পাকিস্তানে ১৭ বছর বয়সী সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার সানা ইউসুফকে হত্যার ২০ ঘণ্টার মধ্যে উমর হায়াত নামের ২২ বছর বয়সী এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি সানাকে কথা স্বীকার করেছেন বলে ইসলামাবাদের পুলিশ জানিয়েছে।
বুধবার (৪ জুন) এক প্রতিবেদনে বিবিসির জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে, 'বন্ধুত্বের প্রস্তাব' প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বলে গত সোমবার ইসলামাবাদে নিজ বাড়িতে সানাকে হত্যা করেন উমর হায়াত। অভিযোগ, উমর বারবার সানার সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন এবং ব্যর্থও হয়েছিলেন।
টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামে লাখ লাখ ফলোয়ার থাকা ইউসুফকে বাড়িতে ঢুকে দুটি গুলি চালায় হত্যাকারী। এরপর তার ফোন চুরি করে পালিয়ে যায়। পরমুহূর্তেই পাকিস্তানে নারী হত্যার সর্বশেষ 'হাই-প্রোফাইল' উদাহরণ হয়ে ওঠে ঘটনাটি।
সানার বাবা সৈয়দ ইউসুফ হাসান বিবিসিকে বলেন, সে তার একমাত্র মেয়ে ছিল। সে খুব সাহসী ছিল। তার পরিবার এখন কবরস্থানে জড়ো হয়েছে, যেখানে সানাকে দাফন করা হয়েছে।
ইসলামাবাদের পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, 'নৃশংস' হত্যাকাণ্ডটি সারা দেশে 'উদ্বেগের ঢেউ' সৃষ্টি করেছে। খুনিকে খুঁজে বের করার জন্য কর্তৃপক্ষের 'প্রচণ্ড' চাপ ছিল।
পুলিশ রাজধানী এবং পাঞ্জাব প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় এবং ১১৩টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ স্ক্যান করে। এরপর সন্দেহভাজন খুনের অস্ত্র এবং সানা ইউসুফের ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।
আল জাজিরা জানায়, মৃত্যুর পর সানার টিকটক অ্যাকাউন্ট রাতারাতি লাখ লাখ ফলোয়ার বেড়ে যায়। এখন তার সংখ্যা দশ লাখেরও বেশি। গত সপ্তাহে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা শেষ ভিডিওতে তাকে বেলুন দিয়ে ঘেরা স্থানে নিজের জন্মদিনের জন্য একটি কেক কাটতে দেখা গেছে।
সন্দেহভাজন সম্পর্কে কী জানা গেল
গতকাল মঙ্গলবার ইসলামাবাদের পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) সৈয়দ আলী নাসির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হত্যাকাণ্ডের ২০ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ শহর থেকে প্রায় ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ফয়সালাবাদ শহর থেকে সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযুক্ত ২২ বছর বয়সী একজন বেকার যুবক। তিননি বারবার ভুক্তভোগীর (সানা) সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এতে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি খুনটি করেন।
ইসলামাবাদের আইজিপি আরও বলেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তি প্রমাণ নষ্ট করার জন্য ইউসুফের ফোনটি তার সাথে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছ থেকে তার ফোন এবং হত্যার অস্ত্রটিও জব্দ করেছে।
তদন্তের সঙ্গে সম্পর্কিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, সন্দেহভাজন এবং সানা এক বছর ধরে একে অপরকে চেনেন। সন্দেহভাজন ব্যক্তি ২৮ থেকে ২৯ মে ইউসুফের জন্মদিনে শুভকামনা জানাতে ইসলামাবাদে গিয়েছিলেন। কিন্তু অজানা কারণে দু'জনের দেখা হয়নি।
সন্দেহভাজন এবং সানা এরপর ফোনে কথা বলে এবং ২ জুন দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সন্দেহভাজন যখন ইউসুফের বাড়িতে পৌঁছায়, তখনো সে বাইরে আসেনি। তবে সন্দেহভাজন ভেতরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয় এবং তর্ক-বিতর্ক শুরু করে। ঘটনাটি এক পর্যায়ে হত্যার দিকে গড়ায়।