রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫,
১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
মতামত
‘হতবিহ্বল’ বাংলাদেশ দেখছে, প্রতিবেশী ‘পাল্টে’ গেছে
আলতাফ পারভেজ
Publish: Friday, 27 December, 2024, 7:40 PM  (ভিজিট : 265)

বাংলাদেশে ‘জেলা’ যে ধরনের প্রশাসনিক ইউনিট, আরাকানে সেটাই ‘টাউনশিপ’। এ রকম ১৭টি টাউনশিপ আছে সেখানে। টাউনশিপগুলোর মধ্যে আরাকান আর্মির এখন কেবল আকিয়াব, মুনাং ও কাইয়াকফু দখল বাকি। এই ৩ টাউনশিপই অর্থনীতির বিচারে আরাকানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।

তিনটি শহরই ভূখণ্ডের সাগরের দিকে। ফলে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী ‘টাটমা-দো’র মধ্যে সামনের দিনগুলোতে সংঘাত হবে মূলত নৌযুদ্ধ আকারে। যে যুদ্ধক্ষেত্র বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূল থেকে খুব বেশি দূরে নয়। এই যুদ্ধের ফলাফল অনুমানযোগ্য।

তীব্রভাবে ঐক্যবদ্ধ রাখাইন জাতির মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় আরকান আর্মিকে থামানো নৈতিকভাবে বিধ্বস্ত টাটমা-দোর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। বলা যায়, বাংলাদেশ প্রস্তুত হওয়ার আগেই তার প্রতিবেশী পাল্টে যাচ্ছে। আরও সরাসরি বললে, মিয়ানমার আর বাংলাদেশের প্রতিবেশী নেই।


টাটমা-দোর আকিয়াব রক্ষার যুদ্ধ 
আরাকানজুড়ে প্রায় আশি ভাগ এলাকা হারিয়ে টাটমা-দো এখন প্রদেশের রাজধানী আকিয়াব, যা সিত্তে নামেও পরিচিত, সেটা দখলে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আশপাশের নদীপথগুলো বন্ধ করে দিয়েছে তারা। আকিয়াব অনেকটাই বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে।

জান্তার নৌবাহিনী ছোট ও মাঝারি প্রায় ২০টি যুদ্ধজাহাজ দিয়ে প্রদেশের এই মর্যাদাপূর্ণ কেন্দ্র রক্ষায় নেমেছে। আর আরাকান আর্মি আশপাশের টাউনশিপ থেকে আর্টিলারি দিয়ে প্রতিপক্ষের প্রাণশক্তি কমিয়ে আনছে ধীরে ধীরে। নতুন বছরটি তারা আকিয়াবে দলীয় পতাকা উড়িয়ে উদ্‌যাপন করতে বদ্ধপরিকর।

আগামী ১০ এপ্রিল তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্রকৃতই এক জমকালো উৎসব হয়ে উঠবে বলে মনে হচ্ছে। ১৬ বছর আগে মাত্র ২৬ জন যুবক কাচিনে যে সংগঠনের গোড়াপত্তন করেন, সেটা এখন ৪০ হাজার সদস্যের দুর্ধর্ষ এক পূর্ণাঙ্গ সেনাবাহিনীতে পরিণত হতে চলেছে।

আরাকানের সর্বদক্ষিণের গয়া টাউনশিপ থেকে রাখাইন গেরিলারা এখন আরও দক্ষিণের ইয়ারওয়াদির দিকেও বোমা ছুড়ছে। মিয়ানমারের অতি উর্বরতা শক্তির এই অঞ্চল তার ধান-চালের প্রাচুর্যের জন্য খ্যাত। এই অঞ্চলের তিনটি নীল পানির সি-বিচ (সমুদ্রসৈকত) আরকান আর্মিকে বিপুল রাজস্বের হাতছানি দিয়েও ডাকছে।

সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার, রাখাইন গেরিলা জেনারেল নাইং বামার তরুণ-তরুণীদের মধ্যেও ব্যাপক জনপ্রিয়। বামার আর্মির জন্য এটা সামাজিকভাবে খুব বিব্রতকর। আরাকান যুদ্ধ বামার টাটমা-দোকে নৈতিকভাবেও হারিয়ে দিয়েছে।


সামনের ‘যুদ্ধ’ যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ
আকিয়াবকে ঘিরে শেষ যুদ্ধ শুরুর মুখে ইয়াঙ্গুন ও নেপিডোতে অনেকেই চীনের মনোভাব বোঝাতে ব্যস্ত। এর কারণ স্পষ্ট। আরাকান চীনের অর্থনীতি ও ভূরাজনৈতিক প্রভাবের দরকারি জায়গা। গত আগস্ট থেকে বাংলাদেশে ওয়াশিংটনের প্রভাব বাড়ায় আরাকান চীনের জন্য বাড়তি ভাবনা তৈরি করেছে। একই কারণে আরাকান এখন ভারতেরও তুমুল মনোযোগ কাড়ছে। দফায় দফায় ওষুধ পাঠিয়ে নয়াদিল্লি আরাকান আর্মির ‘মন পেতে’ চাইছে। সব মিলে ২৪০ বছর পর আরাকানিজদের জীবনে ভূরাজনৈতিকভাবে উপভোগ্য সময় এলো।

এ মুহূর্তে চীনের জন্য মুশকিলের দিক হলো, আরাকান আর্মির পরবর্তী টার্গেট কাইয়াকফুতে তাদের প্রচুর বিনিয়োগ আছে। কিন্তু তাদের গভীর সমুদ্রবন্দর এবং গ্যাস ও তেলের পাইপলাইন প্রকল্প থেকে অনেক কর্মী এরই মধ্যে স্বদেশে ফিরে গেছেন। কাউকে কাউকে মিয়ানমারের ভেতরে মান্দালের দিকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

কাইয়াকফু টাউনশিপটি চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক সম্পর্কের ‘মুকুটে হীরার খণ্ডে’র মতো। কাইয়াকফুর পাশের টাউনশিপ টাউঙ্গুপ এরই মধ্যে গেরিলাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ রকম অবস্থাতেই নিজেদের বিনিয়োগ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ডিসেম্বরের শুরুতে আরকান আর্মির একটা প্রতিনিধিদলকে বুশানের তেঙচঙে ডেকেছিল চীন। সেখানে আরাকানি গেরিলারা চীনের বিনিয়োগ রক্ষার নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছে, বাকি টাউনশিপগুলো সর্বোচ্চ কম ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় তারা। সে জন্য এই তিন টাউনশিপ মূলত ঘেরাও করে নিয়ন্ত্রণে আনার ইচ্ছা তাদের।

আরাকান আর্মির জন্য কাইয়াকফু দখল এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ, চীনের এখানকার প্রকল্পগুলো থেকে নেপিডো যে বিপুল রাজস্ব পায়, সেটা রাখাইনরা বন্ধ করতে চায়। নিজেরাও ওই রাজস্বের হিস্যা পেতে ইচ্ছুক। নিশ্চিতভাবেই ভবিষ্যতে এ বিষয়ে ‘ত্রিমুখী সমঝোতা’য় আসতে হবে চীন সরকার ও নেপিডোর সরকারকে। 

অনেকের জন্য এটা বিস্ময়কর হলেও শক্তি-সামর্থ্য অনেক হিসাবই পাল্টে দেয়। আকিয়াব ও কাইয়াকফু পেলে এই উপকূলের সমুদ্রে আরাকান আর্মির নৌ-প্রভাব অনেক বাড়বে এবং তার অর্থনৈতিক দিকটি চীন, ভারত ও বাংলাদেশ কেউ অগ্রাহ্য করতে পারবে না।

মিয়ানমারের প্রদেশে প্রদেশে গেরিলা যুদ্ধ সামলিয়ে টাটমা-দো সামরিকভাবে দক্ষ হলেও সমুদ্রবক্ষে তাদের সেই নজির নেই। রাখাইনরা প্রতিপক্ষের সেই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে। তবে বুদ্ধিদীপ্ত রাখাইন নেতৃত্ব চীনের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলার মাঝে আগ্রহের সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ক গড়তে চেষ্টায় আছে। এটা তাদের অনিবার্য পরবর্তী পদক্ষেপ।

কিন্তু মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাস এ রকম আগ্রহ সামান্যই আমলে নেওয়ার অবস্থায় আছে। নিরাপত্তাহীনতায় আকিয়াবেও এখন আর বাংলাদেশি কর্মকর্তারা নেই। ঢাকার আরাকান কূটনীতি গত বছরগুলোতে এত বেশি রোহিঙ্গা-ভাবনায় আচ্ছন্ন ছিল যে বামারদের মতো দুষ্ট-প্রতিবেশী পাল্টে যাওয়ার মতো বিরল ঘটনাও উদ্‌যাপন করা যাচ্ছে সামান্যই। তারপরও সীমান্তের দুই পারে ইতিবাচক কিছু ‘মুভমেন্ট’ দেখা যাচ্ছে। 

এটা প্রকৃতই নতুন এক সময়, যখন ইতিহাসে বহুকাল পর বাংলা ও আরাকানের মাঝে তৃতীয় কেউ নেই আর। ঔপনিবেশিক ইতিহাসের একটা অধ্যায় যে শিগগির নাফের অগভীর জলেই ডুবতে বসেছে, সেটা আরাকানের প্রাচীন রাজধানী হিসেবে পরিচিত ‘ম্রাক উ’র স্মৃতিকাতর জনপদের কাছে বাংলাদেশের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মতোই দামি এক ‘অর্জন’।


রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ ও বাংলাদেশের বাস্তবতা
আরাকানে এখনকার অবস্থা বাংলাদেশের একাত্তরের অক্টোবর-নভেম্বরের মতো। তবে ঢাকার সভা-সেমিনার-টক শোগুলো আরকান নিয়ে আলোচনায় যতটা রোহিঙ্গা বিষয়ে মনোযোগী, ততটাই অনাগ্রহী রাখাইনদের আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার ফিরে পাওয়ার আনন্দ বুঝতে।

পাশাপাশি এটাও সত্য, আরাকানের বর্তমান পরিবর্তন রোহিঙ্গাদের দুর্ভাগ্য ও দুর্ভোগের নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটাবে। এটা রোহিঙ্গা সম্প্রদায় এবং তাদের এত দিনকার বুদ্ধিদাতা অভিভাবকদের জন্য প্রায় পরিপূর্ণ বিপর্যয়কর এক মুহূর্ত। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এই জনগোষ্ঠীর দর-কষাকষির নিজস্ব সামর্থ্য প্রায় নিঃশেষ হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে টাটমা-দোর হাতে গণহত্যার শিকার ও জন্মভিটা থেকে উৎখাত হওয়া এই সম্প্রদায় কীভাবে গত মাসগুলোয় আবার রাখাইনদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার জন্য জান্তার ডাকে সাড়া দিল, সেটা বিস্ময়কর।

এ রকম উদ্যোগের সমর্থকেরা ভেবেছিলেন, এর মধ্য দিয়ে সামরিক জান্তা থেকে ‘সহযোদ্ধা’ হিসেবে রোহিঙ্গাদের জন্য নাগরিকত্বের স্বীকৃতি মিলবে। কেউ কেউ একে আত্মরক্ষায় নিরূপায় রোহিঙ্গাদের বিকল্পহীন অবস্থান হিসেবেও দেখেছেন। কিন্তু বাস্তবে এটা এমন এক কৌশলগত ‘ভুল’, যা রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জে ফেলেছে।

বাংলাদেশকে এখন এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সম্পূর্ণ নতুন কৌশল না নিয়ে উপায় নেই। বিশেষ করে যখন আরাকান আর্মির নেতৃত্বের নমনীয় অংশকেও রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার প্রশ্নে রাজি করানো বেশ দুরূহ। লেনদেনের সুনির্দিষ্ট ছকেই বাংলাদেশকে আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিতে হবে সামনের দিনগুলোতে। তবে এটাও মনে রাখা দরকার, রোহিঙ্গা প্রশ্নে অত্যন্ত অবিশ্বস্ত একদল সংগঠক দ্বারা এই গেরিলা দল পরিচালিত হয়। সুবিধা নিতে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েও তারা সেটা রক্ষা না–ও করতে পারে। বাংলাদেশের দিক থেকে খুব কঠিন এক অবস্থা এটা।

কিন্তু এই বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ কম। টাটমা-দো বহুদিনের জন্য আরাকানে আর কোনো বড় শক্তি হিসেবে থাকছে না। ওখানে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের থাকতে হলে এবং বাংলাদেশ থেকে অন্যদের যেতে হলে জেনারেল নাইংয়কে সন্তুষ্ট করতে হবে। বাংলাদেশকে সেই চেষ্টা না করে উপায় নেই। আবার রোহিঙ্গা স্বার্থের বাইরে এসে দক্ষিণ সীমান্তে নিজ স্বার্থের কথা ভাবতেও অভ্যস্ত হতে হবে আমাদের আসন্ন দিনগুলোতে।

বাংলাদেশ এখন আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগে যত ইতস্তত করবে, তত শেষোক্তরা বন্ধুত্বের জন্য অন্য কাউকে খুঁজবে এবং সেটা পাওয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব নয়। অন্তত যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের আরাকান নিয়ে আগ্রহী না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

কেবল ভৌগোলিক কারণেই নয়, সম্ভাব্য সম্পদ সমাবেশেও আরাকানের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। কক্সবাজার থেকে ইরাওয়াদি পর্যন্ত অনেক দীর্ঘ এক সমুদ্র উপকূল পাচ্ছে তারা। মিয়ানমারের অনেক প্রদেশ ও বিভাগের সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের এ রকম সুযোগ নেই। 

আরাকান স্থলবেষ্টিত নয় এবং ভারত বা বাংলাদেশের সহযোগিতা ছাড়াও মাতৃভূমিকে পুনর্গঠন করার মতো প্রাকৃতিক সম্পদ আরাকান আর্মির আছে। নৈতিকভাবেও তারা খুবই উচ্চাবস্থায় আছে। খুব শিগগির হয়তো সমুদ্রপথের খ্যাতনামা কেন্দ্র হয়ে উঠবে এ জায়গা। এ-ও প্রায় নিশ্চিত, ম্রাক-উতে আরাকান আর্মির প্রশাসনিক দপ্তর চালু হওয়ামাত্র প্রদেশটির সর্বত্র দেশ গঠনের ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরি হবে।

এ রকম বাস্তবতাতেও দক্ষিণ সীমান্তের অপর দিকে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতামত দেখা যাচ্ছে মিশ্র। উদীয়মান বৈশ্বিক ঠান্ডা যুদ্ধের মাঝে রোহিঙ্গা ও তাদের আশ্রয়দাতারা আরাকানের সম্ভাব্য গুরুত্ব বুঝতে বেশ বিলম্ব করেছিলেন বলেই মনে হয়। প্রদেশটি মিয়ানমারের একমাত্র এলাকা, যেখানে বামারদের তাড়ানোর ব্যাপারে উপদলীয় মতভেদ নেই।

মিয়ানমারজুড়ে অং সান সু চির বিপুল জনপ্রিয়তার মধ্যেও নির্বাচনের কৌশলে এবং প্রদেশের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে রাখাইনরা সব সময় ঐক্যবদ্ধ থেকেছে। এই ঐক্যের কারণেই মিয়ানমারে তাদের গেরিলা দলটি সবচেয়ে নবীন হয়েও টাটমা-দোর বিরুদ্ধে সবচেয়ে সফল। এই সফলতা অনুমান অযোগ্য ছিল না। কিন্তু বহু লেখালেখির পরও বাংলাদেশের এ বিষয়ে দূরদর্শী উপলব্ধির ঘাটতি ছিল।

এই ঐতিহাসিক বাস্তবতা বুঝতে ঢাকায় অনেকে ব্যর্থ হয়েছেন, আরাকানের মানুষদের হারানো স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার রাজনৈতিক ন্যায্যতা রয়েছে এবং তারা অনেক রক্তের বিনিময়ে সেই স্বাধীনতার স্বপ্নকে আপাতত স্বায়ত্তশাসনের আদলে ফিরে পাচ্ছে। একই রকম স্বায়ত্তশাসনের স্বপ্ন ছিল ব্রিটিশরা এই অঞ্চল ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় জাফর কাওয়ালের মতো মুসলমান বিপ্লবীদেরও, যে বিপ্লবীরা আরাকানে এসিপি নামে পরিচিত স্থানীয় রাখাইন কমিউনিস্টদের সঙ্গে কাজ করতেও দ্বিধান্বিত ছিলেন না।

অথচ আন্তর্জাতিক নানা শক্তি রোহিঙ্গাদের মধ্যে ঢুকে ক্রমে স্থানীয় মুসলমানদের স্বাধিকারের লড়াইকে ধাপে ধাপে এতই বিভ্রান্ত করেছে, ২০২৪ সালে এসে তারা প্রদেশের অপর বৌদ্ধধর্মাবলম্বী জাতির সঙ্গে সমানতালে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক বোঝাপড়ার শক্তি প্রায় পুরো হারিয়ে ফেলেছে। ফলে এখন কিছু ‘ছাড়’ দিয়ে হলেও অতীত অবস্থান সংশোধন করা জরুরি।


বাংলাদেশের সামনে ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ 
রাখাইনদের হাতে আকিয়াবের সম্ভাব্য পতনকে বাংলাদেশ তার আসিয়ানমুখী অভিযাত্রায় বাধা হিসেবেও দেখতে পারে, আবার দারুণ সুযোগ হিসেবেও নিতে পারে। বাংলাদেশ তার চারদিকের সীমান্তের মধ্যে এই প্রথম একদিক থেকে সম্পর্ক পাতানোর এমন এক আহ্বান পাচ্ছে, যেখানে তার জন্য অধীনতার কোনো শঙ্কা নেই। 

আরাকান আর্মি মোটাদাগে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি করেনি কখনো, যেমনটি করেছে টাটমা-দো। এখন তারা সীমান্তের এদিক থেকে ‘বন্ধুত্বে’র স্বীকৃতি চাইছে; মানবিক সহায়তাও চায়। সর্বোপরি নতুন করে রোহিঙ্গাদের এদিকে আসা ঠেকাতেও তাদের ‘সদয়’ সক্রিয়তা দরকার। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে অগ্রসর হওয়াটাই স্বাভাবিক।

অন্যদিকে আরাকানে রাখাইনদের ভূমিধস বিজয় মিয়ানমারজুড়ে অন্যান্য প্রদেশেও মৃদুলয়ে হলেও জান্তাবিরোধী গেরিলা যুদ্ধে নতুন করে উদ্দীপনা ছড়াচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের সামনে আরাকান আর্মি ছাড়াও মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী ছায়া সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনেরও বাস্তব চাপ তৈরি হবে। কিন্তু আগামী বছর সামরিক সরকার সেখানে যে নির্বাচন করার কথা ভাবছে, সেটা নেপিডোতে টাটমা-দোর কর্তৃত্ব প্রলম্বিত হওয়ারও ইঙ্গিত দেয়। 

অর্থাৎ বাংলাদেশকে একদিকে নেপিডোতে জান্তা, রাখাইনে আরাকান আর্মি এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে ‘জাতীয় ঐক্য সরকার’– এর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জটিল ত্রিমুখী এক কৌশলে অভ্যস্ত হওয়ার বাস্তবতায় ফেলেছে। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো অনেকেই একই রকম কৌশল নিয়েছে বা নেবে। কিন্তু নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে এ রকম সাহসী ও জটিল অবস্থান এবং উদ্যোগ নেয়ায় ঝুঁকিও থাকছে।

 ● আলতাফ পারভেজ, গবেষক ও লেখক



আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

টঙ্গীতে পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
টঙ্গীতে ঝুটের গুদামে ভয়াবহ আগুন, আধাঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে
ইউনিয়ন ব্যাংকেরও শীর্ষ খেলাপি দেশবন্ধু গ্রুপ
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির ৮৯৬তম সভা অনুষ্ঠিত
ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সভা
পদত্যাগ করলেন আটাবের সবুজ মুন্সী
ঢাকা দুই সিটিতে আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় বিএনপির ব্যাপক তদবির
রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১২ বছর , তবু মেলেনি বিচার, নিশ্চিত হয়নি ক্ষতিপূরণ
শিগগিরই ঢাকা শহরে অটোরিকশার ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে অভিযান: ডিএনসিসি প্রশাসক
মতামত- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝