মহান মুক্তিযুদ্ধের পরের বছরই বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। ১৯৭২ সালের নভেম্বর গণপরিষদের অনুমোদনের মাধ্যমে এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্যকে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে এই সংবিধানের কার্যক্রম শুরু হয়।
গত ৫৪ বছরে এই সংবিধান প্রায় ১৭ বার সংশোধন করা হয়। আমরা সাধারণ মানুষসহ অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীও জানে না এই সংশোধনগুলো কেন করা হয়? তবে বেশির ভাগ সংশোধন করা হয়েছে, যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে তাদের দলীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করা ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করা, ক্ষমতার অপব্যবহার কিংবা নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার চিন্তা থেকেই। রাষ্ট্র কিংবা জনগণের প্রয়োজনে কয়বার সংশোধন করা হয়েছে?
বর্তমান সময়ের মতো ১৯৯০ সালেও অভ্যুত্থানের পর অনেকে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়। কারণ যাঁরা আইন করেন, সংস্কার করেন তাঁরাই নিজেদের স্বার্থে আইন ভঙ্গ করেন।
সংস্কার বাস্তবায়ন হয় না। ইতিহাস তা-ই বলে। তাই কোনো দলীয় সরকার না হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি আশা করে। রাষ্ট্র ও জনগণের প্রয়োজনে তারা সংস্কার করুক-এটাই সবার চাওয়া।
২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থনের পর জনগণ অনেক আশা নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। সরকারও সংস্কারের লক্ষ্যে কয়েকটি কমিটি করেছে। কমটির সদস্যরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সরকারের শপথ নেওয়ার ৯ মাস পর হলেও সংস্কার কাজে তেমন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। কাজের ধীরগতিতে অনেকেই ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলছে, বিশেষ করে কিছু রাজনৈতিক দল। কোনো কোনো দল এরই মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছে। তারা বলছে, অন্তর্র্বর্তী সরকার অনির্বাচিত, তাদের সংষ্কারের দরকার নেই। নির্বাচনের পর যারা সরকার গঠন করবে তারাই সংস্কার করবে। তাই সংস্কার ছাড়াই অতিদ্রুত নির্বাচন দেওয়া হোক।
কথা সত্য। অন্তর্বর্তী সরকার অনির্বাচিত সরকার, তাদের কেন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের আইন, নীতি সংস্কার করতে হবে? কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রশ্ন তো অন্য জায়গায়। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় গিয়ে কখনো রাষ্ট্রের কথা চিন্তা করেছে? তারা শুধু নিজেদের কথাই চিন্তা করেছে আর আখের গুছিয়েছে। লাখ লাখ কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে। নেতা-কর্মীরা ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি করেছে। উন্নয়নের নামে জনগণের ট্যাক্সের টাকা লুট করেছে, বিদেশে পাচার করেছে। জনগণের ভোগান্তি বাড়িয়েছে। সিন্ডিকেট করে শেয়ার বাজারে লুটে খেয়েছে, দ্রব্যমূল্য বাড়িয়েছে।
তাই আজ সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের সংস্কার চায়, আইনের সংস্কার চায়, বিচার বিভাগের সংস্কার চায়, যা দলীয় সরকারকে দিয়ে কখনো সম্ভব নয়। জনগণ আশা করে, অবশ্যই অন্তর্বর্তী সরকার এব সংস্কার করবে। তবে সেটি তড়িৎ গতিতে হলে ভালো হয়। কেন না অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকলে আন্তর্জাতিকভাবে রাষ্ট্র চাপের মুখে পড়বে। আমরা সেটি কখনোই চাইবো না।