মাদক-অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে নোঙর করা এম ভি ক্যাপ্টেন নামের একটি লঞ্চে হানা দিয়ে নারীদের প্রকাশ্যে মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নেহাল আহমেদ জিহাদকে (২৭) নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে পিকনিক পার্টির লোকজনকে মারধর করে স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে নারীসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। এই সময় পিকনিকের তিনতলা লঞ্চ এভি ক্যাপ্টেন ভাংচুর হয়। মারধর ছাড়াও ওই যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন লুট করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সেখানে ছুটে যান থানা পুলিশ, নৌপুলিশ ও বিআইডব্রিউটিএ’র লোকজন। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং পিকনিকবাহী লঞ্চটিকে ঢাকার সদরঘাটের উদ্দেশে রওনা দিতে সহযোগিতা করেন।
এদিকে, লঞ্চে নারীদের মারধর করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। পরে আজ শনিবার দুপুরে নেহাল আহমেদ জিহাদকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে উঠতি বয়সী ৩০০-৪০০ ছেলে-মেয়ে পিকনিক ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে এমভি ক্যাপ্টেন লঞ্চ ভাড়া করে। কিছু ছেলে-মেয়েরা লঞ্চের ছাদে গান-বাজনা ও নাচ করে। সদর ঘাট থেকে রওনা হয়ে চাদপুট ঘুরে লঞ্চটি আবার ঢাকায় ফেরার পথে রাত সাড়ে ৮ টায় মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থামায়।
এ সময় লঞ্চে থাকা ৮-১০ জন ছেলে মেয়ে চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য নিচে নামলে অশ্লীলতার অভিযোগ তুলে লঞ্চঘাটে থাকা ছাত্র-জনতা ক্ষুব্ধ হয়। ঘাটে থাকা ৫০-৬০ জন ছাত্র-জনতা লঞ্চটিতে উঠলে পিকনিকের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে লঞ্চে থাকা ছেলে-মেয়েদের হেনস্তা ও মারপিট করে। এই সময় লাঠিসোটা নিয়ে লঞ্চে ভাঙচুর চলায় তারা। একপর্যায়ে দুই নারীকে লঞ্চের সামনে এনে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়ূঅ।
ছাত্র-জনতা দাবি করেছে, অশ্লীলতার কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়। পিকনিকের লঞ্চটিতে মাদকের আড্ডা বসে ছিল বলেও দাবি কর তারা।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফিরোজ কবির বলেন, পিকনিকের লোকজন দাবি করেছেন তাদের মারপিট ছাড়াও মোবাইলসহ নানা কিছু নিয়ে গেছে। পুলিশ পিকনিকের লোকজনকে গন্তব্য পৌঁছে দিয়েছে। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হবে।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম জানান, হট্টগোলের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করে। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর তদন্ত করা হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেহাল আহমেদ জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে।