ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোনের মেয়ে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক ও রাজউকের সাবেক দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং অবৈধ কাজে সহযোগিতা করে রাজধানীর গুলশানে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের একটি ফ্ল্যাট দখলের নেওয়ার সুনিদিষ্ট অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সরকারি জমিতে অ্যাপাটমেন্ট তৈরির কাজে অবৈধভাবে সহায়তার বিনিময়ে ‘ইস্টার্ন হাউজিং’র থেকে বিনা টাকায় একটি ফ্ল্যাট উপহার নিয়েছেন টিউলিপ সদ্দিক।
আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট শাহ মো. খসরুজ্জামান এবং সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা-১ সরদার মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০বি/৪০৯/১৬১/১৬২/১৬৩/১৬৪/১৬৫(ক)/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ সালের ৫(২) ধারায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। দুদকের জনসংযোগ বিভাগ গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দুদকের মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অপরাধমূলক অসদাচরণ ও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো টাকা পরিশোধ না করেই অবৈধ পারিতোষিক হিসাবে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে গুলশান-২ এর ফ্ল্যাট (ফ্ল্যাট নম্বর বি/২০১, বাড়ি নম্বর ৫ এ ও ৫বি (পুরাতন), বর্তমানে- ১১৩, ১১বি (নতুন), রোড নম্বর ৭১) দখল নিয়ে ও পরে রেজিস্ট্রি মূলে খতিয়ান গ্রহণ বা প্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের অভিযোগ রয়েছে, যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ২০০০ সালে ‘ইস্টার্ন হাউজিং’ এর কাছ থেকে উপহার হিসেবে রাজধানীর গুলশান-২ এর ৭১ নম্বর রোডের একটি ভবনের একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা ভাগিয়ে নিয়েছেন। বিনিময়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও রাজউকের তৎকালীন দায়িত্ব প্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তা গুলশানে রাজউকের প্রায় দুই বিঘা জমিতে ফ্ল্যাট তৈরির অনুমোদন করিয়ে দেয় হাউজিং কোম্পানি ‘ইস্টার্ন হাউজিং’কে।
সূত্র মতে গুলশানের টিউলিপের ফ্ল্যাটের সন্ধান খুঁজতে গিয়ে দুদক পেয়েছে অভিনব জালিয়াতির নানা তথ্য। ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি ইমাম হোসেন চৌধুরীর আবেদনে তৎকালীন ঢাকা ইম্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (বর্তমান রাজউক), তাকে প্রায় দুই বিঘা জমি ৯৯ বছরের জন্য হস্তান্তর না করার শর্তে বরাদ্দ দেয়। কিন্তু ১৯৭৪ সালে থেকে দুই হাত ঘুরে সেই সম্পত্তি চলে যায় ইস্টার্ন হাউজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের কাছে।
২০০০ সালে টিউলিপ সিদ্দিকের আপন খালা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে ইস্টার্ন হাউজিংকে লিগ্যাল পার্সন হিসেবে আমমোক্তার অনুমোদন ও ৩৬টি ফ্ল্যাটে বিভাজনে তৎকালীন রাজউক সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে অনুমোদন করিয়ে নেন। বিনিময়ে একই প্লটে ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটটি গ্রহণ করেন টিউলিপ সিদ্দিক।
আরো উল্লেখ্য,এর আগে গত ১০ মার্চ পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারে সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক আটটি অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দিয়েছে সংস্থাটি। যা আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
বিষয়টি অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্ব ৭ সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছিল। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস. এম. রাশেদুল হাসান, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আ.দৈ./কাশেম