারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আনন্দ মিছিলে অংশ নেন। তাদের কেউ কেউ বলেন, “এমন স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ অনেক দিন পর দেখলাম। শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বেড়েছে, এটা সমাজের জন্য ইতিবাচক।”
আ. দৈ. /কাশেম