কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকাল ৪ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হল-এর বটতলা প্রাঙ্গণে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় ইবি ছাত্র ইউনিয়ন সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বশির আহমেদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহমদ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী এবং ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, "যে বংশকে কেউ বিগত ১৫/১৬ বছরে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারেনি সেই পতিত স্বৈরাচার সরকারকে ছাত্র সমাজ শুধু ক্ষমতাচ্যুতই করেনি বরং ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। বাংলাদেশে অনেক ছাত্র সংগঠন আছে কিন্তু শিক্ষার্থীদের কথা, মেহনতি মানুষের কথা, সংস্কারের কথা কতজন ভাবে? কিন্তু ৫২'র অগ্নিগর্ভ থেকে সৃষ্টি হওয়া বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেক মিল আছে৷ কারণ আমরা জুলাই বিল্পবে নেতৃত্ব দিয়েছি।
৫২ থেকে ছাত্র ইউনিয়ন মৌলিকতা বজায় রেখেছে তেমনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনও তাদের মৌলিকতা বজায় রাখবে। আমাদের পন্থা আলাদা কিন্তু উদ্দেশ্য একই। এসময় তিনি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোঃ শাহেদ আহমেদ কে উদ্দেশ্য করে বলেন, "জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি আমাদের খোজ খবর নিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন, ছাত্রলীগের নানা কর্মসূচির বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।" বাইরের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করার হাত না থাকলেও ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র সংগঠন এক হয়ে আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে পারি বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইবি শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, "৫ আগস্ট পরবর্তীতে আমরা দেশের বিভিন্ন মাজারে হামলা হতে দেখেছি, গার্মেন্টস শ্রমিক তনু হত্যা দেখেছি, ছাত্রদল নেতা পারভেজ হত্যা দেখেছি, বিভিন্ন সময় দেশে মব তৈরি করার চেষ্টা চলছে কিন্তু আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিতে দেখছি। কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি, গত ঈদে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন দেয়া হয়নি, তাদের অধিকার রক্ষা করা হয়নি৷ সংস্কার কমিশনে শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। অন্যান্য দেশে বিল্পব পরবর্তী উন্নয়ন হয় সেরকম কিছু চোখে পড়ছে না।
আমরা চাই প্রথমত একই ধরনের বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলন করতে হবে। আমাদের দেশে কওমী, হাফিজিয়াখানা, স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। আমরা কেন একাধিক শিক্ষাব্যবস্থায় থাকবো? দ্বিতীয়ত আমরা ফ্রী শিক্ষাব্যবস্থা চাই। ইংল্যান্ডের মতো শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ব্যবস্থা থাকলেও সেটা কার্যকরী নয় কারণ প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা স্কুলে পড়ার পাশাপাশি বাড়িতে প্রাইভেট পড়ে। স্কুলে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় এমনটি হচ্ছে। আবার শিক্ষকদের যে বেতন দেয়া হয় সেটা অপর্যাপ্ত, ফলে তারা বাড়িতে প্রাইভেট পড়ানোকে উৎসাহিত করেন। এসকল ক্ষেত্রে সরকারকে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিতে দেখেছি।
সহকারী অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, "বাংলাদেশের অন্যান্য সংগঠন থেকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন একটু আলাদা। ভাষা আন্দোলন সহ পরবর্তী যেকোন আন্দোলনে তারা নেতৃত্ব দিয়েছে। ৫২ তে ছাত্র ইউনিয়ন জন্ম লাভ করলেও তারা আগে থেকেই সংগঠিত ছিলো। ৫২ তে আমরা ভাষার মর্যাদা পায় নাই। ৫৬ এর পাকিস্তানের সংবিধানে আমরা আমাদের ভাষা শহীদের প্রাপ্ত মর্যাদা ফিরে পেয়েছি। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বাংলাদেশের গণমানুষের বিপরীতে কখনো যায়নি।
৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৫৬'র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯'র গণঅভ্যুত্থান, ৭১'র স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজস্ব গেরিলা বাহিনী গঠন, ৯০'র গণঅভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ ২৪ এর জুলাই বিল্পব সহ প্রতিটি আন্দোলনে তারা গণ মানুষের পক্ষে কথা বলেছে। যেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।" এছাড়া আমরা মোট জিডিপির ৮ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় চাই। এর মধ্যে ২.৫ শতাংশ গবেষণাগারে ব্যয় করতে হবে বলেও দাবি করেন।
আ. দৈ./ কাশেম