বিগত বছরের তুলনায় এ বছর আসন্ন কোরবানির বর্জ্যের পাশাপাশি কোরবানি পশুর অস্থায়ী হাটের বর্জ্য দ্রুত অপসারণ অনেকটা চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অনুমোদিত কোরবানি পশুর অস্থায়ী হাটের বাইরেও স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন ছোট ছোট কোরবানি পশুর হাট জমিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি প্রতিবছরই নির্ধারিত সময়েরই মধ্যেই দ্রুত কোরবানির বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণের সুনাম রয়েছে। কারণ ঢাকা উত্তর সিটিতে ‘টপ টু বটম’ কর্মকর্তা কর্মচারীরা চেইন অব কমান্ড অনুসরণ করে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন বলেই তাদের এই সুনামটা আছে।
কিন্তু, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে প্রতি বছরই কোরবানির পশুর হাটের এবং কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণে ব্যর্থতার নজির রয়েছে। কোরবানির ঈদের ৪/৫ দিন পরেও কোরবানির হাটের এবং কোরবানির বর্জ্য পুরান ঢাকায় গলিপথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকার নজির আছে। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে এবার আরো ভয়ানক পরিস্থিতি হবার আশঙ্খা রয়েছে। কারণ বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে চলমান অসহযোগ আন্দোলনে গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের ৬৫টি তালা ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে প্রশাসক, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাসহ ‘টপ টু বটম’ কর্মকর্তা এবং কর্মচারী নাগরিক সেবা প্রদান থেকে বিরত রয়েছেন। তবে কবে নাগাদ নগর ভবনের তালা খোলা হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথ কান্ডেই ঢাকা দক্ষিণ সিটির নাগরিক সেবা এবং কোরবানি হাটের বর্জ্য ও কোরবানি পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আজ বুধবার (৪ জুন) পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার পক্ষ থেকে আসন্ন কোরবানির হাট এবং পশু কোরবানির পর তৈরি প্রায় ৪০ হাজর টন বর্জ্য কি ভাবে দ্রুত অপসারণ করবেন, এসব বিষয়ে সঠিক কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
শুধু তাইনয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে প্রতি বছরই কোরবানির হাটের এবং কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণে ব্যর্থতার নজির রয়েছে। কোরবানির ঈদের ৪/৫ দিন পরেও কোরবানির হাটের এবং কোরবানির বর্জ্য পুরান ঢাকায় গলিপথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতো। তখন মেয়র এবং প্রশাসন সবাই সক্রিয় থাকার পরও এই চিত্র গণমাধ্যেমে প্রকাশিত হতো। তবে এবার মেয়র পদে ইশকার হোসেন এবং ডিএসসিসির বেতন ভুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের একটা অংশ সব ধরনের সেবা প্রদানে বাধা দেওয়ায়, পরিস্তিতি মারাত্নক আকার ধারণ করেছে। তার পরও হয়তোবা বর্তমান প্রশাসক চেষ্টা করবেন কোরবানির বর্জ্য অপসারণের।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমান ‘আজকের দৈনিককে’ জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল ১০ টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ইদুল আজহার প্রধান জামাত এবং ডিএসসিসির কোরনির হাট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলবেন প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া। ওই সময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
ঢাকা উত্তর সিটিতে ব্যাপক প্রস্তুতি:
আসন্ন কোরবানি ঈদে দিনের বর্জ্য দিনের মধ্যেই অপসারণ করে শহর পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে ব্যাপক প্রস্তুতির রয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ এবং প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থা পনা কর্মকর্তা কমডোর এ বি এম সামসুল আলম। গতকাল বুধবার (৪ জুন) আমিন বাজার ল্যান্ডফিল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ এ তথ্য জানান। কোরবানির বর্জ্য অপসারণের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রশাসক আরো জানান, এবার ঈদে প্রায় ২০ হাজার টন বর্জ্য তৈরী হবে। এ বর্জ্য দ্রুততার সাথে অপসারণ করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ১০ হাজার কর্মী ৩ দিনব্যাপী নিয়োজিত থাকবে। এবার ঈদে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ২২৪ টি ডাম্প ট্রাক ৩৮১ টি পিকাপ ২৪ টি পেলোডার সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে। বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য সাড়ে ১২ লাখ পলিব্যাগ, আড়াই হাজার বস্তা ব্লিচিং চার হাজার ক্যান স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আমিন বাজার ল্যান্ডফিলে কোরবানির বর্জ্য ডাম্পিং এর জন্য আলাদা প্লাটফর্ম রেডি রাখা হয়েছে এবং পরিবেশসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২ টি পরিখা খনন করা হয়েছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম মনিটরিং এর জন্য ডিএনসিসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রথমে কোরবানির বর্জ্য সংগ্রহ করে এসটিএসে আনা হবে এবং এসটিএস থেকে থেকে বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশনে (আমিনবাজার ল্যান্ডফিল) ডাম্প করা হবে। পরিদর্শনে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এ বি এম সামসুল আলম।
আ. দৈ. /কাশেম