সরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাইগ্রেশন সম্পেন্নের পর বর্তমানে প্রায় শতাধিক আসন শূন্য রয়েছে। আরো একটি মাইগ্রেশনের সুযোগ দিলে এসকল শূন্য আসনে অপেক্ষমান তালিকা হতে শতাধিক শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেত।
তাছাড়া তৃতীয় মাইগ্রেশনে সীমিত আকারে কলেজ পরিবর্তনের সুযোগ দেয়ায় বহু শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত কলেজে স্থানান্তরের সুযোগ হারিয়েছেন। প্রতিবছর ক্লাশ শুরুর পর একটি মাইগ্রেশনের সুযোগ দেয়া হয়। এবছর নীতিমালার দোহাই দিয়ে সে সুযোগও দিতে গড়িমশি করছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নীতিমালায় না থাকলেও প্রতি বছরই চার থেকে পাঁচটি মাইগ্রেশনের সুযোগ পেয়ে আসছিল শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা এ বছরও আসায় ছিল আর একটি মাইগ্রেশন হলে তারা নিজ এলাকার কাছাকাছি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেত। এতে শত শত শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিবাবকদের পরিবারের বহুবিদ সমস্যার সমাধান হতো।
এতে ক্ষোভ আর হতাশায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।ছাত্রছাত্রীরা বলছেন, সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে বর্তমানে ৫০টিরও বেশি আসন শূন্য রয়েছে। পাশাপাশি, ফরেন কোটার অন্তত অর্ধেক আসন এখনো পূরণ হয়নি। সবমিলিয়ে প্রায় শতাধিক শূন্য আসন রয়েছে। তারা দাবি তুলেছেন, এসব শূন্য আসনে মেধাতালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দিতে হবে।
তারা আরও জানান, চতুর্থ মাইগ্রেশন এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় পর্যায়ের ভর্তি চালু না হলে বিশেষ করে ‘সেকেন্ড টাইমার’ মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে। অভিভাবকরা বলছেন, দীর্ঘ অপেক্ষা, অনিশ্চয়তা ও মানসিক চাপে অনেক শিক্ষার্থী হতাশায় ভুগছে, আত্মহত্যার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী রাবিনা রাবিনা জানান ওয়েটিং হতে আর মাত্র পাঁচ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেলেই সে সরকারি মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেত। চতুর্থ মাইগ্রেশন এবং ওয়েটিং হতে সুযোগের অপেক্ষায় থেকে সে বেসরকারি কোনো মেডিকেলে ভর্তি হয়নি। এখন সে বেসরকারিতে ভর্তির সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়ে চরম হতাশায় আছে। তার মতো এমন অসংখ্য শিক্ষার্থী রয়েছে। বৈষম্য বিরোধী এবং শিক্ষার্থী বান্ধব সরকার এ বছর হঠাৎ করে এতো কঠোর অবস্থানে যাবে তারা তা চিন্তা করেনি।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে চতুর্থ মাইগ্রেশনের আওতায় ৯৯ জন শিক্ষার্থী সুযোগ পেয়েছিলেন। এমনকি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ, ৭৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পান। কিন্তু চলতি বছর দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া আগের তুলনায় সীমিত হওয়ায় বহু শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজে যেতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মো. মহিউদ্দীন মাতুব্বর জানান, “চতুর্থ মাইগ্রেশনের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। মেডিকেল শিক্ষাবিষয়ক নীতিমালা তৈরি করে বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল), আমরা শুধু বাস্তবায়ন করি।”
তিনি বলেন, “বর্তমান নীতিমালায় চতুর্থ মাইগ্রেশনের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তবে সরকার চাইলে বিশেষ বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা পুরোপুরি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়।”
শিক্ষার্থীরা দ্রুত এ বিষয়ে একটি বিশেষ সার্কুলার প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন, যাতে শূন্য আসনগুলো মেধা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে পূরণ হয়, এবং অনেকের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে পারে।