কক্সবাজারের রামু সরকারি কলেজের অচলাবস্থা নিরসনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে আর্থিক ক্ষমতা দেওয়ার জন্য গত ১ অক্টোবর এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে একটি চিঠি ইস্যু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। চিঠিতে পরবর্তী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় তদন্ত কর্মকর্তাকে। অদৃশ্য কারণে চিঠি ইস্যুর ১৭ দিন পার হলেও সেই চিঠি পাননি বলে জানালেন তদন্তকারী কর্মকর্তা কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: সোলাইমান। বিষয়টি নিয়ে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি চাওয়া মুজিবুল আলম পুনরায় স্বপদে বহাল থাকার জন্য নানাভাবে অপচেষ্টা করছেন এবং তদন্তের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও করছেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বাধাদান, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও মারধরের অভিযোগসহ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতিতে অভিযোগ রয়েছে মুজিবুল আলমের বিরুদ্ধে।
রামু কলেজে আমরা নতুন অধ্যক্ষের হাতে পরিচালনার দ্বায়িত্ব দেখতে চাই। ১৭ দিনেও পৌঁছায়নি তদন্ত কর্মকর্তার চিঠি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে।
গত ১ অক্টোবর চিঠি ইস্যু করা হলেও সেই চিঠি ১৭ দিনেও তদন্ত কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কলেজে পৌঁছায়নি। মাউশির সহকারী পরিচালক (কলেজ-৪) মো: আরশাদ আহমেদ মিহাদ স্বাক্ষরিত এ চিঠির স্মারক নম্বর-৩৭,০২,০০০০, ১০৩, ৪৩, ০৩২, ২০১৫-১৮২২।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রামু সরকারি কলেজে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (বিসিএস ক্যাডার) সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ এবং কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রাখার স্বার্থে আর্থিক ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত পূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য নিন্মবর্ণিত কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। চিঠিতে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: সোলাইমানকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে প্রতিবেদন ৩ কর্মদিবসের মধ্যে অধিদপ্তর বরাবর পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তবে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: সোলাইমান গত বৃহস্পতিবার দৈনিক বার্তা সরনীকে জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি এখনও হাতে পাননি। এদিকে যার স্বাক্ষরে চিঠিটি ইস্যু করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (কলেজ-৪) শেখ আরশাদ আহমেদ মিহাদ চিঠি ইস্যুর বিষয়টি স্বীকার করেন।
তিনি দৈনিক বার্তা সরনীকে বলেন, এ রকম একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে জানি। কিন্তু এখনও কেন পৌঁছায়নি বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রেজাউল করিম সাজিব ও মঈনুল হাসান জিহাদ জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে গঠিত পৃথক তদন্ত কমিটি সরেজমিনে তদন্তের বছর পার হলেও এখনও সেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নিজের অনিয়ম-দুর্নীতি ধামাচাপা দিয়েছেন অধ্যক্ষ।এ দুই শিক্ষার্থী জানান, কলেজে একজন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়নের জন্য মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একাধিক আবেদন জানানো হলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলার একমাত্র সরকারি কলেজটির অচলাবস্থা কাটছে না।
তদন্ত ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন মুজিবুল আলম। তিনি বলেন, তদন্তের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। চিঠি ইস্যু হলে তো আমিও চিঠি পেতাম। আপনি পুনরায় এ কলেজে আসতে চাইছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি চাওয়ার কে, মন্ত্রণালয় যেখানে দেবে আমি সেখানে যাবো। রামু কলেজে দিলে রামু কলেজে যাবো।
প্রসঙ্গত, প্রশংসাপত্র বিতরণ, ভর্তি বাতিল, নির্বাচন পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের জরিমানাসহ কয়েকটি খাতে বিনা রসিদে টাকা আদায়, অসংখ্য ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ, কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের নাম ধরে ডাকা, শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, সরকারিকরণের পাঁচ বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেসরকারি নিয়মে বেতন ও অন্যান্য ফি আদায়সহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের বিরুদ্ধে। গত এক বছর ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অসংখ্যবার এসব অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
সর্বশেষ গত জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বাধাদান, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও মারধরসহ নানা অভিযোগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ১৯ আগস্ট অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন মুজিবুল আলম। এর আগে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি কলেজে অনুপস্থিত।
আ. দৈ. /কাশেম /বিজন কুমার