বাংলাদেশের ইতিহাসে নজীরবিহীন বিচারের নামে অবিচারক ছিলেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ্ঞাবাহক সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি খায়রুল হক। শেখ হাসিনাকে দেশে গণতন্ত্র হত্যা এবং ফ্যাসিস্ট বানানোর মেইন আর্কিটেক্ট ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি খায়রুল হক।
সর্বশেষ খবরে জানা যায়, আজ বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি খায়রুল হককে মহানগর মিন্টোরোডে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। তাকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে । তবে আজ সন্ধ্যায় বিচারপতি এ বি খায়রুল হককে ঢাকা সিএমএম আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।
জানা যায়, ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির আসনে বসে দেশের বারোটা চাজিয়ে গেছেন তিনি। এ বি খায়রুল হকের এক রায়েই দেশের নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থাকে বাতিল করেন এবং আওয়ামী লীগের দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করার সুযোগ করে দেন। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য যাবতীয় আয়োজন করা হয়।
এ বি খায়রুল হকরে রায়ের পরই দেশে নির্বাচনী ব্যবসস্থা ধ্বংস হয়, সারাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গণে সহিংসতায় অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং গণতন্ত্রকে হত্যার পাশাপাশি একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছে। টানা ১৫ বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বাধীন আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিনের ভোট রাতেই সম্পন্ন করার সুযোগ নিয়েছে। দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং বিদেশে পাচারের নজির স্থাপন করেছে আওয়ামী সরকারের মনস্ত্রী. এমপি, দলীয় নেতা, ব্যবসাায়ী এবং কতিপয় সরকারি চাকরিজীবীরা।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল ৮টার দিকে ডিবি পুলিশ তাকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে আমরা আটক করে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র হত্যা এবং শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বানানোর মেইন আর্কিটেক্ট হলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি খায়রুল হক। তার এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে নতুন কোনো খায়রুল হক বিচারাঙ্গনে জন্ম না হয়।
জানা যায়, দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে এবিএম খায়রুল হক শপথ নেন ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। পরের বছর (২০১১ সাল) ১৭ মে ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন। গত বছর এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে বিচারক হিসেবে ‘দুর্নীতি ও বিদ্বেষমূলক’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনি রায় প্রদান ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে দণ্ডবিধির ২১৯ ও ৪৬৬ ধারায় শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়।
সম্প্রতি সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। ‘দেশের বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্র ধ্বংসের মূল কারিগর’ উল্লেখ করে তাকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানায় সংগঠনটি। বিচারাঙ্গনে তুমুলভাবে আলোচিত-সমালোচিত এ বিচারপতির বেশ কয়েকটি রায় চরম বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। তিনি সরকারের পক্ষে রায় দিয়ে আওয়ামী লীগ আমলে নানাভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছেন।
প্রধান বিচারপতি থাকাকালে ত্রাণ তহবিলের টাকায় নিজের চিকিৎসা করে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। অবসর নেওয়ার কয়েকদিন আগে তিনি ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেন। এতে দেশে রাজনৈতিক সংঘাতের পথ উন্মুক্ত হয়। পাশাপাশি শেখ হাসিনার ভোট ডাকাতির চূড়ান্ত সুযোগ তৈরি হয়।
রাজনৈতিক একটি বিষয়কে আদালতের আওতাধীন করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নন বলে রায় দিয়েছিলেন এবিএম খায়রুল হক। এছাড়া বিতর্কিত একাধিক বিচারপতিকে শপথ পড়ানো, আগাম জামিনের এখতিয়ার কেড়ে নেওয়া, খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গত ১৮ আগস্ট ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য ইমরুল হাসান বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় খায়রুল হকের বিরুদ্ধে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পরিবর্তন ও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে খায়রুল হক ছিলেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
আ. দৈ/ কাশেম