লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পাথরবাহী ট্রাক থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগে বুধবার রাতে দুইজনকে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে পাটগ্রাম থানায় ঢুকে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে ‘দুর্বৃত্তরা’ এ ঘটনা চালিয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম।
অন্যদিকে, বুধবার রাতে বিএনপিকে দায়ী করে জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন। তবে স্থানীয় বিএনপি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এ ঘটনায় পাটগ্রামের পাথর মহালের ইজারাদার মাহমুদ হোসেন বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি দাবি করেন, ইউএনও উত্তম কুমার দাশ, থানার ওসি মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে তাঁদের কাছে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। টাকা না দেওয়ায় ২ জুলাই চেকপোস্ট থেকে তাঁদের দুইজন কোয়ারি কর্মীকে ধরে নেওয়া হয়। বিষয়টি জানতে সেদিন রাতে থানায় গেলে ওসি তাঁকেসহ কয়েকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায়ীসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা থানার সামনে জড়ো হন। তখন ওসির নির্দেশে পুলিশ টিয়ারশেল ও গুলি চালায়। এতে অন্তত ১৭ জন আহত হন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও পাটগ্রামের ইউএনও উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘পাথর কোয়ারির ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে মহাসড়কে চলাচলকারী পাথরবাহী ট্রাক থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগে উপজেলার সরেওর বাজার এলাকা থেকে রাতে সোহেল রানা ও বেলাল হোসেনকে আটক করা হয়। পরে তাঁদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।’
পাটগ্রাম থানা–পুলিশ জানায়, আসামিদের থানায় আনার পরপরই কয়েক শ মানুষ থানায় হামলা চালায়। এতে থানার বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। কয়েকটি ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার ও জানালার কাচ ভাঙা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ভ্যানও ভাঙচুর করে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।
এ ঘটনায় হাতীবান্ধা থানা ও বড়খাতা হাইওয়ে থানা থেকে পাটগ্রামে পুলিশ পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও স্থানীয়দের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। পরে পাটগ্রামে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার, পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পাটগ্রাম থানা পরিদর্শন করেন।
এ সময় ডিআইজি আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, পাটগ্রামের সরেওর বাজার এলাকায় চাঁদা আদায়ের সময় ইউএনও ও ওসি ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে ধরে এনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেন। পরে থানায় নেওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা তাঁদের ছিনিয়ে নেয়। থানার ল্যাপটপ, পুলিশের পিকআপসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ভাঙচুর করে। বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির টহল চলছে। আইনগত বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করে ‘লাখ লাখ টাকা লুটপাটের’ অভিযোগ তুলেছেন।
এ ব্যাপারে পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সপিকার রহমান বলেন, ‘এ ঘটনা সম্পূর্ণ সাজানো। উপজেলা ও পৌর বিএনপি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। বিএনপির যে নাম বলা হচ্ছে, এটা একটা ষড়যন্ত্র। আমরা এটার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। যে দুইজনকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। বেলাল হোসেন এবং সোহেল রানা—তাঁরা বিএনপির বা স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে জড়িত নন। সদস্যও নন। থানা ভাঙচুরের ঘটনায় যদি বিএনপিকে জড়ানো হয় তা সম্পূর্ণ অন্যায় হবে।’