‘মার্চ ফর গাজা’ শীর্ষক সমাবেশ শুধু একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি নয়, বরং তা ছিল ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিভক্তির দীর্ঘকালীন বর্ণনার (ন্যারেটিভ) ভাঙনের এক প্রতীকি মুহূর্ত। ঢাকার রাজপথে যে দৃশ্য দেখা গেছে,তা ছিল অভাবনীয়, এমনকি অভূতপূর্ব।
প্রথমবারের মতো রাজপথে পা রেখেছেন বিশিষ্ট আলেম মুফতি আব্দুল মালেক হাফিজাহুল্লাহ। শুধু অংশগ্রহণই নয়, লাখো মানুষের জনসমুদ্রের সভাপতিত্ব করেছেন তিনি। সেই একই মঞ্চে উঠেছেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ এবং চরমোনাই পীর মুফতি ফয়জুল করীম হাফিজাহুল্লাহ। দুই ভিন্ন চিন্তার ধারক হয়ে একত্র হওয়া,বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটি এক সাহসী ঘটনা।
আহলে হাদীস ও আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অনুসারীরা, যাদের মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্য বহু পুরনো, তারাও এদিন হাতে হাত রেখে গাজার পক্ষে স্লোগানে গলা মিলিয়েছেন।
এই সমাবেশ প্রমাণ করেছে,ফিলিস্তিন ইস্যু শুধু মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক রাজনৈতিক সংকট নয়, এটি মুসলিম উম্মাহর এক যৌথ আত্মিক আহ্বান। গাজার শিশুর আর্তনাদ আজ এই ভূখণ্ডের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে।
চমকপ্রদ ছিল মাহমুদুর রহমানের মতো একজন শিক্ষিত, প্রগতিশীল চিন্তকের ভূমিকা। তিনি এদিন আলেম সমাজের পক্ষ থেকে ঘোষণা পাঠ করে দেখিয়ে দিয়েছেন,বৃহত্তর স্বার্থে মত, পথ, পরিচয় সবকিছু ছাপিয়ে এক প্ল্যাটফর্মে আসা যায়।
যাঁরা এতদিন মিছিল, মিটিং ও সমাবেশকে "গণতান্ত্রিক নাটক" বলে অবজ্ঞা করতেন, তাঁরাও এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন—সাংবিধানিকভাবে সম্মিলিত প্রতিবাদ কতটা শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে।
এই দৃশ্যপট আমাদের একটি বড় শিক্ষা দেয়: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থে মাসলাক, আকিদা বা দলের পরিচয় মুখ্য নয়—প্রধান হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর সম্মিলিত কণ্ঠস্বর। পর্দার আড়ালের অনেকেই আজ রাজপথে এসেছেন, নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করেছেন। এটি শুধু আত্মিক জাগরণ নয়, এটি রাজনৈতিক সাহসিকতাও।
মার্চ ফর গাজা সমাবেশ বলে দিয়েছে,যদি জাতীয় ও উম্মাহর স্বার্থে সকলে এক কণ্ঠে কথা বলে, তবে মতভেদ ভুলে ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব। ফিলিস্তিনের রক্তস্নাত মাটি আমাদের যে বার্তা দিয়েছে, তা আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি বলেই আজ এই একত্রতা সম্ভব হয়েছে। এখন চ্যালেঞ্জ হলো,এই ঐক্যকে কীভাবে ধরে রাখা যায় এবং একে কার্যকর রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। এই উপলব্ধি যত দ্রুত আসবে, তত দ্রুত আমরা কল্যাণমুখী এক উম্মাহ হিসেবে এগিয়ে যেতে পারব,জাতীয় স্বার্থেও, আন্তর্জাতিক ময়দানেও।
শিক্ষার্থী : তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গী
আ. দৈ./ কাশেম