বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা অভিযোগ করেছেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ ঘিরে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে পরবর্তীতে একটি অর্থ উপার্জনের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। রোববার (২৮ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রায় দুই ঘণ্টা ২৪ মিনিট দীর্ঘ সেই লাইভে আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, সমন্বয়কারীদের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন তিনি।
লাইভে উমামা বলেন, “জুলাই অভিজ্ঞতা হিসেবে অনেক বড় ছিল, কিন্তু এটি পরিণত হয়েছে একটি ‘মানি মেকিং মেশিনে’। মুখপাত্র হওয়ার পরই বুঝতে পারি, এই আন্দোলনের নামে টেন্ডার বাণিজ্য, তদবির বাণিজ্য, এমনকি ডিসি-এসপি পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ পর্যন্ত চলছে।” তিনি জানান, এসব কর্মকাণ্ড এতটাই সাধারণভাবে চলছিল যে মনে হয়েছে, ‘রীতিমতো নিয়মিত পেশা’ হয়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পরদিন থেকেই সমন্বয়কারীর পরিচয়ে কেউ কেউ চাঁদাবাজি ও জায়গা দখলের মতো কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। “যে পরিচয় দিতে তারা একসময় অপছন্দ করত, সেই পরিচয়েই তারা ক্ষমতা দেখাতে শুরু করে। যেন 'সমন্বয়কবাহিনী' তৈরি হয়েছে,” বলেন তিনি।
প্ল্যাটফর্মটির অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়ে উমামা বলেন, "সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো হেয়ার রোডের উপদেষ্টাদের ঘরে বসে। আমরা যারা মাঠে কাজ করতাম, তারা কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিলাম। মাসের পর মাস স্ট্রেসে থেকেছি। কিছুই ঠিকঠাক ছিল না—স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজি, অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব—সবকিছুতেই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম।”
চট্টগ্রামসহ কয়েকটি অঞ্চলের বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপন করে তিনি বলেন, “কিছু ঘটনা খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখেছি, এসব অনিয়ম অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। শুধু চট্টগ্রামের পরিস্থিতি স্বচ্ছভাবে সামনে আনলেই অনেকের মুখোশ খুলে যেত।”
উমামা আরও জানান, জানুয়ারিতে আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তার ভাষায়, “জানুয়ারির শেষ দিকে বুঝে যাই, এই প্ল্যাটফর্ম আমার জায়গা না। ফেব্রুয়ারিতে কিছু সদস্য আবার যোগাযোগ করলেও পরে আমাকে ‘প্ল্যাটফর্ম দখলের চেষ্টা’ করায় অভিযুক্ত করা হয়।”
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, “এই প্ল্যাটফর্মে যোগ দেওয়া আমার জীবনের এক ট্র্যাজিক অধ্যায়। যারা মাঠে লড়েছে, তারা যখন সামান্য ক্ষমতার জন্য সস্তা কাজ করে, সেটা সহ্য করা যায় না। আমার মনে হয়, গত এক বছরে আমার অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়েছে।”
নিজের প্রতি ওঠা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে উমামা বলেন, “অনেকে বলেন আমি হাজার-কোটি টাকা কামিয়েছি। আমি শুধু বলব—আমি মোটামুটি সচ্ছল পরিবার থেকে এসেছি। আমার সিজিপিএ ভালো, বিদেশে যেতে স্কলারশিপ লাগে না। পরিবার আমাকে অর্থনৈতিক যন্ত্র না, মানুষ হিসেবে দেখে।”
লাইভের এক পর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে উমামা বলেন, “ন্যূনতম আত্মসম্মানবোধ থাকলে এই প্ল্যাটফর্মে টিকে থাকা কঠিন। আমি শুধু চাই, কেউ যেন আমার মতো অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে না যায়।”