অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী দেশে অস্থিতিশীলতা সৃস্টিকারীদের সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালানোর দৃশ্য মনে করাতে বলেছেন। ফারুকী আরো লেখেন, ‘একই সাথে সবার প্রতি আহ্বান, আমরা যেন একটু সংযমের পরিচয় দেই। আজকে চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার ঘটনায় অপরাধীদের ধরার জন্য আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট। আসুন আমরা জাস্ট সজাগ থাকি, এক থাকি।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দিবাগত রাতে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশের ভেতরে এবং বাইরে বসে যারা বীণ বাজাচ্ছে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য, তাদের কেবল হাসিনার পলায়নের দৃশ্যটা মনে করতে বলবো।’
তিনি বলেন, মঙ্গলবার হিন্দু উগ্রবাদী সংগঠন ইসকনের সাবেক নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে তার অনুসারীদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আদালতের নিচতলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা সাইফুল ইসলাম আলিফ (৩৫) নামে এক আইনজীবীকে পাশের জঙ্গল সিনেমা লেনে নিয়ে গিয়ে মারধরের পর কুপিয়ে হত্যা করে।
গুরুতর আহত অবস্থায় মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন বলেছেন, ‘ঘটনাস্থলেই হয়তো সাইফুল মারা যায়। হাসপাতালে নিয়ে আসার পরে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত্যু ঘোষণা করে।’
এদিন কোতোয়ালী থানার নিউমার্কেট মোড়ের স্বাধীনতা স্তম্ভে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে হওয়া মামলায় রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আদালতে হাজির করা হয়। তার পক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করলে বেলা পৌনে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
এই আদেশের পরপরই এজলাসের বাইরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ভক্ত-অনুসারীরা। এরপর প্রায় আধ ঘণ্টা এজলাসের বাইরেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। বেলা সোয়া ১২টার দিকে তাকে এজলাস থেকে বের করে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্রিজনভ্যানে তোলা হলে প্রিজনভ্যানের সামনেই বসে বিক্ষোভ করতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা।
ওইদিন দুপুর ১২টার পরপরই আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারী ও আইনজীবীদের একাংশ। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যকে নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রায় তিন ঘণ্টা তারা প্রিজনভ্যান আটকে রাখার পর বেলা ৩টার দিকে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ।
ইতোমধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। মঙ্গলবারের ঘটনায় দু’টি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বুধবার চট্টগ্রাম নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কাজী মো: তারেক আজিজ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে।
আটকদের যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতভর নগরীর পাথরঘাটা, মেথর পট্টি, আন্দরকিল্লা ও হাজারী গলি এলাকায় যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় একটি এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার ঘটনায় আরেকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে আটক ব্যক্তিদের এসব মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে।
এদিকে আজ বুধবার মহানগর দায়রা জজ আদালতে মঙ্গলবারের আবেদনের ওপর শুনানির কথা থাকলেও আইনজীবী সাইফুল হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আদালত বর্জনের ডাক দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি। ফলে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানি স্থগিত করা হয়েছে।
আ. দৈ. /কাশেম