রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫,
১ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
মতামত
চাকরির জন্য তরুণদের কতটুকু প্রস্তুত করছে বিশ্ববিদ্যালয়
তারিক মনজুর
Publish: Thursday, 10 October, 2024, 12:28 PM  (ভিজিট : 165)
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ বছর করার আন্দোলন চলছে। আন্দোলনকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু প্রশ্ন এসে যায়। তাঁরা দাবি করছেন, মেধা ও যোগ্যতা প্রমাণের ক্ষেত্রে বয়স কোনো বাধা হতে পারে না।

এক্ষেত্রে প্রশ্ন, আদৌ কি আমাদের নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে মেধা ও যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ আছে? কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি তরুণদের চাকরির বাজারের উপযোগী করে তৈরি করতে পারছে? 

যাঁরা সবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন, তাঁদের একটি বড় অংশ চাকরির আবেদনের বয়স বাড়াতে আগ্রহী নন। তাঁরা মনে করেন, অধিক বয়সী প্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নেয়ার কারণে চাকরির পরীক্ষায় যথেষ্ট এগিয়ে থাকেন। তাই তাঁদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা কঠিন। অথচ গত কয়েকটি বিসিএস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রায় ৪০ শতাংশের বয়স ২৩ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। আর ২৭ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী প্রার্থী শতকরা ১৫ ভাগের মতো। এর মধ্যে ২৯ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থী মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ। ফলে চাকরির বয়স বাড়ানো হলে ‘ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট’দের জন্য ক্ষতির কারণ হয়তো ঘটবে না। কিন্তু সমস্যা রয়ে যাচ্ছে অন্য জায়গায়।   

যেমন চাকরির আবেদনের বয়স ৩৫ করা মানে এই নয় যে ওই বয়সেই তিনি চাকরি শুরু করবেন। আবেদন করার পরে বিপুলসংখ্যক আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করার জন্য পিএসসিকে সময় নিতে হয়। এরপর প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হয়। সব মিলিয়ে অন্তত দেড়-দুই বছর পার হয়ে যায়। এরপর আছে চূড়ান্ত নির্বাচিত প্রার্থীদের গোপন তথ্য যাচাই ও প্রশিক্ষণের কাজ। এর ফলে শেষ পর্যন্ত ৩৫ বছর বয়সী তরুণকে আসলে ৩৭ থেকে ৩৮ বছর বয়সে চাকরি শুরু করতে হবে। পর্যালোচনা কমিটিকে এটিও বিবেচনায় নিতে হবে।

আবার গড় আয়ু বেড়েছে বলে চাকরির বয়সও বাড়াতে হবে, এটা ভালো যুক্তি হতে পারে না। দেশের উচ্চশিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশকে কেবল নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যস্ত রাখলে তা দেশের অর্থনীতি ও উৎপাদনের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। এটা ঠিক, পৃথিবীর অনেক দেশেই সিভিল সার্ভিসে যোগদানের ন্যূনতম বয়স ৩৫ বা তার বেশি। কিন্তু খেয়াল রাখা দরকার, সেখানে আবেদন করারও সীমা রয়েছে। সেটি ৫ থেকে ৭ বারের বেশি নয়। তা ছাড়া আমাদের মতো উচ্চ বেকারত্বের দেশে চাকরির ‘মুলা ঝুলিয়ে’ তরুণদের এভাবে বসিয়ে রেখে বেকারত্ব কমানোর আশা করা যায় না। 
 
প্রশ্ন আরও আছে। বছরের পর বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস বা সরকারি চাকরিতে যোগদানের জন্য তরুণদের মধ্যে এই দুর্দমনীয় আগ্রহ তৈরি হলো কেন? সহজ উত্তর- ক্ষমতা ও বিত্তের অধিকারী হয়ে ওঠার জন্য এর চেয়ে ‘শর্টকাট’ রাস্তা বুঝি আর নেই। ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি বা অন্য কোনো পেশাগত জায়গা থেকে পাস করা প্রার্থীদেরও তাই বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। 

পর্যালোচনা কমিটি পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষাগুলোকে নিয়মিত করার সুপারিশ করতে পারে। ইতিমধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কার হয়েছে। সেখানে মেধার সুযোগ অনেক বেড়েছে। এখন নিয়োগপ্রক্রিয়া অধিক স্বচ্ছ করার উপায় নিয়েও কাজ করা যায়। তবে সবকিছুর আগে দরকার প্রশ্নপদ্ধতির পরিবর্তন আনা। উন্নত দেশের নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে ভাষিক যোগাযোগ, বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত ক্ষমতা, সমস্যার সমাধান, দলগত কাজের দক্ষতা ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। 

অন্যদিকে আমাদের দেশের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নগুলো হয় প্রায় ক্ষেত্রেই মুখস্থনির্ভর। বহুনির্বাচনী প্রশ্নের মধ্য দিয়েও যে প্রার্থীকে বহুমাত্রিকভাবে যাচাই করা সম্ভব, সেটি আমাদের প্রশ্নকর্তাদের বিবেচনায় থাকে না। মুখস্থ বিদ্যা চাকরির বাজারের প্রধান যোগ্যতা হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার বছরখানেকের মধ্যে শিক্ষার্থীরা গাইড পড়া শুরু করেন। যে ধরনের প্রশ্নে পরীক্ষা হয়, সেগুলোর মাধ্যমে কি ‘উচ্চশিক্ষিত’ তরুণদের আলাদা করা সম্ভব? এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরাও এই প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে ‘বাজিমাত’ করে দেখাতে পারবেন! 

মোদ্দা কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম ও পড়াশোনা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তরুণদের চাকরির বাজারের উপযুক্ত করে তৈরি করতে পারছে না। অধিকাংশ বিভাগের পাঠক্রম কোনো সুনির্দিষ্ট শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে প্রণীত হয় না। ফলে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণাকাজের ক্ষেত্রগুলোও সুপরিকল্পিত নয়। তাছাড়া ক্যারিয়ার গঠনের জন্য দেশ-বিদেশের প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা ব্যক্তির সঙ্গে যে ধরনের যোগাযোগ তৈরি করা দরকার ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এখন আমাদের চিন্তা করা দরকার, উচ্চশিক্ষায় সব শিক্ষার্থীকে সুযোগ দেয়ার প্রয়োজন আছে কি না। যদি দিতেই হয়, তবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেই দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষার্থীদের কাজের উপযোগী করে গড়ে তোলার কিংবা কাজের বিকল্প পথ দেখানোর। তরুণদের দৃষ্টি সরকারি চাকরির সীমিত পরিসরের মধ্যে বন্দী হয়ে আছে। এখান থেকে তাঁদের দৃষ্টি মুক্ত করতে না পারলে আগামীর বাংলাদেশের মুক্তি নেই।


লেখক: তারিক মনজুর, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ভারতে ১৫০ পর্যটক নিয়ে ভেঙে পড়ল সেতু, স্রোতে ভেসে গেছেন অনেকে
ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ২৪৯
ইসরাইলি আগ্রাসন প্রতিরোধে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান
কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যায় ও দক্ষিণখানের কাওলায় রাজউকের মোবাইল কোর্ট
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন: ইশরাক
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

আগতাড়াইল মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উপহার সামগ্রী বিতরণ
ঢাকা উত্তরের কৃষকদল নেতা রাফেলসহ কয়েকজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ
‘আমার বুড়ো বাপকেও তুই ছাড়িসনি’ বলে আওয়ামী লীগ নেতাকে গণধোলাই
ডিএনসিসির উত্তরায় দিয়াবাড়ি কোরবানির পশুর হাটের বর্জ্য এখনো পড়ে রয়েছে
বিমান বিধ্বস্তে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন এক যুবক
মতামত- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝