শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫,
৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ই-পেপার

শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
সারাদেশ
নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাব্বিরের পক্ষ ছাত্রদল নেতা জায়েদুল
নারায়নগঞ্জে সাবেক ছাত্রদল নেতার গুলিতে যুবদল কর্মী মামুনের মৃত্যু
ডেস্ক নিউজ
Publish: Wednesday, 11 June, 2025, 7:52 PM  (ভিজিট : 13)

নারায়নগঞ্জ জেলার জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক জায়েদুল ইসলামের গুলেতে যুবদল কর্মী মামুন ভূঁইয়ার (৩৫) মৃত্যূ হয়েছে।  গতকাল মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে মাঝিপাড়া এলাকায় মামুনকে করা গুলি তাঁর কানের পাশে মাথায় লাগে।  উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মামুন মারা যান।

স্থানীয় লোকজন গণমাধ্যমকে জানান, গতকাল মঙ্গলবার  দুপুরে মাঝিপাড়া এলাকায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ভুলতা ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন ওরফে খোকাকে আটক করেন এলাকাবাসী। সেখানে যুবদল নেতা বাদলের অনুসারী কর্মী-সমর্থকেরাও ছিলেন।  আটক ছাত্রলীগ নেতাকে বাদলের বাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে নিজের অনুসারীদের নিয়ে উপস্থিত হন জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক জায়েদুল ইসলাম।  

তখন জায়েদুল প্রভাব বিস্তার করে সাব্বিরকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে বাদলের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ শেষে এলাকা ছাড়ার সময় মাঝিপাড়া এলাকায় মামুনকে একা পেয়ে গুলি করা হয়। একটি গুলি তাঁর কানের পাশে মাথায় লাগে। উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মামুন মারা যান।

এরআগে ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে যুবদল কর্মী মামুন  স্ত্রী ও দুই সন্তানকে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে গাড়িতে তুলে দিয়ে তাঁদের থেকে বিদায় নেন। বিদায়ের সময় ছোট্ট দুই সন্তানের কপালে চুমু খেয়েছিলেন। নিজেও কপাল বাড়িয়ে নিয়েছিলেন সন্তানের চুমু। এর কিছুক্ষণ পরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মামুন মারা যান।

আজ বুধবার (১১ জুন) দুপুরে দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বিলাপ করছিলেন মামুনের স্ত্রী ইমা আক্তার।  বারবার বলছিলেন, ‘এই বিদায় যে শেষবিদায় হইব তা জানলে তো আমি তাঁর হাত ছাড়ি না খোদা। আমি তো তাঁরে চোখের আড়াল করতাম না। উনি তো খুনের রাজনীতি করতেন না। কোন পাপের শাস্তি পাইলাম আমরা। কোন কারণে আমার মাসুম বাচ্চাদের এতিম কইরা দিল।’ এ সময় তিনি তাঁর স্বামীর হত্যার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক জায়েদুল ইসলাম ওরফে বাবুকে দায়ী করেন।

মামুন ভূঁইয়ার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা মাঝিনা এলাকায়। এলাকার প্রয়াত আবদুল মান্নানের ৯ সন্তানের মধ্যে মামুন ষষ্ঠ। খুব বেশি পড়াশোনা করেননি। বাড়ির পাশেই মুদিদোকানের ব্যবসা করতেন। পাশাপাশি এলাকায় গ্যাসের সিলিন্ডার সরবরাহ করতেন।

আজ বুধবার সকালে মাঝিপাড়া এলাকায় গিয়ে অন্তত ২০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, মামুনদের পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতি করে। তাঁর বড় ভাই বাদল ভূঁইয়া ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। বিএনপির রাজনীতি করায় ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন সময় তাঁদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ৫ আগস্টের পর বাদল ভূঁইয়ার সুবাদে যুবদলের সভা-সমাবেশে যেতেন মামুন।

আজ দুপুরেও মাঝিপাড়ার সড়কে রক্তের কালচে দাগ দেখা গেছে। সেই সড়ক থেকে ৫০০ গজের মধ্যে মামুনের সিলিন্ডারের দোকান। আজ বেলা দেড়টায় ময়নাতদন্ত শেষে মামুনের লাশ মাঝিনা এলাকায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে আগে থেকেই বিএনপি, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছিলেন। সকাল থেকেই বাড়ির ভেতর থেকে আহাজারির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। দুপুরে লাশবাহী গাড়ি বাড়ির সামনে পৌঁছাতেই বাড়িতে জড়ো হওয়া নারী-পুরুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন।

স্বজনদের ভিড়ে আলাদা করে দেখা যায় তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে। দুই বছরের ছোট্ট ওয়াজিহা মানুষের এমন আহাজারি দেখে আতঙ্কিত। সাত বছরের ফাতিমা যেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। বাবার খাটিয়ার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে কেবল এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। দুই হাঁটু মাটিতে ঠেকিয়ে বুক চাপড়াচ্ছিলেন মামুনের স্ত্রী ইমা।   গগনবিদারী চিৎকার করে বারবার প্রশ্ন ছুড়ছেন, ‘কোন অপরাধে’ তাঁর সন্তানরা এতিম হলো। তাঁর স্বামী কেন ‘খুনের রাজনীতির বলি’ হলেন।

নিহত মামুনের ভাতিজা মো. ইব্রাহিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মামুন কাকা এক বাড়িতে সিলিন্ডার দিয়ে খালি সিলিন্ডার নিয়ে ফিরতেছিল। রাস্তায় তারে পাইয়া গুলি করে মেরে ফেলছে। আওয়ামী লীগের লোকজনরে পুনর্বাসনে বাধা দেওয়ায় আগে থেকেই বাদল কাকা, মামুন কাকার সঙ্গে জায়েদুল আর তাঁর চাচা মাহবুবুর রহমানের বিরোধ ছিল।’

মাঝিপাড়া এলাকার অন্তত সাতজন বাসিন্দা বলেন, ৫ আগস্টের পর জায়েদুল এলাকায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমানের ভাতিজা পরিচয়ে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রায়ই মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেন। কখনো কখনো মহড়ার সময় দেশি অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র দেখাতেন।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ভাই বাদল ভূঁইয়া গতকাল রাতে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় জায়েদুল, সাব্বির হোসেনসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামুনকে একা পেয়ে লোকজন নিয়ে ঘেরাও করে জায়েদুল নিজ হাতে তাঁকে গুলি করেছেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।

তবে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত জায়েদুল অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি ছাত্রলীগের খোকাকে লোকজন ধরছিল। সেখানে গোলাগুলি হইছে। কিন্তু আমি সেখানে ছিলাম না। আমি বাসায় ছিলাম।’

আ. দৈ. / কাশেম
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠক রাজনৈতিক সংকট কাটবে: ইসলামী আন্দোলন
ইসরায়েলের হামলার জবাবে পাল্টা শতাধিক ব্যালিস্টিক মিসাইলে ইরানের
লন্ডনে ৪দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফিরলেন ড.ইউনূস
নগর পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের সম্পৃক্ত করতে হবে : ডিএনসিসি প্রশাসক
জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আনায় `গণতন্ত্রের জন্য সুসংবাদ: ফখরুল
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

আগতাড়াইল মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উপহার সামগ্রী বিতরণ
নেপাল যাচ্ছেন সাংবাদিক আজাদ ও আবদুর রহমান
ডিএনসিসির উত্তরায় দিয়াবাড়ি কোরবানির পশুর হাটের বর্জ্য এখনো পড়ে রয়েছে
বিমান বিধ্বস্তে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন এক যুবক
গাছের নিচে উদোম গায়ে অচেতন হয়ে পড়েছিলেন অসুস্থ সমু চৌধুরী
সারাদেশ- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝