ফ্যাসিস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বাধীন আওয়ামী সরকারের আমলে জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতকে ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা ঋণ জালিয়াতি ও আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ রোববার (২৭ জুলাই) দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে দুদকের সহকারী পরিচালক শাহজাহান মিরাজের নেতৃত্বে কর্মকর্তারা কড়ানিরাপত্তার মধ্যদিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগজ্ঞ থেকে ড. আবুল বারকাতকে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। অভিযুক্ত ড. আবুল বারকাত দুদকের মামলায় দুইদিনের রিমান্ড প্রাপ্ত। রোববার রিমান্ডের প্রথম দিন তাকে দুদক কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাকে আরো এক দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা যায়।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, ২৯৭ কোটি টাকার বেশি ঋণ জালিয়াতি ও আত্মসাতের মামলায় গত ১০ জুলাই ধানমন্ডির বাসা থেকে ড. আবুল বারকাতকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরদিন তাকে ঢাকা সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। গত ১১ জুলাই দুপুরে আবুল বারকাতকে আদালতে হাজির করা হলে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন, একই সাথে দুদকের পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আবেদন জানানো হয়। পরে আদালত উভয় পক্ষের আবেদন শুনানি শেষে ড. আবুল বারকাতের বিরুদ্ধে দুইদিনের রিমান্ড নামঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দুই দিনের রিমান্ডের আদেশের প্রেক্ষিতে গতকাল বোরবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে আনা হয়। তাকে প্রথমদিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে তবে আগামীকাল সোমবার (২৮ জুলাই)পুনরায় জিজ্ঞাসবাদ করা হবে।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে ‘অ্যাননটেক্স’ নামের একটি গ্রুপকে ক্ষমতার অপব্যবহার,জালিয়াতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ঋণের নামে জনতা ব্যাংক থেকে ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা ছাড় করে আত্মসাতের সুনিদিষ্ট অভিযোগে অধ্যাপক আবুল বারকাত, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানসহ মোট ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি এবং মিথ্যা রেকর্ড তৈরি করে জনতা ব্যাংক পিএলসি ভবনের করপোরেট শাখা থেকে ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা আত্মসাৎ করেন। ঋণের অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বিদেশে পাচারের (মানিলন্ডারিং) অভিযোগও আনা হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে জনতা ব্যাংক অ্যাননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করে। সেসময় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক আবুল বারকাত। ২০১২ সালে প্রথম এই ঋণ কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু করে দুদক। তবে ২০২২ সালে প্রমাণের অভাবে তদন্ত বন্ধ করে দেয় সংস্থাটি। পরে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর পুনরায় অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তদন্তে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
আ. দৈ./কাশেম