পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের বাড়তি চাহিদা মেটাতে শেষ সময়ে ফুলবাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সাভারের গোলাপ চাষীরা। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় গোলাপের বাম্পার ফলন হওয়ায় হাসি ফুটেছে ফুলচাষিদের মুখে।ফলন ভালো হওয়ায় ৩টি উৎসবে বাড়তি লাভের প্রত্যাশা ফুল চাষিদের।
সাভারের বিরুলিয়ার বিভিন্ন গ্রামের বুক জুড়ে ফুটে রয়েছে টকটকে লাল গোলাপ। নব্বইয়ের দশক থেকেই উপজেলার শ্যামপুর, কমলাপুর, বাগ্নিবাড়ী, সাদুল্লাহপুর, মৈস্তাপাড়া গ্রামে গোলাপ চাষ হয়ে আসছে। গোলাপগ্রাম নামে পরিচিত এই অঞ্চলের বুক চিরে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সরু পথ। দুপাশে বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান। ফুটে থাকা গোলাপের চোখ জুড়ানো দৃশ্য নিয়ে সেজে আছে বাগানগুলো। আর দরজায় কড়া নাড়ছে পহেলা ফাল্গুন, ভালবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশেষ দিবসকে সামনে রেখে বেড়েছে ফুলের চাহিদা, তাই এসব উৎসবে ফুলের বাড়তি চাহিদা মেটাতে ও ফুল বিক্রি করে বাড়তি লাভের আশা গোলাপ চাষীদের
গোলাপ গ্রামের গোলাপ চাষি মো: মাসুদ রানা বলেন, এবার বাগানে গোলাপের বাম্পার ফলন হয়েছে আমরা খুশি।১৪ই ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং ২১ ফ্রেরুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলে চাহিদা থাকে বেশি,তাই ফুল বিক্রি করে বাড়তি লাভের আশায় আমরা এখন বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছি।
আরমান নামে আরেক ফুল চাষি বলেন, সারা বছর গোলাপের তেমন দাম না পেলেও ফ্রেরুয়ারি মাসের ৩টি উৎসবে ফুলের ভালো দাম পাই।তবে এ বছর ভরা মৌসুমে সার ও কীটনাশক এর দাম হটাৎ বেড়ে যাওয়ায় গোলাপ চাষে উৎপাদন খরচও বেশি পড়েছে, তাই ফুল উৎপাদনে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।
এদিকে গোলাপের নজরকারা সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সব বয়সের মানুষকেই। আর তাই গোলাপ গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করতে রাজধানীসহ নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ছুটে আসেন অসংখ ফুল প্রেমীরা। অনেকে বাগানে ঢুকে গোলাপের সাথে তুলছেন ছবি আবার কেউ বা কিনে নিচ্ছেন পছন্দের ফুলটি।প্রিয়জন কে সাথে নিয়ে লাল গোলাপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দিনভর গোলাপ গ্রামের বিভিন্ন বাগানে ছুটে বেরাচ্ছেন ফুল প্রেমীরা।
ধামরাই থেকে এসেছিলেন দ্বীপ ও স্মৃতি বণিক দম্পতি। তারা জানান, এটাই তাদের প্রথম গোলাপ গ্রামে আসা। সোশ্যাল মিডিয়ায় গোলাপ গ্রামের প্রচুর ভিডিও দেখে এসেছেন কিন্তু গোলাপ গ্রাম তার চেয়েও বেশি সুন্দর।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সানজি ও সুমাইয়া তুলি এসেছেন বন্ধুদের সাথে ঘুরতে, গোলাপগ্রামের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। গোলাপ গ্রামে এসে মুগ্ধ তারাও। তবে তাদের দাবি এ এলাকায় যেহেতু প্রচুর দর্শনার্থী আসেন তাই এখানকার রাস্তা-ঘাট আরও উন্নত করা এবং শৌচাগার স্থাপন করা প্রয়োজন।
সাভার উপজেলা কৃষি অফিসার আল-মামুন জানান, লাল গোলাপের অত্যধিক চাষ হওয়ায় বিরুলিয়া ইউনিয়নটি গোলাপ গ্রাম হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে অনেক আগেই ।উপজেলার ৩০৫ হেক্টর জমিতে সারা বছর দরে চাষ হয় বিভিন্ন দরনের ফুল। তবে এ বছর ২৩০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে লাল গোলাপ।
এসময় কৃষি অফিসার আরো বলেন, এ বছর গোলাপের ভালো ফলন হওয়ায় ও বাজারে ফুলের চাহিদা ভালো থাকায় সামনের ৩টি উৎসবে ফুল বিক্রি করে লাভবান হবেন চাষীরা, চলতি মৌসুমে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ফুল বিক্রির লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। সারা বছর গোলাপ চাষের সব ধরনের সহযোগিতা করার পাশাপাশি সরকার নির্ধারিত ডিলারের কাছ থেকে সার ও কীটনাশক কেনার পরামর্শ এই কৃষি কর্মকর্তার।
লাল গোলাপের স্বর্গরাজ্য খ্যাত গোলাপ গ্রামে গোলাপ ছাড়ও চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী, গ্লাডিওলাস, ক্যান্ডেলিনা, মাম, জারবেরা সহ বেশ কিছু প্রজাতির ফুল।
আ. দৈ. /কাশেম/ নিলয়