দেশের বহুল আলোচিত ঘটনা ২০০৪ সালের ২১ আহস্ট গ্রেনেট হামলা মামলারয় বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অন্য আসামিদেরকে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল শুনানি আগামী ৬ মে নির্ধারণ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। ওই মামলা বিচারিক আদালত ৪৯আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজার দিয়েছেন।
এদিকে গতকাল রোববার (০৪ মে) রাষ্ট্রপক্ষের পৃথক আবেদনের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ আগামী ৬ মে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান, আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি গণমাধ্যমকে আরো বলেন, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ, যিনি আজ বেঞ্চে উপস্থিত ছিলেন না, পিটিশনগুলোর শুনানি নিয়ে নিষ্পত্তি করবেন।
জানা যায়, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় করা মামলায় (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। রায়ে ৪৯ আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ ছাড়া ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
এদিকে গত বছরের ১ ডিসেম্বর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত দুটি মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর এবং অন্য সকলের খালাস দেন। হাইকোর্ট সব আসামির বিরুদ্ধে নিম্ন আদালত যে রায় দিয়েছিলেন সেটিও বাতিল করে দেন। মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করণের জন্য বিচারিক আদালতের নথি (ডেথ রেফারেন্স) এবং কিছু আসামির করা আপিলের শুনানি শেষে বেঞ্চ ওই রায় দেয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে দুটি পৃথক লিভ টু আপিল পিটিশন দাখিল করে।
উল্লেখ্য, মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ডেথ রেফারেন্স নাকচ করে ও আসামিদের আপিল মঞ্জুর করে এ রায় দেওয়া হয়। ফলে এ মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ দণ্ডিত সব আসামি খালাস পেলেন। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ এ রায় দেন।
রায়ের পর ২০১৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলা দুটির নথিপত্র হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। এটি সংশ্লিষ্ট শাখায় ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। আইনজীবীরা বলেন, কোনো ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের জেল আপিল, নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। ডেথ রেফারেন্স, এসব আপিল ও আবেদনের ওপর সাধারণত একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনার তদন্তকে ভিন্ন খাতে নিতে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার নানা তৎপরতা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ-সংক্রান্ত মামলা দুটি (হত্যা ও বিস্ফোরক) নতুনভাবে তদন্ত শুরু করে। ২০০৮ সালে ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এতে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ওই হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। পরে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মামলার অধিকতর তদন্ত হয়। এরপর তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
আ. দৈ./ কাশেম