দাঁতে গর্ত হলে বা ক্ষয়জনিত সমস্যা দেখা দিলে ফিলিং একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। বহু বছর ধরে দাঁতের ফিলিংয়ে আমলগাম নামক ধাতব পদার্থ ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে আধুনিক দাঁতের চিকিৎসা এখন অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত, নান্দনিক এবং টেকসই। এজন্য চিকিৎসকরা এখন রোগীদের কম্পোজিট ফিলিং গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন।
আমলগাম ফিলিং: পুরনো হলেও ঝুঁকিপূর্ণঃ
আমলগাম ফিলিং একটি ধাতব মিশ্রণ যা পারদ, রুপা, টিন ও তামা দিয়ে তৈরি। এটি শক্তিশালী হলেও নিচের সমস্যাগুলোর জন্য এখন অনেক চিকিৎসক আমলগাম থেকে সরে আসছেন।
এতে পারদ থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে; দেখতে ধূসর বা কালচে হওয়ায় দাঁতের সৌন্দর্য নষ্ট করে; দাঁতের সাথে ভালোভাবে আটকে থাকে না, ফলে ফাঁকা তৈরি হতে পারে; সময়ের সাথে দাঁতে ফাটল ধরতে পারে।
কম্পোজিট ফিলিং: আধুনিক ও নিরাপদ পছন্দ কম্পোজিট ফিলিং মূলত রেজিন ও ফাইবার উপাদানে তৈরি, যা দেখতে স্বচ্ছ ও প্রাকৃতিক দাঁতের রঙের কাছাকাছি। নিচের কারণে এটি বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয়:
দাঁতের রঙের মতো হওয়ায় দেখা যায় না; কম ক্ষয় করে দাঁতের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যায়; একদিনেই করা যায়, ব্যথাহীন এবং আরামদায়ক; পারদমুক্ত এবং শরীরের জন্য নিরাপদ; ছোট গর্ত হোক বা সামান্য ভাঙা, সব সমস্যাতেই ব্যবহারযোগ্য।
কোনটা বেশি টিকে থাকে?
অনেকে মনে করেন ধাতব ফিলিং বেশি টিকে থাকে। তবে সঠিকভাবে করা কম্পোজিট ফিলিং ৭-১০ বছর এর বেশি পর্যন্ত ভালো থাকে। তাছাড়া এটি দাঁতের সাথে এমনভাবে আটকে যায়, যাতে আবার নতুন করে গর্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে। এছড়া ফিলিং এর স্থায়িত্ব নির্ভর করে ভালো মেটেরিয়াল ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের উপর ।
আমাদের দেশে অনেকেই এখনও পুরনো অভ্যাসের কারণে আমলগাম ফিলিং করেন, যা আজকের দিনে ঝুঁকিপূর্ণ ও অপ্রয়োজনীয়।
কার জন্য কম্পোজিট ফিলিং উপযুক্ত?
যাদের দাঁতের সামনের অংশে গর্ত বা ভাঙা অংশ আছে; যারা দাঁতের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ফিলিং করতে চান; যাদের পারদের প্রতি অ্যালার্জি বা ভয় আছে; যাদের মুখের সৌন্দর্য গুরুত্বপূর্ণ।
দাম ও সময়ঃ
কম্পোজিট ফিলিং সাধারণত একটি দাঁতের জন্য ৩০–৪৫ মিনিট সময় লাগে। খরচ রোগীর সমস্যা ও দাঁতের অবস্থার ওপর নির্ভর করে। তবে বর্তমানে এটি অধিকাংশ রোগীর জন্যই সাশ্রয়ী। কম্পোজিট ফিলিং করার পর কোনো রোগী বুঝতেই পারে না কোন দাঁতে ফিলিং করা হয়েছে । সব রোগীই তাদের সন্তুষ্টির কথা জানায়।
শেষ কথা হচ্ছে, স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য দুটোই বজায় রাখতে চাইলে কম্পোজিট ফিলিংই সবচেয়ে ভালো সমাধান। আর যারা আগে আমলগাম ফিলিং করিয়েছেন, তারা চাইলে সেটি সরিয়ে নতুন ফিলিং করাতে পারেন। পুরনো দিনের ধাতব ফিলিং এখন সময়ের সাথে হারিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির অংশ হিসেবে কম্পোজিট ফিলিং দাঁতের চিকিৎসায় এনে দিয়েছে নতুন দিগন্ত। নিরাপদ, প্রাকৃতিক ও কার্যকর এই চিকিৎসা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ডা. মো. ইমরান হোসেন, চীফ কনসালট্যান্ট, ডেন্টাল ভিউ অর্থোডন্টিকস অ্যান্ড ইমপ্লান্ট সেন্টার, বনানী, ঢাকা - ১২১৩। ই-মেইল: imran92122@gmail.com
আ. দৈ./কাশেম/ এস রহমান