ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহেনার মেয়ে ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে বাংলাদেশে ফেরত আনতে বিচারিক আদালতের নির্দেশ মেনে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সহযোগিতা চাওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক আক্তার হোসেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একাধিক মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থণের সুযোগ নিতে হলে টিউলিপ সিদ্দিককে বিচারিক আদালতে হাজির হতে হবে।
আজ বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদেও প্রশ্নের জবাবে দুদক মহাপরিচালক এসব কথা বলেন।
এদিকে গত ১০ মার্চ পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারের সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক আটটি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে দুদক। যা আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
উল্লেখ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানীর গুলশানে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের একটি ফ্ল্যাট ‘ঘুষ’ হিসেবে নেওয়ার অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুদকের ঢাকা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে সংস্থার উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর- ১৭।
টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ছাড়াও মামলায় আরও দুজনকে আসামি করা হয়েছে।তারা হলেন- রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট শাহ মো. খসরুজ্জামান এবং সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা-১ অ্যাডভোকেট সরদার মোশারফ হোসেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো টাকা পরিশোধ না করেই অবৈধ পারিতোষিক হিসেবে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের একটি ফ্ল্যাট দখলে নেন। এরপর অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অপরাধমূলক অসদাচরণ ও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে গুলশান-২ এর ফ্ল্যাটটি (ফ্ল্যাট নং-বি/২০১, বাড়ি নং-৫এ ও ৫বি (পুরাতন), বর্তমানে ১১৩, ১১বি (নতুন), রোড নং-৭১) রেজিস্ট্রি মূলে খতিয়ান গ্রহণ ও প্রদান করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০বি/৪০৯/১৬১/১৬২/১৬৩/১৬৪/১৬৫(ক)/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দুদক জানায়, বিষয়টি অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছিল। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এসএম রাশেদুল হাসান, একেএম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
অভিযোগ রয়েছে, ব্রিটেনে বসাবস করলেও খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করেছেন অনিয়ম আর দুর্নীতির হাতিয়ার হিসেবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০০ সালে গুলশানে সরকারি লিজকৃত প্লট ইস্টার্ন হাউজিংকে অনুমোদনের ব্যবস্থা করেন টিউলিপ। বিনিময়ে বাগিয়ে নেন একটি ফ্ল্যাট। একইভাবে ২০২২ সালে পূর্বাচলে মা শেখ রেহানা, ভাই বোনের নামে ১০ কাঠা করে রাজউকের প্লট বরাদ্দ পেতে প্রভাব খাটান টিউলিপ। এঘটনায় দুদক সম্প্রতি আদালতে চার্জশিট দাখিল করলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। যেখানে আগামী ২৭ এপ্রিল আদালতে হাজির হওয়ার দিন নির্ধারিত রয়েছে।
আ. দৈ./ কাশেম