শুক্রবার, ১ আগস্ট ২০২৫,
১৭ শ্রাবণ ১৪৩২
ই-পেপার

শুক্রবার, ১ আগস্ট ২০২৫
সারাদেশ
দেশে পরিকল্পিতভাবে খাদ্য সংকট তৈরিতে বিএডিসির জমাটবাধা ও মেয়াদউর্ত্তীন সার দেয়া হচ্ছে কৃষকদের
কৃষি উপদষ্টোকে বেকায়দায় ফেলতে সাবেক কৃষিমন্ত্রীর সার সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
Publish: Friday, 18 October, 2024, 6:23 PM  (ভিজিট : 170)

 ছবিতে - মুন্সিগঞ্জের মোক্তারপুর ঘাটে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ বস্তা পঁচা-গলা সার পড়ে রয়েছে

কৃষি নির্ভর বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে তীব্র খাদ্য সংকটে ফেলার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদশে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে আমলার নিয়ন্ত্রিত শক্তিশালী সিন্ডিকেট এখনো নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বাংলাদেশে ধান, গম, আলু, ভুট্টা,সড়িশা, ছোলা এবং নানা ধরনের শবজিসহ খাদ্যের বেশিভাগ চাহিদা পুরনে ভূমিকা রাখছেন কৃষকরা।

 গ্রাম বাংলার সহজ সরলমনা নিরীহ কৃষকদেরকে সময় মতো মান সম্পন্ন সার ও বীজ সরবরাহ করার দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণলয় এবং বিএডিসি কর্মকর্তাদের। এই সুযোগে গত ১৫ বছর ওই সিন্ডিকেট সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারি গোডাউনে ধারণ ক্ষমতার ও চাহিদার অতিরিক্ত বিদেশ থেকে সার আমনির মাধ্যমে সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। ওই সিন্ডিকেট বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার এবং কৃষি উপদষ্টোকে বেকায়দায় ফেলার পাশাপাশি কৃষকদেও সর্বনাশ করার জন্য নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ১৫ বছর কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিএডিসির কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে সিন্ডিকেট অনিয়ম তান্ত্রিকভাবে সরকারি গোডাউনে ধারণক্ষমতার অনেক বেশি হাজার কোটি টাকার সার আমদানি করেছে। যার অধিকাংশই খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় সার আমদানীতে দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বিএডিসির সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দাখিল করেছেন বিএডিসির বৈষম্য ও দুর্নীতি বিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সময় গড়ে ওঠা বিএডিসি সার সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়। তাদের ব্যবসায়িক ফাঁদে সরকারের আমদানি করা কয়েক হাজার কোটি টাকার সার নষ্ট হচ্ছে। মুন্সিগঞ্জের মোক্তারপুর ঘাটে খোলা আকাশের নিচে আমদানি করা কয়েক লাখ বস্তা সার জমাট বাধা অবস্থায় পড়ে আছে। ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় ওইসব জমাট বাধা সার মেশিনে ভেঙ্গে আবার নতুন সারের সঙ্গে মিশিয়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করার অপচেষ্টা চলছে। এতে করে সারের কার্যকারিতা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কৃষিপ্রধান দেশে কৃষির ক্ষতি হওয়ার শঙ্কাও জেগেছে তাতে করে।

অভিযোগ উঠেছে, মুন্সিগঞ্জের মোক্তারপুর ঘাটে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ বস্তা পঁচা-গলা সার পড়ে রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার গুদাম রক্ষকদের সঙ্গে দফা-রফা করে ওই সার পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগাওে থাকলেও তার রেখে যাওয়া সিন্ডিকেট আরো শক্তিশালী হয়েছেন।

মুন্সিগঞ্জ জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মো. আব্দুল আজিজের স্বাক্ষরে গত ১১ /০২/ ২০২৪ ইং তারিখে জারি করা এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত নভেম্বর ২০২৩/ গত ডিসেম্বর ২০২৩ এবং জানুয়ারি ২০২৪/ বিএডিসি মেড্ড ও দাউদকান্দি গোডাউন থেকে  বরাদ্দকৃত ডিএপি সার সরবরাহ করা হয়। ওই সার জমাটবদ্ধ হওয়া কৃষকরা আপত্তি জানিয়েছেন এবং বিরুপ মন্তব্য করেছে।এরপর গত ০১/১০ /২০২৪ ইং তারিখে বিএডিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদ্দুল্লাহ সাজ্জাদকে এনডিসিকে ওএসডি করা হয়। ড. নূরুন্নাহার চৌধুরী বিএডিসির সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে গত ১৪ /১০/ ২০২৪ ইং তারিখে  প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক পদে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি এই বদলিকৃত ওই দপ্তরে যোগদান করেননি।
 
সম্প্রতি বিএডিসির কর্মচারীদের পক্ষে মোখলেছুর রহমান নামে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগসহ আবেদন দাখিল করেন। তার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর্নীতি অব্যাহত থাকায় হাজার কোটি টাকা সরকারের লোপাট হয়েছে এবং সাধারণ কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। সারা বছর খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়েছে বিএডিসির আমদানিকৃত লাখ লাখ বস্তা নন-ইউরিয়া সার। আসন্ন বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে পঁচা সার শুকিয়ে ক্রসিং করে নতুন বস্তায় ভরে বিএডিসি গুদামে পাঠাচ্ছেন সংশ্লষ্টি পরিবহন ঠিকাদাররা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কৃষি সেক্টর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

দুদকের দায়ের করা অভিযোগে আরো বলা হয়, সারা দেশের বিএডিসির গুদামগুলোর ধারণক্ষমতা দুই লাখ ৪০ হাজার থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন সারের। অথচ প্রতিবছর বিএডিসি আমদানী করে ২০ থেকে ২২ লাখ মেট্রিক টন সার। ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত সার আমদানি করার কারণে সময় মতো সার পৌঁছে দিলেও গুদামে জায়গার অভাবে তারা পুরো সার বুঝে নিতে ব্যর্থ হয়। 

অভিযোগে বলা হয়েছে, বিএডিসির সিন্ডিকেটের যোগসাজসে কিছু ঠিকাদার পরিবহনের কাজ নিয়ে আমদানি করা ওই সার দীর্ঘদিন ধরে কালো বাজারে বিক্রি করে আসছে। গত বছরের থাকা প্রায় ২০ লাখ বস্তা ডিএডিসির সার ভিজে নষ্ট হয়। ওই পঁচা সার রোদে শুকিয়ে ভালো সারের সঙ্গে মিশিয়ে বিএডিসির গুদামে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে, বিগত সরকারের সময় গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছে। 

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএডিসির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুলাহ সাজ্জাদ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সার ও বীজ আমদানী মজুত এবং টেন্ডার পাইয়ে দিতেন। চক্রের অন্যতম হোতা ড. নূরুন্নাহার চৌধুরী এবং তার স্বামী সাবেক জনপ্রশাসন ও বর্তমান সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়ে ডেপুটেশনে থাকা অতিরিক্ত সচিব জিয়াউল হক। ড. নূরুন্নাহার চৌধুরী বিএডিসির সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব। তিনি বিএডিসির ভেতরকার সব ম্যানেজ করেন। আ সরকারের উপর পর্যায় দেখেন তার স্বামী জিয়াউল হক। 
অবশ্য গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে সারের সিন্ডিকেট করার অভিযোগ অস্বীকার করেন ড. নূরুন্নাহার চৌধুরী। তিনি বলেন, মুন্সিগঞ্জের মুক্তাপুরে আকাশের নিচে সার আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ আসলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব, বিষয়টির খোঁজ নিব। তিনি বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে অনিয়মের কোনো অভিযোগ পাইনি। মূলত আমদানির করার পর সার ঠিকাদারদের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। সারাদেশে ডিলারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। অনিয়মের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর ঘাটে সার পড়ে থাকা এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া সার নতুন সারের সঙ্গে মেশানোর বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মুন্সীগঞ্জের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন সরকার বলেন, সার সাধারণ চট্টগ্রাম থেকে লাইটার জাহাজে আসে। অনেক সময় সেগুলো জাহাজে থাকতেই বস্তাবন্দি করা হয়। এখানে সারা দেশের জন্যই সারা আসে। আমরা শুধু মুন্সীগঞ্জের জন্য আসার সারের বিসয়ে সামগ্রিক সবকিছু দেখতে পারি। সব জেলার বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারে নেই। আমরা দেখতে চাইলেও সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকরা মন্ত্রণালয় কিংবা উপর মহলের কথা টানেন। তাই আমাদের খুব বেশি করার থাকে না। 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মুন্সীগঞ্জের উপ পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, সার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের। তারপরও আমি বিষটি খোঁজ-খবর নিচ্ছি। পরে বিস্তারিত বলতে পারব।


আ.দৈ. /কাশেম
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৪১৪তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত
মিডল্যান্ড ব্যাংক ও টালিখাতার উদ্যোগে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর জন্যে ডিজিটাল আর্থিক সেবায় নতুন সম্ভাবনা
মেঘনা ব্যাংকের ১৯৬তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৯৭তম সভা অনুষ্ঠিত
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক সিকিউরিটিজের ৪৯তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

কমার্স ব্যাংকের এমডি মোশারফ হোসেনকে অপসারণ
দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কৃত ওমর ফারুক এমডি হতে মরিয়া
কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থী সাজিদের মৃত্যুর কারণ উদঘাটনের পক্ষে ইবি উপাচার্য
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে সংসদ: সালাহউদ্দিন
জুলাই শুধু স্বৈরাচার মুক্তির নয়, পুনর্জন্মেরও মাস: প্রধান উপদেষ্টা
সারাদেশ- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝