বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বারবার বিদেশ নেওয়ার প্রসঙ্গ আসলেও সরকারের বাঁধার মুখে বিদেশ নিতে পারেনি। বহু বার আওয়ামী সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার পবিরারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও তাতে সরকারের সাড়া মেলেনি। দেখিয়েছে নানা আইনী জটিলতা। দিয়েছে নানা ভাবে বাঁধা। তবে এখন সেই বাঁধা নেই। এখন বাঁধা তার শারীরিক অবস্থা। এই মূহুর্তে দীর্ঘ সময় ধরে ভ্রমণ কবার মত শারীরিক অবস্থা তাঁর নেই। তাই চাইলেও এই মুহূর্তে তাঁকে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের একজন সদস্য জানান, বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে এখনো চুড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। জানা গেছে- বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার সকল প্রস্ততি সম্মন্ন করা হয়েছে। প্রস্তুতি সম্মন্ন হলেও আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। ভ্রমণের মত শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তখনই তাকে বিদেশ নিয়ে যাওয়া হবে। চিকিৎসার জন্য দুই হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগও করে রাখা হয়েছে। একটি যুক্তরাষ্ট্রে, আরেকটি যুক্তরাজ্যে। কিভাবে নেওয়া হবে তাও ঠিক করে রাখা হয়েছে।
সবশেষ গত ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন। হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর গত ২১ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন বাসায় ফিরলেও ‘খালেদা জিয়া খুব সুস্থ নন’। ২০ সেপ্টেম্বরও তাঁর শরীরে জ¦র ছিলো। তাঁর শারীরিক অবস্থা ভ্রমণের উপযুক্ত নয়। সেজন্য বিদেশ যাত্রায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা দুটি হাসপাতাল ঠিক করেছি। একটি যুক্তরাষ্ট্রে এবং আরেকটি যুক্তরাজ্যে। দুই হাসপাতালের কনসালট্যান্টদের সঙ্গে আলাপ চূড়ান্ত হয়েছে। কীভাবে বিদেশে নেওয়া হবে, তাও ঠিক করা হয়েছে। আইনগত যে জটিলতা আছে, সেটা নিয়ে বর্তমান সরকারের সঙ্গেও কথা বলেছি।
এখন শুধু উনার শারীরিক সুস্থতার ওপর নির্ভর করবে নিয়ে যাওয়া। যখন তিনি উড়োজাহাজে থাকেন, বিশেষ করে টেকঅফ ও ল্যান্ডিংয়ের সময় তার হার্টের সমস্যা, লিভারের সমস্যা এবং কিডনির জটিলতাগুলো আছে, সবকিছু মিলিয়ে চিকিৎসকরা এখনো মনে করছেন যে ১২-১৩ ঘণ্টা জার্নি তিনি করতে পারবেন কিনা। সেজন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। শারীরিক অবস্থার আরেকটু উন্নতি হলে, ভ্রমণ করার মত পরিস্থিতি হলে তখন তাকে নিয়ে যাওয়া হবে।
ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানো পর ৬ আগস্ট রাজনৈকিক মামলায় মুকি পান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যদিও মুক্তিকালীন তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীগ ৮ আগস্ট দিবাগত রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তির পর ৯ আগস্ট তিনি হাসপাতাল থেকে নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত বিএনপির সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন। প্রায় সাড়ে ৬ বছর পর দেশবাসী তার মুখের কথা শুনতে পান। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়া বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ায় আর কোনো বাঁধা থাকে না।
বন্দি অবস্থায় তার শরীরে স্লো পয়জন প্রয়োগেরও অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান অভিযোগ করেছেন, কারাবন্ধী অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার শরীরে স্লো পয়জন প্রয়োগ করা হয়।
উল্লেখ্য, দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি থাকার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা ছয় মাস স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে ছয় মাস পরপর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছিল। হঠাৎ হঠাৎ করে শারীরিক অবস্থার অবনিত হওয়ার বহুবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
আ. দৈ. /কাশেম/ আরিফ