গাজীপুরের কাল মেঘা রিসোর্টে অভিযান চালিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) গাজীপুর ডিএনসির উপ পরিচালক মো. এমদাদুল ইসলাম মিঠুনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা হয়। সেখানে বিপুল পরিমাণ মদ বিয়ার ও নারীর দেখা মিললেও অজ্ঞাত কারণে সেই অভিযানে কিছুই পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে মিঠুনের নেতৃত্বে ‘কাল মেঘ‘ রিসোর্টে অভিযান হয়। সেখানে বিপুল পরিমান মদ-বিয়ার ও মদপানের জন্য আসা ব্যক্তিদের মনোরঞ্জনের জন্য বেশকজন তরুণীকে পাওয়া যায়। এক পর্যায়ে মদ-বিয়ার জব্দ ও নারীদের আটকের উদ্যোগ নেয় আভিযানিক দলটি। অভিযান চলাকালীন রিসোর্টে অবস্থানরতদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তল্লাসির নামে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় ২০/২৫ জনের অভিযানিক দল। তাদের সঙ্গে একজন নারী সদস্যও ছিলেন। প্রথমে ভেতরে ঢুকতে না দিলে দরজা ভেঙ্গে ঢোকার চেষ্টা করে দলটি। কিন্তু রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয় দর কষাকষি।
পরে নগদ ৫ লাখ টাকা দেয়া হয় দলের নেতৃত্বে থাকা ডিএনসির উপ-পরিচালক এমদাদুল ইসলাম মিঠুনের হাতে। এই টাকা নিয়ে ভোল পাল্টে ফেলেন ডিএনসির এই কর্মকর্তা। লিখে দেন সেখানে কিছুই পাওয়া যায়নি। অথচ ইতিমধ্যে ওই অভিযানের ভিডিও ফুটেজ ‘আজকের দৈনিক’র হাতে এসেছে।
এদিকে গত ৫ আগস্টের পর সরকারের সকল সেক্টরে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলেও ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর’ চলছে আগের সরকারের লোকদের পরিচালনায়। যে কারণে এখনো বিভিন্ন বার বা রিসোর্টে অভিযানের নামে মোটা অংকের টাকা হাতানোর ঘটনা চলছে। অবশ্য এই টাকার একটা নির্দিষ্ট ভাগ মহাপরিচালক পর্যন্ত পৌছে যায় বলে কথিত রয়েছে।
অধিদপ্তরের গাজীপুর সার্কেলের উপ পরিচালক মিঠুনকে প্রাইজ পোস্টিং দিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান। নিজের কাছের লোক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা হওয়ায় মিঠুনকে এই পোস্টিং দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। মিঠুন বঙ্গবন্ধু পরিষদের দুই কমিটির নেতা ছিলেন। প্রধান কার্যালয়ে ছিলেন মিঠুন। পরে তাকে গাজীপুরে পোস্টিং করা হয়।
কাল মেঘা রিসোর্টে অভিযানের বিষয়ে এমদাদুল ইসলাম মিঠুন বলেন. ‘কাল মেঘা রিসোর্ট লাইন্সধারী একটি প্রতিষ্ঠান। বৃহস্পতিবার তাদের কোন টিম সেখানে অভিযান চালায়নি।’ টাকার লেনদেনের বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তিনি কখনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সরকারের প্রয়োজনে দায়িত্ব পালন করেছেন।’ বঙ্গবন্ধু পরিষদের দুই কমিটির নেতা ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো গোষ্ঠি তাকে হেয় করতে কমিটি বানিয়ে প্রচার করছে।
অবশ্য মিঠুন বঙ্গবন্ধু পরিষদের ২০২২ সালের কমিটিতে সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এবং ওই কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। যার প্রমাণও আজকের দৈনিক’র কাছে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কাল মেঘা রিসোর্টে অভিযানের বিষয়ে তার জানা নেই। প্রতিষ্ঠানটি লইসেন্সধারী হলেও শর্ত মেনে পরিচালনা করছে কি না তা দেখা উচিৎ।’ মিঠুন বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কাগজপত্র দেখতে হবে, সঠিক নাও হতে পারে।’ কিন্তু ওই কমিটির কাগজে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে কমিটির প্রধান উপদেষ্টা তিনি নিজেই।