সাভার উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ১২টি স্থানে দিন রাত চলছে মাটি কাটার মহোৎসব।তিন ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগে সংবাদ প্রচারের পর ফসলী জমি রক্ষায় অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত। এ সময় মাটি কাটার তিনটি ভেকু গুঁড়িয়ে দেয় এবং একটি ভেকু জব্দ করা হয়।
এরআগে সাভার উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ১২টি স্থানে দিন রাত চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। সেই মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটের ভাটায়।অদৃশ্য কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় প্রশাসন। শিরোনামে সোমবার (১০মার্চ ) আজকের দৈনিকে একটি সংবাদ প্রচার হলে বিষয়টি নজড়ে আসে উপজেলা প্রশাসনের।
মঙ্গলবার দুপুরে (১১মার্চ)ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের মধুমতি মডেল টাউনের শেষ প্রান্তে কান্দি ভাকুর্তার বড়চক এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবুবকর সরকার।
এদিয়ে অভিযানের খবর আগেই জানতে পেরে মাটি কাটা চক্র পালিয়ে যায়। মাটি নেয়ার ড্রাম ট্রাকগুলোও সরে পরে। কিন্ত মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত ভেকুগুলো যাওয়ার সময় পায়নি। মাটি কাটা চক্রটি অবৈধভাবে তিন ফসলি কৃষি জমি থেকে ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীর করে কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছিল।
গেল শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন ভাকুর্তা ইউনিয়নের মধুমতি মডেল টাউনের শেষ প্রান্তে কান্দি ভাকুর্তার বড়চক এলাকায় চলছে মাটি কাটার মহাৎসব। ৫টি স্থান থেকে ভেকু দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে ড্রাম ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইট ভাটায়।মাসের পর মাস মাটি কেটে নেওয়ায় গভীর খাদে পরিণত হয়েছে এলাকার ফসলি জমি। গেল কেয়েক মাস ধরে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বড় বড় ড্রাম ট্রাকে করে ইটভাটায় বিক্রি করছে বেশ কয়েকটি চক্র।বড় এক ড্রাম ট্রাক মাটির মূল ৪হাজার টাকা।গত কয়েক মাসে প্রায় ৪০ কোটি টাকার মাটি কেটে বিক্রি করা হয়েছে এমন দাবী স্থানীদের।
বেশ কয়েকটি স্থানে বিভক্ত হয়ে আবু সাইদ, আব্দুল হাই ও বাহারের নেতৃত্বে ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে চক্রটি।নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এভাবে মাটি কেটে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে মানচিত্র থেকে উধাও করে দিচ্ছে কৃষিজমি।মাটি কাটার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন ফসলি জমির মালিক ও কৃষকরা। স্থানীয় প্রশাসন কঠর হলে প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে। তবে অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ মাটি কাটায় স্থানীয় পুলিশ ও কিছু সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে রেখেছে। যার ফলে সাংবাদিকরা এসেও সংবাদ প্রচার করে না।
স্থানীয় কৃষক সিরাজুল ইসলাম আজকের দৈনিক কে বলেন, আমি আড়াই বিঘা জমিতে ধনেপাতা চাষ করেছেন। কিন্তু ভেকু দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীর গর্তকরে মাটি ইট ভাটায় বিক্রি করছে একটি চক্র। ফলে আমার জমি হুমকির মুখে পরেছে। ফাটল ধরেছে খেতে। যে কোন সময় জমির বড় একটি অংশ ধসে পড়তে পারে।তাতে আমার অনেক ক্ষয়ক্ষতি হবে।এই সমস্যা সুধু আমার একার নয় আশপাশের অনেকের জমিতেই হয়েছে বলেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো এমদাত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দিন রাত মাটির বড় বড় ট্রাক চলার কারনে ধুলাবালিতে এলাকায় থাকা কষ্টকর হয়ে পরেছে। আশ পাশের জমির ফসল ধুলায় ঢেকে গেছে। গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে আশপাশের ফসলি ক্ষেত। মাটির গাড়ির দুলাবালির কারনে আমাদের এলাকার অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে।প্রশাসন কেন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না আমাদের জানা নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, পাশের জমিতে মাটি কাটার করনে বড় ট্রাক আমাদের জমির পাশ দিয়ে চলা চল করায় অনেক দুলাবালি হয়।আর সেই দুলাবালির কারনে ক্ষেতের গাজর, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ধনেপাতা, লাল শাক নষ্ট হয়ে গেছে।আমাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।কিন্তু মাটি কাটা বাহিনীর ভয়ে কিছু বলতে পারছিনা।প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
মুসলেম উদ্দিন নামে আরেক কৃষক বলেন, মাসের পর মাস তারা অবৈধ মাটি কেটে কৃষি জমি সব জলাশয় করে ফেলছে।তাদের ভয়ে কেউ কিছু বলছে না।তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো জানান, সাংবাদিকরা আসলো,আর গেল, সাক্ষাৎকার নিলো কিন্ত প্রশাসন ও মাটি বিক্রেতাদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে পরে আর আমাদের কষ্টের কথা আর প্রচার করে না।এই মাটি কাটা বাহিনীর হাত থেকে আমাদের কুষি জামি কে রক্ষা করবে ।
কৃষি জমির মাটি কাটা বাহিনীর চক্রের সদস্য আবু সাইদ অবৈধভাবে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, সবাইতো এভাবেই ব্যবসা করে। অনুমতি নিয়ে কে মাটি কাটে বলেন। প্রশাসনসহ সবাইকে ম্যানেজ করেই মাটির ব্যবসা করছি। আপনাদের কি করতে হবে বলেন।
এ সময় আবু সাঈদ সংবাদ প্রচার না করার জন্য টাকার অফার দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।গত দুই মাসে প্রায় ৪০ কোটি টাকার মাটি কেটে বিক্রি করা হয়েছে এমন দাবি স্থানীয়দের।পাশাপাশি কয়েকটি স্থানে বিভক্ত হয়ে আবু সাইদ, আব্দুল হাই ও বাহার উদ্দিন বাহারের নেতৃত্বে ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে চক্রটি।
মাটি কাটার বিষয়ে বাহার উদ্দিন বাহারের কাছে জানতে চাইলে তিনি মোঠু ফোনে জানান, কোথাও আমার মাটি কাটি নাই। প্রতি বছর যে মাটি কাটি তা আমার নিজের জমিতে, এ বছর সেখানে পানি, ঢাকার শহরে রাতে দুইয়েক গাড়ি লাল মাটি দেই তা মিলিয়ে কাটি।
অভিযান থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবুবকর সরকার বলেন, ফসলী জমি রক্ষা ও ৩ ফসলী জমির মাটি কাটা বন্ধ এবং অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালানো হলেও ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা ৪টি মাটি কাটবার ভেকু পাই, আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে মাটি খেকোরা পালিয়ে যায়। তবে আমরা ৩টি ভেকু গুড়িয়ে দিয়েছি এবং ১ টি ভেকু জব্দ করি।
এসময় তিনি আরও বলেন, পাশেই পরিবেশের ক্ষতি করে ৪টি টায়ার পুড়িয়ে ফার্নিস তেল তৈরীর অবৈধ কারখানায়ও অভিযান পরিচালনা করে কারখানাগুলো গুড়িয়ে দেয়া হয়।
আ.দৈ/আরএস