লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে ২০২৬-এর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে একধরনের ঘোষণা আসে। কিন্তু এখনও সুনির্দিষ্টভাবে প্রধান উপদেষ্টা কিংবা কমিশনের তরফ থেকে এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসেনি।
সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকেও আলোচনায় ছিল নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার বিষয়টি। এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আশ্বস্ত করলেও এ নিয়ে সংশয় কাটেনি।
এমন দ্বিধান্বিত বাস্তবতায় নির্বাচন ঘিরে সরকারের পদক্ষেপ যথেষ্ট নয় বলে মনে করে রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে চায় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রোজার শুরুর এক সপ্তাহ আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দেবেন। সেজন্য আমরা অপেক্ষা করছি। গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি হবে হয়তো ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমরা সেজন্য অপেক্ষা করবো।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এখন উচিত হবে ইমিডিয়েটলি সরকারের দিক থেকে নির্বাচন কমিশনকে একটা রাজনৈতিক নিদের্শনা দেয়া, তাহলে নির্বাচনকেন্দ্রীক যে সংশয়-সন্দেহ অবিশ্বাস যেটা সরকারের উদ্দেশ্য নিয়েও এখন নানা প্রশ্ন উত্থাপতি হচ্ছে বহু জায়গা থেকে তাহলে এটার একটা অবসান ঘটে।
সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগ তুললেও সুনির্দিষ্ট ঘোষণার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে জামায়াতে ইসলামী।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বললেন, সরকার তো বলেছে ইতিহাসের সেরা নির্বাচন দেবে। সেরা নির্বাচনের আয়োজন তো আরও সেরা হতে হবে। আমরা মনে করি না যে দেশে নির্বাচন করার মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার জায়গাটায় আমরা জোর দিচ্ছি।
এদিকে, নির্বাচনকালীন সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে দেখতে চায় রাজনৈতিক দলগুলো। সে লক্ষ্যে উপদেষ্টা পরিষদে বিতর্কিত ও ব্যর্থদের বাদ দেয়ার পক্ষে বিএনপি-জামায়াতসহ বাদবাকি দলগুলো।
সালাহউদ্দিন আহমদ বললেন, আমরা বলেছি যে সরকারের মধ্যে কয়েকজন উপদেষ্টা আছে, যাদেরকে রাখলে সেটা নিরপেক্ষ চরিত্র হারাবে। তাদেরকে যেন তিনি অন্তত অপসারণ করেন যথেষ্ট সময়ের আগেই। কারণ, একটা নতুন দল গঠিত হয়েছে, এখনও ওখানে তাদের দুইজন প্রতিনিধি আছে। জনগণ বুঝতে চায় না যে অধ্যাপক ইউনূস অনিরপেক্ষ মানুষ।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, যার যার মন্ত্রণালয়ের সাফল্য রয়েছে তাদেরকে রেখে বাকি যেখানে ব্যর্থতা আছে সেগুলো এড্রেস করা উচিত, সে জায়গায় পুনর্গঠনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
সাইফুল হক বললেন, কোনও বিশেষ দল, মতাদর্শ, কোনও অংশকে কোনোভাবেই মদদ জোগানো বা পরোক্ষ কোনও সহযোগিতা জোগানো তাদের কাজ না। ১০ থেকে ১১-১২ জনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে বাস্তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চরিত্র-বৈশিষ্ট নিয়ে কাজটা করতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মতে, জুলাই সনদ ও গণহত্যার বিচারে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। তাই প্রতিশ্রুত সময়েই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে কোনো বাধা নেই। তাই সুনির্দিষ্ট ঘোষণায় বিলম্ব হলে দেখা দেবে আস্থার সংকট। সেই সাথে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে পড়লে নির্বাচনকালীন নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিও উঠতে পারে বলে মত নেতাদের।