রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫,
৬ মাঘ ১৪৩১
ই-পেপার

রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
জাতীয়
“দেশবন্ধু গ্রুপ” দুই ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ১ হাজার আট’শ কোটি টাকা
রমজান আলী
Publish: Wednesday, 8 January, 2025, 6:43 PM  (ভিজিট : 994)
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা।

দেশবন্ধু গ্রুপকে ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়েছে তিনটি ব্যাংক। বড় অঙ্কের এই খেলাপি ঋণের ঘানি টানছে বেসরকারী শরীয়াহভিত্তিক স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংক। বিনা-জামানতে নামে-বেনামে স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণের নামে ৮০৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে গ্রুপটি।  ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাক।  

এছাড়া ইসলামী ব্যাংকে রয়েছে বড় অংকের ঋণ। এসব ঋণের বিপরীতে তেমন কোনো জামানত না থাকায় ব্যাংকগুলো এখন হাহাকার করছে।  

জানা যায়, ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের বানানী শাখার গ্রাহক দেশবন্ধু গ্রুপ। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ আনুকূল্যে গ্রুপটি নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকার ওপরে হাতিয়ে নিয়েছে দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। আওয়ামী লীগের সহচর হয়ে তিনি শুধু ব্যাংক থেকে টাকা নেননি, শেয়ারবাজার থেকেও কারসাজি করে হাতিয়ে নিয়েছিলেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। 


















জানা যায়, পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নামে স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ৮০৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে দেশবন্ধু গ্রুপ। এর মধ্যে ফান্ডেড ঋণ রয়েছে ৬৭৯ কোটি ৭৬ লাখ। আর নন-ফান্ডেডে রয়েছে ১২৭ কোটি ২১ লাখ। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, ফুড এন্ড বেভারেজ লি., সুগার মিলস্ লি., দেশবন্ধু সিমেন্ট মিলস., দেশবন্ধু কনজ্যুমার এন্ড এগ্রো লি. ও এম.আর ট্রেডিং। এর মধ্যে ফুড এন্ড বেভারেজ লি. ও সুগার মিলস্ লি. খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বাকী তিন প্রতিষ্ঠানেরগুলো ‘ওভারডিউ’তে রয়েছে। এছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে দেশবন্ধু গ্রুপের নামে আরোও প্রায় ১ হাজার কোটি ঋণ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান খেলাপিতে পরিনত হয়েছে। বাকী ঋণগুলো ‘ওভারডিউ’তে রয়েছে। 

জানা যায়, গত ২ অক্টোবর ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের লভ্যাংশের তথ্য প্রকাশ করে দেশবন্ধু পলিমার। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ বা ২৫ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করে। লভ্যাংশ ঘোষণা আসার পরদিন প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪ টাকা ২০ পয়সা বা ১৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে যায়। দেশবন্ধু গুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা দেশবন্ধু পলিমারের শেয়ার কারসাজি করে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলো। 

জানা যায়, একাধিকবার তাগাদা নিয়ে দেশবন্ধুর কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারছেনা ব্যাংকগুলো। ব্যাংকের কাছে জামানত না থাকার কারণে অনেকটা হতাশ ব্যাংক বর্তমান পর্ষদ। জোর দিয়েও তেমন কিছু করতে পারছেনা। বর্তমান দশটি দুর্বল ব্যাংকের মধ্যে এই তিন ব্যাংকও রয়েছে। গ্রাহকের টাকা ঠিকমতো না দিতে পারায় চরম দুশসময়ে কাটাচ্ছে এই ব্যাংকগুলো। গ্রুপটির কাছে এই দুঃসময়ে সহযোগিতা চেয়েও পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্বাহী কর্মকর্তা নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেনি ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকটির বিনিয়োগ ও আইন বিভাগের মতামত উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি ছাড়াই ঋণ দেওয়া হয়েছে। নেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত জামানতও। ব্যাংকের কর্মকর্মতার কারসাজির মাধ্যমে ক্ষমতার অব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনাজামানতে ঋণ নিয়েছে।’ 

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডির এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ শতে বলেন, ‘দেশবন্ধু গ্রুপ ঋণের টাকা পরিশোধ না করে, উল্টো বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ঋণের সুদ মওকুফের আবেদন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেইসব আবেদনের কোনো প্রকার সাড়া দেয়নি। তাকে সরাসরি ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো প্রকার অনিয়মের সহযোগিতা না পেয়ে, রিট করে আদালতের মাধ্যমে ঋণের  টাকা না দেয়ার তালবাহনা করে যাচ্ছে।’ 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এস আলম গ্রুপের ৭টি ব্যাংকেরই পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৩ আগস্ট ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৭টি ব্যাংকসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়। 

এব্যাপারে এসআইবিএলের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. মোরশেদ আলম খন্দকার বলেন, ‘দেশবন্ধু গ্রুপ এসআইবিলের বড় গ্রাহক। এই গ্রুপের কাছে ব্যাংকের বিশাল একটা ঋণ রয়েছে। আগের বোর্ড তাদের নামে-বেনামে ঋণ দিয়েছে গ্রুপটিতে। সেখানে ৮০৭ কোটি টাকার মতো ঋণ রয়েছে। যা এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এই টাকা উদ্ধারে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাাচ্ছি।’ 

এব্যাপারে দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা জানান, ‘আমাদের কোনো খেলাপি নেই। যেসব প্রতিষ্ঠানের ‘ওভারডিউ’ ছিলো সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ককুলার অনুযায়ী রিকভারি করেছি। সারাদেশে সুনামের সাথে ব্যবসা করছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের কোনো বদনাম নাই।’

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া জানান, ‘দেশ বন্ধু গ্রুপের ঋণের অর্থ আদায়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। গ্রুপের সংশ্লিষ্টদের সাথে একাধিক বৈঠক ও আলোচনা হয়েছে।’

দেশবন্ধু গ্রুপের ঋণের অর্থ আদায়ের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না জানতে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে একাধিবার ফোন করে ও ম্যাসেজ দিয়েও তার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

 আ. দৈ/ আফরোজা


   বিষয়:  দেশবন্ধু গ্রুপ   দুই ব্যাংক   ১ হাজার আট’শ কোটি টাকা   স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক   ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক     
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

থানায় বসে এসআইয়ের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল
‘ঋণখেলাপিরা যাতে বিএনপির মনোনয়ন না পায় সে চেষ্টা করব’
কক্সবাজারের হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টী পরিমল শর্মার সংবর্ধনা
ফরিদপুরে শহীদ জিয়ার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা
বাংলাদেশে বায়ু দুষণের বছরে ১,০২,৪৫৬ জনের মৃত্যু
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

ফরিদপুরে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতারা গন সংযোগে ব্যস্ত
চায়না পোশাকে সয়লাব দেশ
দুদকের মামলায় বিএফআইইউয়ের মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেন যারা
আমরা আর বেশি দিন নেই: এম সাখাওয়াত
জাতীয়- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : [email protected]
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝